ছোটবেলা থেকে এই কথা শুনে আসছি, ‘একটা ডালিম মানে একশো রোগের যম’। এই প্রবাদটি এমনি এমনি তৈরি হয় নি। অর্থাৎ ডালিম এত ঔষধি গুণে পরিপূর্ণ যে এর সেবন প্রতিটি রোগ দূর করতে কাজ করে। ডালিম অত্যন্ত পুষ্টিকর একটি ফল। যাই হোক, এটা বলা হয় যে প্রত্যেক মানুষের সারাদিনে অন্তত একটি করে ফল খাওয়া উচিত এবং যদি ডালিম খাওয়ার কথা হয়, তবে তা না ভেবেই করা উচিত। কেন? কারণ ডালিম খাওয়া ও এর রস পানের উপকারিতা এত পরিমান রয়েছে যা বলে শেষ হবে না।
ডালিম খাওয়ার অনেক উপকারিতা রয়েছে। ডালিম ফাইবার, ভিটামিন কে, সি এবং বি, আয়রন, পটাসিয়াম, জিঙ্ক এবং ওমেগা -৬ ফ্যাটি অ্যাসিড এবং আরও অনেক কিছুতে সমৃদ্ধ। যখনই কোনও ব্যক্তি অসুস্থ হয়, তাকে প্রথমে ডালিম খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। ডালিম খাওয়া শুধু আমাদের রোগ-ব্যাধি দূর করে না, এটি স্বাস্থ্যের জন্য একটি ওষুধ হিসেবেও কাজ করে।
ক. ডালিম খাওয়ার উপকারিতা কি?
ডালিম খাওয়ার অনেক উপকারিতা রয়েছে। কিন্তু কিছু প্রধান বিষয় আছে যার জন্য রোজ একটা করে ডালিম খাওয়া উচিত। তবে যাদের সুগার আছে তারা ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে এটা খাবেন।
১. রক্তশূন্যতাঃ
যাদের রক্তস্বল্পতা, রক্তশূন্যতা, রক্তশূন্যতার মতো রোগ আছে তাদের জন্য ডালিম খাওয়া খুবই জরুরি। এর থেকে শরীরে আয়রন পাওয়া যায়, যা রক্তের অভাব দূর করে। তাই রোজ একটা ডালিম খাওয়া উচিত।
২. হৃদরোগঃ
ডালিমে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার পাওয়া যায়, সেই সঙ্গে এটি শরীরে জলের অভাব পূরণ করতেও কাজ করে। এছাড়া এটি রক্ত পরিষ্কার করে রক্ত প্রবাহকে মসৃণ রাখতেও সাহায্য করে। তাই হৃদরোগেও ডালিম খাওয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা।
৩. পুরুষত্বঃ
যেসব পুরুষদের শারীরিক দুর্বলতা, ক্লান্তি ইত্যাদি সমস্যা আছে তাদের জন্য ডালিম খাওয়া খুবই উপকারী। এটি একটি শক্তি বর্ধক, যা পুরুষত্ব বাড়াতে সাহায্য করে। একজন পুরুষের প্রতিদিন একটি করে ডালিম খাওয়া উচিত।একটি গবেষণা অনুসারে, যদি প্রতিদিন ডালিম খাওয়া হয় বা এর জুস খাওয়া হয় তবে এটি শুক্রাণুর সংখ্যা বৃদ্ধির কাজ করে।
৪. গর্ভবতী মহিলাদের জন্যঃ
গর্ভবতী মহিলাদের জন্য ডালিম খাওয়া খুবই উপকারী। এর কারণে রক্তের কোনো ঘাটতি হয় না এবং একই সঙ্গে শরীরে জলের পরিমাণও ঠিক রাখে। ডালিমে পাওয়া মিনারেল, ভিটামিন, ফ্লুরিক অ্যাসিড গর্ভবতী মহিলাদের গর্ভে বেড়ে ওঠা শিশুদের জন্য খুবই উপকারী বলে মনে করা হয়। কিন্তু এটা মনে রাখা উচিত যে গর্ভবতী মহিলাদের বেশি ডালিম খাওয়া উচিত নয় এবং এটি সীমিত পরিমাণে খাওয়া উচিত। অন্যথায় এটি গর্ভপাতও হতে পারে। তাই তারা ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী খাবেন।
৫. রিকেট রোগঃ
রিকেট বা শুষ্ক রোগেও ডালিমের ব্যবহার উপকারী। ডালিমের রস ২০-২৫ গ্রাম মত কিছুটা দুধের সাথে মিশিয়ে নিন খান। প্রতিদিন এটি খেলে শিশুদের রিকেট নিরাময় হয়। তাছাড়া বড়রাও খেতে পারেন।
৬. কোলেস্টেরলঃ
ডালিম খেলে কোলেস্টেরল বাড়ে না। যার কারণে হৃদরোগের ঝুঁকি অনেকাংশে কমে যায়। তাই শরীরের খেয়াল রাখলে রোজ সম্ভব না হলেও সপ্তাহে এক থেকে দুইবার অন্তত এটা খান।
৭. মস্তিষ্ককে তীক্ষ্ণ করেঃ
ডালিম সেবন আলঝেইমার রোগ কমাতে খুবই সহায়ক। মস্তিষ্ককে তীক্ষ্ণ করে এটি। তাই যাদের ভুলে যাওয়ার সমস্যা আছে তাদের এটা খাওয়া উচিত। বাচ্চাদের মস্তিষ্ককে তীক্ষ্ণ করতে এর জুড়ি মেলা ভার।
খ. ডালিমের রসেরও অনেক উপকারিতা আছেঃ
১. ক্যান্সারঃ
ডালিমের মধ্যে রয়েছে ফ্ল্যাভোনয়েড নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। ফ্ল্যাভোনয়েড ক্যান্সার বিরোধী। যাদের প্রোস্টেট ও স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি রয়েছে, তারা অবশ্যই ডালিমের রস পান করবেন। যাদের ক্যান্সার আছে তাদের জন্যও ডালিমের রস উপকারী। এটি খাওয়ার ফলে PSA এর মাত্রা কমে যায় এবং ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অনেক সাহায্য করে।
২. রক্তস্বল্পতা পূরণ করেঃ
প্রতিদিন এক গ্লাস ডালিমের রস পান করলে রক্তস্বল্পতা দূর হয়। তাই এই সমস্যা থাকলে ডালিমের রস পান করুন রোজ এক গ্লাস।
৩. ওজন কমাতে সাহায্য করেঃ
প্রতিদিন ১ গ্লাস ডালিমের রস পান করা আপনার ক্রমবর্ধমান ওজন নিয়ন্ত্রণ ও কমাতে অনেক সাহায্য করে। ডালিমের রস শরীরের ইনসুলিনের পরিমাণকে প্রভাবিত না করে একজন ব্যক্তির ওজন কমাতে সাহায্য করে। খালি পেটে ডালিমের রস পান করলে ফ্যাটি কোষের গঠন কমতে শুরু করে এবং ধীরে ধীরে ওজন কমতে থাকে।
৪. বাতের ব্যাথা কমেঃ
ডালিমের রস খেলে বাতের ব্যথা উপশম হয়। শুধু তাই নয়, এমনকি যদি আপনার মুখ সংক্রান্ত কোনো রোগ থাকে, তাহলেও এর রস খাওয়া খুবই উপকারী এবং মুখের রোগের ঝুঁকি কমায়।
গ. কখন ডালিম বা ডালিমের রস খাওয়া উচিত?
খালি পেটে ডালিমের রস বা ডালিম খাওয়াই উত্তম বলে মনে করা হয়। মেয়েদের পিরিয়ডের সময় ডালিম খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য সবচেয়ে উপকারী। ডালিমে পর্যাপ্ত পরিমাণে চিনি এবং ভিটামিন পাওয়া যায়, যা একজনকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। ডালিমের পুষ্টিকর উপাদান আপনার দিনকে স্বাস্থ্যকর শুরু করে। অন্যদিকে, চিনি আপনাকে পর্যাপ্ত শক্তি দিতে কাজ করে। যাতে আপনি দুপুরের খাবার পর্যন্ত সম্পূর্ণ এনার্জির সাথে থাকতে পারেন।
এটি তাত্ক্ষণিক শক্তি দিতেও কাজ করে। এমন পরিস্থিতিতে, যখন সকালে ঘুম থেকে উঠে নিজেকে ক্লান্ত বোধ করেন, তখন ডালিমের রস খাওয়া আপনাকে সতেজতা দিতে কাজ করে। প্রতিদিন ডালিমের রস খেলে আপনার মস্তিষ্কে একটি তরল পদার্থ নিঃসৃত হয়, যা আপনার মেজাজ ভালো করতে কাজ করে। যাকে আমরা সুখী হরমোন বলি ফলে মস্তিষ্ক ভালো কাজ করে এবং আপনার মেজাজও ভালো থাকে।
অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ও জ্ঞান অর্জন করি লেখা,তবে আরো বয়জ্ঞানিক ব্যাখ্যা দিলে আরো ভালো হয়।
ধন্যবাদ। লেখার সময় সবার কথা মাথায় রেস্খে লিখতে হয়, যাতে সহজেই সবাই পড়তে পারে। আপনার বিষয়টি মাথায় থাকবে। এভাবেই ফিডব্যাক দিতে থাকবেন। 🙂