বেশ গুছিয়ে রান্না করলেন, খাবারে তেল-মশলা-নুন সব একদম ঠিকঠাক, কিন্তু থালাতে খাবার সাজানো ও খাওয়ার নিয়ম না মানলে সব অসম্পূর্ণ থেকেই যাবে। হিন্দুধর্মে ‘থালা’ সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ চিহ্ন বহন করে। বিভিন্ন উৎসবে, বিশেষ করে পুজোর সময় নিয়ম করে থালাতে খাবার খাওয়ার রীতি দেখা যায়। এই থালা বা খাবারের থালায় যা যা আইটেম রাখা হয় তার প্রতিটিরই নিজস্ব গুরুত্ব রয়েছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, থালাতে খাবার সাজানো এবং থালা থেকে খাবার খাওয়ার ব্যাপারেও হিন্দু শাস্ত্রে ও বাস্তু শাস্ত্রে বেশ কিছু নিয়মকানুন রয়েছে। এগুলো পালন না করলে গৃহস্থের বাড়িতে সারাবছর অশান্তি, অভাব, এবং সংকট লেগে থাকতে বাধ্য। আজকের আর্টিকেলে থাকছে শাস্ত্রমতে থালা সাজানোর নিয়ম এবং তা থেকে খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা।
ক. থালায় খাবার সাজানোর নিয়মঃ
ভাত এবং রুটি বা রুটিজাতীয় খাবার রাখুন থালার ঠিক মাঝখানে। গ্রেভি সহ তরকারি রাখুন এবং রসের মিষ্টি রাখুন থালার উপরের ডানদিকে। তেলে ভাজা খাবার, ফল, ঝোল ছাড়া সবজি, এবং ভাজি রাখবেন থালার নিচের ডানদিকে। চাটনি, দই, পাঁপড়, এবং সালাদ রাখবেন থালার উপরের বামদিকে। ভাত ও রুটির ঠিক সামনে রাখবেন গুঁড়ের কোন খাবার/আচার/হালুয়া এবং নুন ও লেবু।
খ. খাওয়ার সঠিক নিয়মঃ
- খাওয়ার আগে অবশ্যই স্নান করে পরিষ্কার কাপড় পরবেন। গায়ে সুগন্ধি মাখবেন। যদি স্নান না করতে পারেন তাহলে দুই হাত, দুই পা, এবং মুখমন্ডল খুব ভালো করে ধুয়ে নিবেন। এরপরে সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করে খেতে বসবেন।
- স্নান করা বা মুখ ধোয়ার পরে আদা, লেবু, এবং সৈন্ধব নুন জলে গুলিয়ে খেয়ে নিন। এটা স্টার্টারের কাজ করবে এবং ক্ষুধা বাড়াবে।
- সকালে খাওয়ার পরে কিছুক্ষণ হাঁটাচলা করবেন, এটা খাবার হজমে সাহায্য করবে। একইভাবে রাতে খাওয়ার পরে ১০০ কদম হাঁটবেন। রাতে ঘুমানোর সময়ে বাম দিকে কাত হয়ে ঘুমাবেন।
- খাওয়ার সময়ে বজ্রাসনে বসে খেতে পারেন। এটাও খাবার হজমে সাহায্য করবে।
- খাওয়া শেষ করার ১ ঘন্টা পরে মিষ্টি দুধ ও ফল খাবেন। এতে খাবার ভালোভাবে হজম হবে।
গ. খাবার খাওয়ার আগে ও পরে আরো কিছু করণীয়ঃ
- নিজে খেতে বসার আগে অবশ্যই বাড়ির পোষা প্রাণীকে খাবার দিবেন। কারণ পোষ্য অভুক্ত থাকলে অন্নদেবতা রুষ্ট হন।
- খেতে বসবেন ঠান্ডা মাথায়। কোনরকম ভয়, হিংসা, ঈর্ষা, লোভ, বা বিদ্বেষ নিয়ে খেতে বসবেন না। এগুলো খাবার সহজে হজম হতে দেয় না। এমনকি অসুস্থ শরীরেও খাবার খেলে হজমে সমস্যা হয়।
- কেউ আপনাকে অবহেলায় খাবার পরিবেশন খেলে খাবেন না। এমনকি নিজেও কাউকে অবহেলায় খাবার পরিবেশন করবেন না।
- খাওয়ার সময়ে দাঁড়িয়ে খাবেন না এবং জুতা পড়ে থাকবেন না। আবার মাথায় কাপড় দিয়েও খেতে বসবেন না।
- বেশী বেলা করে খাবেন না। সূর্যোদয় হওয়ার পরবর্তী ২ ঘন্টার মধ্যে সকালের খাবার খাবেন। আর রাতের খাবার সূর্যাস্ত হওয়ার পরবর্তী আড়াই ঘন্টার মধ্যে খাবেন। এই দুই সময়ে পাকস্থলী বেশ সচল থাকে।
- বিছানায় বসে খাবার খাবেন না একদমই। বিশেষ করে যে বিছানায় ঘুমান সেই বিছানায় বসে খাওয়া নিষেধ। শোয়ার বিছানায় বসে খাবার খেলে দেবী লক্ষ্মী চটে যান।
- কোলাহলপূর্ণ পরিবেশ, অশ্বত্থ গাছ, এবং বট গাছের নিচে কখনোই খেতে বসবেন না।
- খাওয়ার সময়ে থালা হাতে ধরবেন না।
- ভাঙা বাসনকোসনে যেন খাবার খাওয়া ও পরিবেশন করা না হয় সেদিকে খেয়াল রাখবেন।
- সবসময় পূর্ব ও উত্তর দিকে মুখ করে খেতে বসবেন। পশ্চিম ও দক্ষিণ দিকে মুখ করে খাবেন না।
- খাওয়ার মাঝখানে মলমূত্রের বেগ আসলে খাওয়া বন্ধ করে দিবেন।
- খাবার খাওয়ার পরে সাথে সাথে জল খাবেন না। আবার খাওয়ার মাঝখানে বা আগে ঘন ঘন জল খাবেন না।
- খাওয়ার সাথে সাথে দৌঁড়ানো বা শৌচকর্ম করা যাবে না।