skip to content
CurryNaari
Welcome to Nandini’s world of cooking & more...

চাল কুমড়ার উপকারিতা সম্পর্কে জেনে রাখুন

চাল কুমড়া

বৈজ্ঞানিকভাবে বেনিনকাসা হিসপিডা এবং সংস্কৃতে কুষ্মান্ড নামে পরিচিত চাল কুমড়া এক কথায় পুষ্টিগুণের আধার। এটি সাদা কুমড়া বা জালি কুমড়া নামেও পরিচিত। এতে আছে প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, ভিটামিন সি, মিনারেল, ফাইবার, ফ্যাট, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম, সোডিয়াম, কোলেস্টেরল, আয়রন, জিঙ্ক, এবং ফসফরাস।

জনপ্রিয় এই কুমড়ার ঔষধি গুণ দেহের পুষ্টির অভাব দূর করে। পাশাপাশি এর শাক ও লতাপাতাও বিভিন্ন রোগ দমনে সমানভাবে উপকারী। আজকে আলোচনা করবো চাল কুমড়ার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত।

১. পেটের সমস্যা দূর করেঃ

চাল কুমড়া পেট ও অন্ত্রের যাবতীয় সমস্যায় দারুণ কাজে দেয়। এর অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল এজেন্ট পেট ও অন্ত্রের ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া দূর করতে সাহায্য করে।

অতিরিক্ত মশলা দেয়া খাবার ও দীর্ঘদিন অনাহারে থাকলে পাকস্থলীতে অ্যাসিড উৎপন্ন হয়। তা থেকে গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল ইনফেকশন বা আলসার হয়ে যায়। চাল কুমড়ার তরকারি আলসারের জন্য দায়ী অ্যাসিড দূর করতে সাহায্য করে।

পেট ফাঁপা, কোষ্ঠকাঠিন্য, অনিয়মিত প্রস্রাবের জন্য গরম দুধে ৪-৫ চা চামচ চাল কুমড়ার রস খেলে উপকার মেলে। চাল কুমড়ার রস পেটে ১০-১৫ মিনিট মালিশ করলেও পেট ফাঁপা ও প্রস্রাবের সমস্যা একসাথে দূর হয়।
এছাড়াও পেটের যেকোন জায়গায় ব্যথা হলে চাল কুমড়ার পাউডার কাজে দেয়। চাল কুমড়ার শাঁসকে প্রথমে ভালো করে শুকিয়ে নিতে হবে৷ তারপর সেটিকে পুড়িয়ে গুঁড়া করতে হবে। গরম জলে আধা চা চামচ চাল কুমড়ার পাউডার গুলিয়ে খেলে ব্যথা কমবে।

অম্বল বা অজীর্ণ সারানোর জন্য ৩-৪ চা চামচ চাল কুমড়ার রসের সাথে ১ চা চামচ চিনি মিশিয়ে খেতে হবে। তবে চাইলে সামান্য জাফরান পিষে মেশানো যাবে স্বাদের জন্য৷

কৃমি নাশের জন্য চাল কুমড়ার বীজ দারুণ উপকারী। ২ গ্রাম বীজের শাঁস বের করে বেটে ১ গ্লাস জলে মিশিয়ে খেলে কৃমি দূর হবে।

২. মস্তিষ্কের রোগ ঠিক করেঃ

চাল কুমড়ার মোরব্বা মাথা ঘোরা, মাথা গরম হয়ে যাওয়া, ঘুমের সমস্যা, মৃগী, এবং উন্মাদনা দূর করে। মাথায় হালকা বোধ হলে, কিছু মনে রাখতে না পারার সমস্যা হলে ২-৩ গ্রাম চাল কুমড়ার বীজের শুকনো শাঁস চূর্ণ এবং সামান্য মধু একসাথে মিশিয়ে খেতে হবে। মানসিক রোগীদের ব্রেইনের নার্ভ ঠান্ডা রাখে বলে চাল কুমড়াকে এক কথায় ব্রেইন ফুড বলা হয়।

৩. হৃদরোগ সারায়ঃ

হৃদরোগ এবং হৃদযন্ত্রের বৃদ্ধিজনিত সমস্যা সমাধানে পাকা চাল কুমড়ার হালুয়া অনন্য। রোগীকে পাকা চাল কুমড়ার হালুয়া দিতে হবে, অবশ্যই সেটা হবে ছাগলের দুধ দিয়ে বানানো। গরুর দুধ দেয়া যাবে না, এতে সমস্যা আরো বাড়বে।

৪. যক্ষ্মার উপসর্গ সারায়ঃ

যক্ষ্মা রোগের উপসর্গ কাটানোর জন্য প্রতিদিন চাল কুমড়ার রস খেলে উপকার পাওয়া যাবে। বিশেষ করে কাশির সাথে রক্তপাত বন্ধ করার জন্য কুমড়ার রস একটি মহৌষধ। এর জন্য প্রতিদিন রস খেতে হবে, তাতে ব্লিডিং বন্ধ হবে। ৩-৪ চা চামচ রস সামান্য চিনি মিশিয়ে খেতে হবে, সাথে বাসক পাতার রস দিলে আরো ভালো।
এক গ্লাস দুধে উল্লেখিত পরিমাণ কুমড়ার রস ও চিনি মিশিয়েও খাওয়া যেতে পারে। যক্ষ্মা বাদে অন্য কোন কারণে মুখ দিয়ে রক্ত পড়লে কুমড়ার রস চিনি ও বাসক পাতার রস দিয়ে খেতে হবে। অর্শের রক্তপাত বন্ধ করার জন্যও এভাবে কুমড়ার রস খেতে হবে।

৫. জন্ডিস সারায়ঃ

তাজা চাল কুমড়ার তরকারি কম তেল-মশলায় তৈরি করে খেলে জন্ডিস দ্রুত সেরে যায়। অথবা চাল কুমড়ার টুকরা রোদে শুকিয়ে গুঁড়া করে বা মোরব্বা বানিয়ে খেলেও উপকার পাওয়া যাবে।
এনার্জি বাড়ায় চাল কুমড়া

চাল কুমড়া শরীরের এনার্জি বাড়াতে সাহায্য করে। পাশাপাশি এটি পুষ্টির অভাব পূরণ করে এবং পরিশ্রম করার ক্ষমতা বাড়ায়। অনেকক্ষণ কাজ করার পরে শরীরে দুর্বলতা আসলে চাল কুমড়া তা দূর করে।
দেহকে দিনভর চাঙ্গা রাখার জন্য চাল কুমড়ার লাড্ডু খেতে হবে। পাকা বীজের শাঁস বের করে প্রথমে ভালোমতো পিষতে হবে। এরপর পেষা শাঁস ঘিয়ে ভেজে চিনিতে গড়িয়ে লাড্ডু বানাতে হবে। প্রতিদিন এই লাড্ডু খেলে ক্লান্তি ভাব আর থাকবে না।

৬. ওজন ও মেদ কমাতে সাহায্য করেঃ

চাল কুমড়া কিন্তু বাড়তি ওজন ও মেদ কমাতে সাহায্য করে। হাই ক্যালরি যুক্ত খাবার খেলে ওজন তো বাড়েই, সাথে নানা প্রাণঘাতী রোগ হওয়ারও সম্ভাবনা থাকে। চাল কুমড়ার তরকারি হাই ক্যালরি খাবারের বিকল্প হিসেবে খাওয়া যায়। এতে করে রক্তনালিতে ব্লকেজ হয় না, বদহজম হয় না, এবং শরীর থাকে ফিট।

৭. ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখেঃ

চাল কুমড়ার মোরব্বা, হালুয়া, বা এর বীজের লাড্ডু খেলে ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে।

৮. ত্বক ও চুল সুন্দর করেঃ

নিয়মিত চাল কুমড়ার রস চুলে মাখলে চুল উজ্জ্বল কালো হয় এবং চকচকে লাগে। এছাড়াও এই রস মুখে মাখা যায়। এটি বয়সের ছাপ প্রতিরোধ করে এবং ত্বককে সুন্দর করে তোলে।

অন্যান্য রোগ প্রতিরোধ করেঃ

চাল কুমড়ার রস সামান্য চিনি ও জাফরানের সাথে খেলে ফুসফুস ভালো থাকে, পুষ্টির অভাব কমে, এবং আরো ছোট বড় নানা রোগের উপশম হয়। এই কুমড়ার বীজ থেকে তৈরি তেল পিত্তের রোগ সারায়। তবে চাল কুমড়ার তেল গুরুপাক এবং শরীরে শ্লেষ্মা তৈরি করে, তাই সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত।
কচি চাল কুমড়া রক্ত ও পিত্ত পরিষ্কার করে এবং কফ নিরসন করে। কিন্তু মাঝারি চাল কুমড়া বুকে কফ তৈরি ও বসিয়ে দেয়।

বড় পাকা কুমড়া হালকা খাবার সোডা বা লবণ দিয়ে সিদ্ধ করে খেলে হজমশক্তি দ্রুততর হয়, ক্ষুধা বাড়ে, মূত্রাশয় পরিষ্কার হয়, এবং শরীরের বিভিন্ন দোষ দূর হয়ে যায়।

খাবারে অরুচির একমাত্র চিকিৎসা হচ্ছে চাল কুমড়ার সাথে উচ্ছে ও সজনে ডাঁটা দিয়ে রান্না করা তরকারি। এটি চাল কুমড়ার শুক্তো নামে পরিচিত। এই শুক্তো খেলে মুখের রুচি তাড়াতাড়ি ফেরত আসবে।

Article Tags:
Article Categories:
Lifestyle

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *