গরমকালে অনেক বাড়িতেই গৃহিণীদের প্রায়শই দুধ ফেটে নষ্ট হয়ে যাওয়ার সমস্যার মুখে পড়তে হয়। শীতকালে এই সমস্যা না থাকলেও অনেক সময় দুধ জ্বাল দেওয়ার সময় ফেটে যায়। এর নানা কারন থাকতে পারে। সেই বিষয়ে অন্য একদিন কথা বলা যাবে। তবে আজকে লিখতে চলেছি ফেটে যাওয়া দুধ অর্থাৎ কিনা, দুধ ফেটে নষ্ট হলে তা ফেলে না দিয়ে কি কি ভাবে ব্যবহার করা যেতে পারে। রান্নার নানা রেসিপির থেকে শুরু করে রূপচর্চা অনেক কাজেই ব্যবহার করতে পারেন এই ফেটে যাওয়া দুধ। আসুন জেনে নেওয়া যাক সেই সব ব্যবহারের কথা।
ক. ফেটে যাওয়া দুধ দিয়ে নানা রকমের খাবারঃ
১. সেদ্ধ ডিমে মেশানঃ
প্রতিদিন সকালে সেদ্ধ ডিম খেলে এর সঙ্গে ফেটে যাওয়া দুধ খেতে পারেন। এর সাহায্যে আপনি পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যালসিয়ামও পাবেন। এজন্য সেদ্ধ ডিমগুলো টুকরো করে কেটে নিন। তারপর ফেটে যাওয়া দুধ যোগ করুন এবং আপনার স্বাদ অনুযায়ী সামান্য কালো নুন এবং গোলমরিচ যোগ করুন। খেতেও ভালো আর এটা শরীরের জন্য ভালো।
২. আইসক্রিম তৈরি করুনঃ
ফেটে যাওয়া দুধ দিয়ে বাড়িতে তৈরি করতে পারেন আইসক্রিম। যদি সারারাত রাখা দুধ সকালে গরম করলে ফেটে যায়, তাহলে ফেলে দেবেন না। বরং খোয়া বানিয়ে নিন। খোয়া বানানোর জন্য একটি পাত্রে এই দুধ গরম করুন যতক্ষণ না এর জল শুকিয়ে যায়। জল পুরোপুরি শুকিয়ে গেলে তাতে চিনি মিশিয়ে কিছুক্ষণ রান্না করুন। আপনার খোয়া রেডি। এবার এতে শুকনো ফল মেশানোর পর বরফির আকারে কেটে আধা ঘণ্টা ফ্রিজে রেখে দিন। আধা ঘণ্টা পর তৈরি ফেটে যাওয়া দুধের আইসক্রিম।
৩. দই এবং বাটার মিল্ক তৈরি করুনঃ
আপনি ফেটে যাওয়া দুধ থেকে বাটারমিল্ক বা দই তৈরি করতে পারেন। হ্যাঁ, দইও তৈরি হয় এই দুধ থেকে। ফাটা দুধে এক চামচ টক দই দিয়ে দিন। পরের দিন আপনার দই জমে যাবে। এখন আপনি বাটারমিল্ক বানিয়ে পান করতে পারেন।
৪. পনিরও তৈরি করা যায়ঃ
ফাটা দুধ থেকেও আপনি বাড়িতে পনির তৈরি করতে পারেন। যেহেতু ফাটা দুধ থেকে পনির তৈরি করা হয়, তাই আপনার দুধকে কাটানোর প্রয়োজন হবে না। এর জন্য ফাটা দুধ এক মিনিট গরম করে কাপড়ে মুড়িয়ে দুই থেকে তিন ঘণ্টা রাখতে হবে। এতে জল সম্পূর্ণভাবে বের হয়ে যাবে এবং অবশিষ্ট পনির কাপড়ে পড়ে থাকবে। এখন এই পনির দিয়ে তৈরি করতে পারেন সুস্বাদু খাবার।
৫. স্মুদি তৈরি করতে পারেনঃ
বাড়িতে যদি প্রতিদিন স্মুদি তৈরি করেন এবং পান করেন তবে আপনি ফাটা দুধ দিয়েও স্মুদি তৈরি করতে পারেন। দুধের পরিবর্তে, আপনাকে যা করতে হবে তা হল একটি মিক্সারে কলা বা আমের টুকরোগুলিকে ফেটে যাওয়া দুধের সাথে ব্লেন্ড করতে হবে। এটি খুব সুস্বাদু এবং নরম। এটি দুধের তৈরি স্মুদির চেয়ে স্বাস্থ্যকর। একবার চেষ্টা করে বানিয়ে খেয়ে দেখতে পারেন।
৬. কেক তৈরি করাঃ
আপনি কেক তৈরি করতে এই দুধ ব্যবহার করতে পারেন। নষ্ট দুধ বেকিং সোডার মতো কাজ করে। এটি আপনার কেক একেবারেই নষ্ট করে না। বরং আরো স্বাস্থ্যকর ও নরম বানায়।
৭. গ্রেভি ঘন করুনঃ
সবজির গ্রেভি ঘন করতে এই দুধ ব্যবহার করতে পারেন। এর জন্য আপনাকে অতিরিক্ত পরিশ্রমও করতে হবে না। আপনাকে যা করতে হবে তা হল রান্না করা সবজির শেষে ফেটে যাওয়া দুধ যোগ করুন এবং দুই মিনিট রান্না করুন। এতে সবজির গ্রেভি ঘন হবে।
৮. অন্যান্য খাবার তৈরি করাঃ
নানা ধরনের ড্রেজার্টও,প্যান কেক, কেক কিংবা ওয়াফেল বানানো যেতে পারে ফাটা দুধ দিয়ে। খোঁজ করলে জানতে পারবেন বেকারিতে ফেটে যাওয়া দুধ ব্যবহার করেই এগুলো বানানো হয়। তবে রেসিপি বানানোর প্রয়োজন অনুযায়ী এর ব্যবহার হয়।
খ. ফেটে যাওয়া দুধের অন্যান্য ব্যবহারঃ
- ফেটে যাওয়া দুধ মুখের হারিয়ে যাওয়া উজ্জ্বলতা ফিরিয়ে আনে নিমেষের মধ্যে। বিশ্বাস না হলে একবার করে দেখুন। ফাটা দুধ ফেস প্যাকের মত মুখে লাগিয়ে ১৫-২০ মিনিট রাখুন। তারপর পরিষ্কার জল দিয়ে মুখ ধুয়ে নিন।
- ফেটে যাওয়া দুধ গাছে সার হিসেবে ব্যবহার করা যায়। গাছের নিচে এই দুধ দিয়ে দিন। তবে ঠাণ্ডা করে দেবেন। সারের বিকল্প হিসেবে এটা কাজ করবে। তবে খেয়াল রাখবেন দুধে চিনি মেশানো যেন না থাকে।