বর্তমানের তরুণ প্রজন্মের কাছে চাকরির চাইতে ব্যবসা বেশী প্রাধান্য পাচ্ছে। কারণ এতে নির্দিষ্ট কোন কোয়ালিফিকেশন বা সময় লাগে না, পড়াশুনার পাশাপাশি নিজের সুবিধা মতো কাজ করে আয় করা যায়। বিভিন্ন ধরণের ব্যবসার মধ্যে ফুড বিজনেসের দিকে তরুণরা বেশী ঝুঁকছে। তবে ফুড বিজনেস করা কোন সোজা কথা না। সঠিক গাইডেন্স ও মার্কেট নলেজের অভাবে অনেক তরুণ উদ্যোক্তা শুরুতেই বিপাকে পড়ে। এই ব্যাপারটা মাথায় রেখে আজকের আর্টিকেল সাজানো হয়েছে। আজকের আলোচনায় থাকছে কলেজ পড়ুয়াদের জন্য ৪টি সহজ ফুড বিজনেস আইডিয়া৷ আপনি যদি পড়াশুনার পাশাপাশি উদ্যোক্তা হতে চান তাহলে এই আর্টিকেল থেকে জানতে পারবেন কিভাবে কম খরচে ফুড বিজনেস করতে পারবেন সে সম্পর্কে।
১. ফুড কার্টঃ
একটু খেয়াল করলে দেখবেন, ইদানীং ফুড কার্টের ব্যবসা বেশ জনপ্রিয় হয়েছে। কারণ এতে বিনিয়োগ কম কিন্তু লাভ বেশী। চলতি পথে হালকা ধরণের খাবারের জন্য ফুড কার্টের ব্যবসা হচ্ছে বেস্ট আইডিয়া। এই কাজের জন্য লাগবে একটি কার্ট বা ফুড ভ্যান এবং রান্নার জন্য উপযোগী স্টোভ।
ফুড কার্টে অনেক ধরণের স্ন্যাকস বিক্রি করতে পারেন। সবচেয়ে কম খরচে ব্যবসা করার জন্য পপকর্ন বা কফি বেছে নিতে পারেন। পপকর্ন বিক্রির জন্য সেকেন্ড-হ্যান্ড ভেন্ডিং কার্ট আর পপকর্ন মেশিন কিনতে পারেন অনলাইনে। এতে খরচ আরও কম পড়বে। কফির ক্ষেত্রেও সেইম, ইনস্ট্যান্ট কফি মেকার যেহেতু বিভিন্ন সাইজের ও দামের হয় তাই নিজের সুবিধামতো একটি মেশিন নতুন অথবা সেকেন্ড-হ্যান্ড কিনতে পারেন। আর এসব খাবার তৈরির জন্য যা কাঁচামাল লাগবে তার খরচ আপনার হাতে।
পপকর্ন, কফি, বার্গার হোক বা স্যান্ডউইচ – যেটাই বিক্রি করতে চাচ্ছেন সেটাতে অবশ্যই নতুনত্ব আনার চেষ্টা করবেন। যেমন পপকর্ন বিক্রি করতে চাইলে সাদা পপকর্নের পাশাপাশি আইসক্রিম পপকর্ন, কোকাকোলা পপকর্ন, চকলেট পপকর্ন ইত্যাদি ফ্লেভার রাখবেন।
বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শপিং মল, বাজার, বা পার্কের পাশে প্রতিদিন বা সাপ্তাহিক ভিত্তিতে আপনার ব্যবসা চালু করতে পারেন। ফুড কার্টের বিজনেস করার আগে সবচেয়ে জরুরি লাইসেন্স ও পারমিশন যোগাড় করা, এ ব্যাপারে যেন কোন ভুল না হয় সেটা খেয়াল রাখবেন।
২. রেডিমেড মসলাঃ
কর্মব্যস্ত নারীরা প্রায়ই মসলা বাটার সময় পান না। তাই রান্নার কাজে তারা রেডিমেইড গুঁড়ো মসলা ব্যবহার করেন। দোকানের গুঁড়ো মসলায় রাসায়নিক পদার্থ থাকে যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। আর ঠিক এই সুযোগটাই আপনি কাজে লাগাতে পারেন।
বাড়িতে জায়গা থাকলে একটি মসলা ভাঙার মেশিন কিনে ফেলুন। আর সাথে দুই-তিনজন লোক রাখুন। বিভিন্ন ধরণের গোটা মসলা পাইকারীতে কিনে নিজের মেশিনে ভাঙিয়ে বিক্রি করতে পারেন। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে কলেজ স্টুডেন্টরা হোস্টেল বা ডরমিটরিতে থাকে। সেক্ষেত্রে কাছের কোন মসলার আড়ত থেকে গোটা মসলা ভাঙিয়ে এনে ভালো করে ঝেড়ে-বেছে বিক্রি করা যেতে পারে।
গুঁড়ো মসলার পাশাপাশি বাটা মসলার দিকে নজর দিতে পারেন। আদা, রসুন, লঙ্কা, পেঁয়াজ ইত্যাদির পেস্ট খাবারে যেমন স্বাদ বাড়ায়, তেমনি এর থেকে ভালো আয় করার সুযোগ থাকে। বাটা মসলার সাথে কুচি করা মসলার (যেমন পেঁয়াজ কুচি, রসুন কুচি ইত্যাদি) অপশনটাও রাখতে পারেন। এতে করে কর্মব্যস্ত মহিলা বা পুরুষদের জন্য সুবিধা হবে।
বাটা বা কুচি করা মসলা দ্রুত গন্ধ হয়ে যাওয়ার, পচে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই ডেলিভারি এমনভাবে করবেন যাতে রাস্তায় নষ্ট না হয়ে যায়। আর গুঁড়ো মসলা বিক্রির ক্ষেত্রে একবারে অনেক মসলা পাউডার স্টক করে রাখবেন না। নাহলে পোকা ধরে যাওয়ার বা নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে।
৩. হোমমেইড স্ন্যাকস অ্যান্ড সুইটসঃ
আচার, পিঠা, চিপস, পেস্ট্রি, কুকিজ, মিষ্টি ইত্যাদি খাবার ছেলে-বুড়ো সবাই পছন্দ করে তাই এসব খাবারের কদর সবসময়ই থাকে। অল্প পুঁজিতে হোমমেইড স্ন্যাকস এবং সুইটসের ব্যবসা করতে পারেন। যেহেতু আপনি একজন কলেজ স্টুডেন্ট, সেহেতু পরামর্শ থাকবে কোন স্ন্যাকস আইটেমটা আপনি ভালো বানাতে পারেন সেটা খুঁজে বের করুন।
আপনি যদি আচার ও চিপস বানাতে এক্সপার্ট হন তাহলে তো কথাই নেই, এগুলো দিয়েই বিজনেস স্টার্ট করুন। কারণ এই দুটো খাবারের চাহিদা অনেক, বানাতে খরচ কম, এবং লাভও অনেক বেশী। আচারের ক্ষেত্রে প্রথম অবস্থায় বেশী আইটেম রাখার দরকার নেই। কোন ফ্লেভারের আচারগুলোর বেশী ডিমান্ড সেটা একটু খোঁজ করে শুরু করুন। পরে বিজনেস বাড়লে আইটেম বাড়াবেন।
পটেটো চিপস ও ফ্রেঞ্চ ফ্রাইয়ের প্রচুর ডিমান্ড, কিন্তু দোকানের চিপস স্বাস্থ্যসম্মত হয় না। ঘরে ফ্রেশ তেলে চিপস ভেজে ও হোমমেইড চিপস মশলা বানিয়ে চিপস বিক্রি করতে পারেন। চিপস বা আচারের বিজনেসের ক্ষেত্রে প্যাকেজিং বেশ গুরুত্বপূর্ণ, তাই এই ব্যাপারটা মাথায় রাখবেন।
মিষ্টির আইটেম দিয়ে স্বল্প পুঁজিতে বিজনেস করতে চাইলে দই, ছানা, পনির কিংবা সন্দেশ দিয়ে শুরু করতে পারেন। কেক, কুকিজ, পেস্ট্রিতে খরচ তুলনামূলকভাবে বেশী, তাই প্রথম অবস্থায় এগুলো না করাই ভালো।
সিজনভিত্তিক ফুড বিজনেসও করতে পারেন, এতে কিন্তু আয়ের পরিমাণ খুব একটা খারাপ হবে না। যেমন, শীতকালে পিঠা, আবার বিভিন্ন ঋতুতে যেসব ফল বেশী পাওয়া যায় সেগুলোর জ্যাম, জেলী, বা চাটনি বানিয়ে বিক্রি করতে পারেন।
৪. কুকিং চ্যানেলঃ
বর্তমানে মানুষ খুব বেশী ইন্টারনেটনির্ভর হয়ে পড়ছে। পড়াশোনা, কেনাকাটা, বিনোদন সবকিছুই এখন ইন্টারনেট থেকে করা সম্ভব। যদি আপনি আপনার রন্ধনশৈলীকে ইন্টারনেটে তুলে ধরতে পারেন, তাহলে কাস্টমার পেতে কোন অসুবিধা হবে না।
সবচেয়ে বেশী ব্যবহৃত হয় এমন সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্মগুলোতে একটি করে বিজনেস পেইজ খুলে ফেলুন। নিজে যা রান্না করছেন বা করবেন তা সুন্দর করে ভিডিও করে বা লিখে পেইজগুলোতে পোস্ট করুন। তার সাথে জুড়ে দিন আপনার পেইজ থেকে খাবার কিভাবে অর্ডার করা যাবে তার ডিটেইলস।
অনলাইনে কুকিং চ্যানেল একবার দাঁড় করাতে পারলে আপনার বিজনেসও দাঁড়িয়ে যাবে, তবে তার জন্য একটু সময় লাগবে। আর এই কাজে পরিশ্রমও তুলনামূলকভাবে বেশী। যেমন ইউটিউবে ভিডিও আপলোডের জন্য ভালো ক্যামেরা লাগবে, ভিডিও এডিটিং স্কিল লাগবে। এগুলো যদি আপনার না থাকে তাহলে এসবের জন্য বেশ কিছু পয়সা খরচ করতে হবে।
আবার আপনি যদি আপনার রেসিপিগুলো ব্লগ আকারে প্রকাশ করতে চান তাহলে তার জন্য ওয়েবসাইট লাগবে। ওয়েবসাইট বানানো এবং কন্টেন্ট সার্চ ইঞ্জিনে র্যাঙ্ক করানোর জন্যও বেশ কিছু টাকা খরচ হবে। তবুও সহজে কাস্টমার পাওয়ার জন্য অনলাইনে কুকিং চ্যানেল খোলা বেশ লাভজনক।
রেসিপি শেয়ারের পাশাপাশি বিভিন্ন কুকিং টেকনিক আপনার চ্যানেলে শেয়ার করতে পারেন। আবার মাঝে মাঝে নামকরা রেস্টুরেন্ট বা জায়গায় ঘুরে ঘুরে ফুড রিভিউও করতে পারেন। আর কখনোই একটা সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্মের উপর নির্ভর করবেন না। কয়েকটি প্লাটফর্মে কুকিং চ্যানেল বা পেইজ খুলবেন, এতে বেশী কাস্টমার পাওয়া সহজ হবে।