গ্রীষ্মকাল পূর্ণ রূপ নেওয়ার সাথে সাথে, ফলের রাজা আম বাজারে এসে হাজির। ভারতে, গ্রীষ্মের ঋতুতে আমকে খাদ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসাবে বিবেচনা করা হয়। মিষ্টি গন্ধ এবং মনোরম স্বাদ আমাদের শৈশবের গ্রীষ্মের কথা মনে করিয়ে দেয়। ছোটবেলায় গ্রীষ্মের ছুটিতে দিদার বাড়িতে গেলে আমরা খুব উত্তেজিত বোধ করতাম। এটি এমন একটি সময় যা কেউ জীবনে কেউ ভুলতে পারে না। তখন আমাদের বাড়িতে আসা-যাওয়া উদযাপনের জন্য দিদা প্রচুর আম জলে ভিজিয়ে রাখতেন। শুধু তাই নয়, আম ঘরে এলে মাকে দেখেছি সেগুলোকে অন্তত আধা ঘণ্টা জলে ভিজিয়ে রাখতে। দিদা মা কেন এমন করতেন, আগে কখনো ভেবে দেখিনি। এখন বুঝি এর আসল গুরুত্ব।
আম খাওয়ার আগে জলে ভিজিয়ে রাখার ঐতিহ্য রয়েছে বহু শতাব্দী ধরে। আপনি এই কাজটি বিরক্তিকর বলে মনে করতে পারেন, তবে এর আশ্চর্যজনক সুবিধাও রয়েছে। যা সম্পর্কে আপনি হয়তো জানেন না। তাহলে আসুন জেনে নিই, কিছু বৈজ্ঞানিক কারণ, যা আম ভিজিয়ে রাখার অভ্যাসকে সমর্থন করে।
আম খাওয়ার আগে জলে ভিজিয়ে রাখা হয় কেন?
১. আম কৃত্রিমভাবে পাকা কি না তা জানা দরকারঃ
আপনি কি কখনো ভেবে দেখেছেন যে আম আপনি কিনছেন তা কৃত্রিমভাবে পাকা কি না? তথ্য মতে, আমের ক্রেটে প্রায়ই ক্যালসিয়াম কার্বাইডের পাউচ রাখা হয়। এটি রাসায়নিক প্রক্রিয়া এবং অ্যাসিটিলিন গ্যাস উৎপন্ন করে। যার কারণে কৃত্রিমভাবে আম পাকার প্রক্রিয়া দ্রুত হয়। কিন্তু এক বালতি জলে আম ভিজিয়ে রেখে তা সহজেই বুঝতে পারবেন। আম ডুবে গেলে স্বাভাবিক ভাবেই পাকা। কিন্তু যদি ভাসতে থাকে তাহলে বুঝবেন কৃত্রিমভাবে পাকানো হয়েছে।
২. আম খেয়ে যাতে শরীর গরম না হয়ঃ
আম শরীরের তাপ বাড়াতে পরিচিত। যার কারণে ব্রণ ও ফুসকুড়ির মতো ত্বক সংক্রান্ত সমস্যা দেখা দেয়। এ ছাড়া মাথাব্যথা ও বমি বমি ভাব অনুভূত হয়। এই নিয়ে আপনার চিন্তা করার দরকার নেই। অন্তত আধা ঘণ্টা জলে আম ভিজিয়ে রাখলে এতে উপস্থিত থার্মোজেনিক বৈশিষ্ট্য কমে যায়। এর মূলত তাপ উৎপন্ন করার বৈশিষ্ট্য রয়েছে। ভিজিয়ে আম খেলে শরীরের তাপ স্থিতিশীল থাকে। তাই শরীর গরম বা পেট গরম হওয়ার কোন সম্ভাবনা থাকে না।
৩. ভিজিয়ে রাখা আম ওজন কমাতে সাহায্য করেঃ
আপনি যদি মনে করেন যে আমের মৌসুমে শরীর থেকে অতিরিক্ত মেদ কমানো কঠিন হয়ে পড়ে, তাহলে এখানে আপনি ভুল করছেন। আমে রয়েছে ফাইটোকেমিক্যাল। যা প্রচুর পরিমাণে ক্ষতিকারক হতে পারে। তবে অল্প পরিমাণে এগুলো বেশ উপকারী। আম জলে ভিজিয়ে রাখলে ফাইটোকেমিক্যালের ঘনত্ব কমে যায়। যা শরীরের চর্বি কমাতে সাহায্য করে এবং কার্যকরভাবে আপনার ওজন কমাতে সাহায্য করে।
৪. কীটনাশক এবং রাসায়নিক অপসারণ করা হয়ঃ
বাজারে অর্গানিক হিসেবে আম ব্যাপক ভাবে বিক্রি হয়। কিন্তু বাস্তবে এতে জৈব কিছু নেই। যদিও একটি ফসল বাহ্যিকভাবে কীটনাশক-মুক্ত হতে পারে, তবে বেশিরভাগ মাটিতে সার ও কীটনাশকের মতো রাসায়নিক মিশ্রিত হয়, যার কারণে এই বিষাক্ত রাসায়নিকগুলি ফল পর্যন্ত পৌঁছায়। তাই খাওয়ার আগে আম জলে ভিজিয়ে রাখা খুবই জরুরি। এ ধরনের খাবার খেলে শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ, চোখ ও ত্বকের জ্বালাপোড়া এবং ক্যান্সারের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। ফলগুলি জলে ভিজিয়ে রেখে এই রাসায়নিকগুলি সরানো দরকার, তারপরে সেগুলি খাওয়ার জন্য নিরাপদ হয়ে যায়।
সামগ্রিকভাবে, আম জলে ভিজিয়ে রাখার এই পুরনো ঐতিহ্যের সঙ্গে বৈজ্ঞানিক সংযোগও রয়েছে। যা অধিকতর স্বাস্থ্যকর ও নিরাপদ। এই কারণে, আমরা শুধুমাত্র সুস্বাদু, চটকদার, রসালো এবং বিস্ময়কর ফল আম, উপভোগ করতে শুধু পারি না, কিন্তু এই পুরানো ঐতিহ্য সংরক্ষণের একটি কারণও পাই।