চলে এসেছে শীত, আর এই শীতে খেজুরের রস না খেলে যেন চলেই না। খেজুরের রস দিয়ে গুড় বা পিঠা বানিয়ে খেতে তো ভারী মজা, কিন্তু এর উপকারিতা সম্পর্কে আপনার জানা আছে কি? তাজা খেজুরের রস থেকে পাবেন শরীর সুস্থ রাখার মূলমন্ত্র। আজকের আর্টিকেল থেকে জানতে পারবেন খেজুরের রসের উপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত।
খেজুরের রসের উপকারিতাঃ
১. পুষ্টিতে ভরপুরঃ
খেজুরের রসে প্রচুর পুষ্টি উপাদান পাওয়া যায়। এতে প্রোটিন, মিনারেল, ভিটামিন, আয়রন, ফ্রুক্টোজ, গ্লুকোজ, পটাশিয়াম, এবং সোডিয়াম আছে। এই রস স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী।
২. শরীরে শক্তি জোগায়ঃ
আমাদের শরীরে এনার্জি যোগান দেয় শর্করা। খেজুরের রসে বিদ্যমান শর্করা সারাদিনের শক্তির চাহিদা পূরণ করে। তাছাড়া এতে জলীয় অংশ বেশী আছে। তাই খেজুর রসকে প্রাকৃতিক এনার্জি ড্রিংক বলা হয়। বাজারের কেমিক্যাল ও রংমিশ্রিত জুস বা ড্রিংকের বদলে খেজুরের রস সকালবেলা খেলে শক্তির অভাব তো দূর হবেই, সেই সাথে সারাদিনে ক্লান্তি অনুভূত হবে না।
৩. পেশী শক্তিশালী ও সচল করেঃ
খেজুরের রসের পটাশিয়াম ও সোডিয়াম মাংসপেশি শক্তিশালী করে। তার সাথে পেশীর অসারতাও দূর করে। মানবদেহে স্নায়ুকোষগুলোকে পরস্পরের সাথে সংযুক্ত করে নিউরন। আবার নিউরনের ভিতর দিয়ে স্নায়ু সংকেত চলাচল করে। খেজুরের রস স্নায়ু সংকেত চলাচলকে ত্বরান্বিত করে।
৪. কর্মশক্তি যোগায়ঃ
আমাদের শরীরে কর্মশক্তি যোগাতে সাহায্য করে ম্যাগনেশিয়াম। খেজুরের রসের ম্যাগনেশিয়াম শরীরে কর্মশক্তির যোগান দেয়। আবার দেহের ক্লান্তি দূর করতেও ম্যাগনেশিয়ামের জুড়ি নেই। নিয়মিত খেজুর রস খেলে দেহ থাকবে সতেজ ও চনমনে।
৫. রক্তস্বল্পতা দূর হয়ঃ
খেজুরের রসে আয়রন আছে, কাজেই এটি রক্তস্বল্পতা দূর করতে সাহায্য করে। তবে জ্বাল দেয়া খেজুর রসের চাইতে খেজুরের পাটালি গুড় বা ঝোলা গুড়ে আয়রন বেশী থাকে। তাই রক্তস্বল্পতা থাকলে প্রতিদিন এক টুকরা পাটালি গুড় বা এক চামচ ঝোলা গুড় খেতে পারেন। আবার রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কমে গেলে খেজুরের রস পানে সমস্যা দূর হবে।
৬. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়ঃ
খেজুরের রসে বিদ্যমান পুষ্টি উপাদান রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। আবার শীতের শুরুতে বা শীত চলাকালীন সময়ে খেজুরের রস সর্দি-কাশি সারায়। পাশাপাশি অত্যধিক শীতে শরীর গরম রাখে খেজুরের রস। এর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন বি-৩ এবং ভিটামিন সি শরীর থেকে ক্ষতিকর উপাদান বের করে দেয়।
৭. হাড় শক্ত করেঃ
খেজুরের রসে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম আছে। এটি হাড়ে ক্যালসিয়ামের অভাব দূর করে হাড় শক্ত করে। আবার বাড়ন্ত শিশুদের দেহে খেজুরের রস হাড় ও পেশী গঠন করতে সাহায্য করে।
৮. ওজন কমায়ঃ
খেজুরের রস চিনির একটি ভালো বিকল্প হতে পারে৷ এতে বিদ্যমান শর্করা শরীরের জন্য ক্ষতিকর নয়। আবার এই রসে পটাশিয়ামের পরিমাণ অনেক বেশী, যা বিপাক ক্রিয়া বাড়ায়। ফলে বাড়তি চর্বি দেহে জমতে পারে না এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে।
৯. হজমশক্তি ঠিক রাখেঃ
খেজুরের রস একটি আঁশসমৃদ্ধ খাবার। এটি হজমে সহায়ক এনজাইমগুলো ক্ষরণে সাহায্য করে এবং হজমক্রিয়া ত্বরান্বিত করে। ফলে খাবার তাড়াতাড়ি হজম হয়, মল নরম করে, এবং মলত্যাগ আরামের হয়। কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যায় খেজুর রস বা গুড় খেলে উপকার পাওয়া যায়। খাওয়ার পরে এক চামচ খেজুর গুড় বা রস খেতে পারেন হজম দ্রুত হওয়ার জন্য।
সতর্কতাঃ
- খেজুরের রস কখনোই কাঁচা খাবেন না। কারণ কাঁচা রসে জীবাণু থাকতে পারে। তাছাড়া কাঁচা রসে পোকামাকড়, বাদুড়ের লালাও মিশ্রিত থাকতে পারে। তাই খেজুরের রস হালকা জ্বাল দিয়ে খেতে পারেন বা রস দিয়ে বিভিন্ন রেসিপি বানিয়ে খেতে পারেন।
- অতিরিক্ত খেজুরের রস খাওয়া উচিত না। সুস্থ শরীরে সর্বোচ্চ দুই গ্লাস খেতে পারবেন। চাইলে খালি পেটেও খেতে পারবেন।
- ডায়বেটিস থাকলে খেজুরের রস খাওয়া এড়িয়ে চলুন। কারণ এতে প্রচুর পরিমাণে চিনি থাকে। আর কিডনির সমস্যা থাকলেও খেজুরের রস খাবেন না। এতে বিদ্যমান অত্যধিক পটাশিয়াম কিডনি রোগীদের জন্য ক্ষতিকর। হাঁপানি রোগে খেজুরের রস খেলে শ্বাসকষ্ট বেড়ে যেতে পারে।
- খেজুরের রস খাওয়ার সঠিক সময় হচ্ছে ভোরবেলা। কখনোই সূর্য উঠার পরে রস খাবেন না। যত দেরী করে রস খাবেন, সূর্যের তাপে রসে তত বেশী ফারমেন্টেশন হবে। ফারমেন্টেড রস খেলে পেট ব্যথা, বমি, ডায়রিয়া হতে পারে।