দোকানের মত কালোজাম হুবহু বাড়িতে বানিয়ে ফেলুন ১০ টাকার গুঁড়ো দুধের প্যাকেট দিয়ে। শিরোনাম শুনে ভাবছেন হয়তো খেতে কেমন হবে? গ্যারান্টি নিচ্ছি আমি, কাউকে না বলে এটা খাওয়ালে সে ধরতেও পারবেন না যে, এটা ছানা, ক্ষীর ছাড়া শুধু গুঁড়ো দুধ দিয়ে বানানো। কথা না বাড়িয়ে চলুন এর রেসিপি দেখে নেওয়া যাক।
কালোজাম মিষ্টি সাধারণত ছানা, ক্ষীর ও চিনি একসাথে মিশিয়ে ময়দার গোলায় ভরে ভাজা হয়। কিন্তু আমি যেহেতু গুঁড়ো দুধ দিয়ে বানিয়েছি তাই পরপর তিনটে সহজ স্টেপে কালোজাম বানাবো। আমি যে পরিমান উপকরণ নিয়েছি তাতে ৭ থেকে ৮ পিস কালোজাম তৈরি হয়েছে।
উপকরণঃ
- গুঁড়ো দুধ বা পাউডার মিল্ক ১ কাপ (১০ টাকার দুটো প্যাকেট)
- চিনি ১০০ গ্রাম
- ময়দা আড়াই চা চামচ (২.১/২)
- সুজি ১ চা চামচ
- ঘি ১ চা চামচ
- বেকিং পাউডার এক চিমটে
- দুধ ৫ থেকে ৬ চামচ
- গোটা ছোট এলাচ ৩ পিস
- তেল ২ কাপ
- রেড ফুট কালার ২ ড্রপ (Optional)
- রুপোর তবক (Optional)
কালোজাম ঘরে বানানোর পদ্ধতিঃ
প্রথম ধাপঃ
একটি বাটি নিয়ে সবার প্রথমে এক কাপ গুঁড়ো দুধ তাতে ঢালতে হবে। তারপর তাতে এক এক করে ময়দা আড়াই চা চামচ, সুজি এক চা চামচ, বেকিং পাউডার এক চিমটে, ঘি এক চা চামচ দিয়ে ভালো করে মেশাতে হবে। এরপর এক চামচ করে করে দুধ মিশিয়ে সবকটা উপকরণ মিশিয়ে ভালো করে মাখতে হবে। খুব শক্তও না আবার খুব নরমও না এরকম একটা মণ্ড বানাতে হবে, যার টেক্সচার সফট হয়। ঠিক রুটির জন্য যেমন আটা ময়দা মাখা হয় সেরকম।
মণ্ড বানিয়ে ভালো করে ময়াম দিতে হবে। এতে কালোজাম খেতে খুব নরম হবে। ময়াম দেওয়া হয়ে গেলে ২ ড্রপ রেড ফুট কালার এতে মিশিয়ে ভালো করে মেখে নিতে হবে। সাধারণত ঘরে রেড ফুড কালার থাকে না। তাই এটা না থাকলে কোন সমস্যা নেই। শুধু কালোজামের ভেতরে যে লাল রঙটা থাকে সেটা মিস হবে। বাকি স্বাদের কোন তফাৎ নেই।
দ্বিতীয় ধাপঃ
এবার বানানো মণ্ড থেকে একটু একটু করে লেচি নিয়ে ছোট ছোট বলের আকার দিতে হবে। খুব বেশি বড় করতে হবে না। কারণ চিনির সিরায় ডোবানোর পর এমনিতেই এটা ফুলে বড় আকার ধারণ করবে। আকার দেওয়ার পর কড়াইয়ে তেল গরম করে একটা একটা করে বল দিয়ে ততখন ভাজতে হবে যতক্ষণ না কালচে রঙ আসছে। গ্যাসের আঁচ কমিয়ে এগুলো ভাজতে হবে। প্রায় ৬ থেকে ৭ মিনিট মত সময় লাগবে।
তৃতীয় ধাপঃ
একটি কড়াইয়ে ১০০ গ্রাম চিনি দিতে হবে। তাতে ৩ থেকে ৪ কাপ জল দিয়ে ২ মিনিট ভালো করে ফোটাতে হবে। জল ফুটতে শুরু করলে তাতে তিনটে এলাচ হালকা ফাটিয়ে দিয়ে দিতে হবে। চিনি ফুটে হালকা চিটচিটে হয়ে এলে ভেজে নেওয়া বল গুলো এক এক করে দিয়ে দিতে হবে। বল দিয়ে এক মিনিট ফোটানোর পর গ্যাস বন্ধ করতে হবে। এবার এটা ঢেকে এক ঘণ্টা রাখতে হবে। এক ঘণ্টা পর ঢাকনা সরালে দেখবেন কি সুন্দর বড় বড় কালোজাম তৈরি হয়েছে। খাওয়ার জন্য রেডি ঘরে বানানো কালোজাম। খেয়ে বোঝাই যাবে না যে, ঘরে বানানো! তাও আবার গুঁড়ো দুধ দিয়ে।
দোকানের মত করে সাজাতে চাইলে একটি প্লেটে সামান্য গুঁড়ো দুধ নিয়ে নিন। আর একটি প্লেটে কালোজাম রাখুন। গুঁড়ো দুধ সামান্য পরিমান নিয়ে কালোজামের উপর থেকে ছড়িয়ে দিন। তারপর রুপোর তবক নিয়ে তা মিষ্টির উপর থেকে লাগিয়ে নিন অল্প অল্প করে। হবহু দোকানের মত দেখতে হবে।
বিশেষ কথাঃ
- ঘরে কালোজাম বানাতে সব মিলিয়ে মোট সময় লেগেছে ২০ থেকে ২৫ মিনিট। আর সিরায় ভিজিয়ে রাখার জন্য আরও এক ঘণ্টা।
- এটা বানিয়ে ৩ থেকে ৪ দিন রেখে খাওয়া যায়। তবে অবশ্যই ফ্রিজে রাখতে হবে টিফিন বক্সের মধ্যে।
- ঘরে গুঁড়ো দুধ আর বাকি সামান্য উপকরণ গুলো, যা সব ঘরেই থাকে মোটামুটি, তা থাকলে যখন খুশি এটা বানানো যেতে পারে।
- ছানা ও ক্ষীর ছাড়া বানানো বলে এতে ফ্যাট অনেক কম থাকে। আর চিনির সিরার মিষ্টি ভাব নিজের মত কম বেশি করে বানাতে পারেন। কম মিষ্টি খেলে চিনি কম দিলেই হবে। বেশি খেলে বেশি।
বিশেষ টিপসঃ
- রেড ফুড কালার না থাকলে কোন সমস্যা নেই। বিট নিয়ে তা বেটে তার থেকে সামান্য পরিমান রস বের করে নিলেই হবে। ফুড কালারের বদলে এটা একটু একটু করে দিয়ে লাল রঙ আনা যায়। ফুড কালারের চেয়ে বরং এটি বেশি ভালো শরীরের জন্য।
- মিষ্টি ভাজার সময় প্রথম থেকেই গ্যাসের আঁচ একদম কম রাখবেন। না হলে মিষ্টি বাইরে থেকে দেখেতে কালোজামের মত হলেও ভেতর থেকে ভাজা হবে না।
- গরম গরম কালোজাম খেতে চাইলে মাইক্রোওয়েভে দিয়ে সহজেই গরম করে খেতে পারবেন।
- এরকম ঘরে বানানো আরেকটি মিষ্টি আপনারা ট্রাই করতে পারেন নাম ‘সুজির কাঁচাগোল্লা’।