স্বাস্থ্যকর খাবারের প্রতি ঝোঁক বাড়ার সাথে সাথে একসময় ‘ঘি’ খাওয়াকে অস্বাস্থ্যকর বলে মনে করা হত। ভারতীয় রন্ধন প্রণালীর একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হল ‘ঘি’। মাঝে এমন একটি সময় ছিল যখন রান্নার তেলের তুলনায় ঘি’কে অস্বাস্থ্যকর বলে মনে করা হত। এটা বিশ্বাস করা হত যে ঘি খাওয়া শরীরে অতিরিক্ত চর্বি যোগ করে ও ধমনীতে বাধা সৃষ্টি করে। ফলে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ে।
কিন্তু সময়ের সাথে সাথে, গবেষণায় দাবি করা হয়েছে যে ঘি সঠিকভাবে গ্রহণ করলে স্বাভাবিক ভাবেই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। বিপাক প্রক্রিয়াকে বেড়ে যায়। কিন্তু তাই বলে ভাববেন না যে গ্যালন গ্যালন ঘি খাওয়ার কথা বলছে গবেষকরা। ঘি সঠিক মাত্রায় ও কিভাবে রান্না করে খাচ্ছেন তা ভীষণই গুরুত্বপূর্ণ।
দিনে ঠিক কতটা ঘি খাবেন ?
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ এবং পুষ্টিবিদদের মতে, প্রতিদিন ২-৩ চা চামচ ঘি খাওয়া যেতে পারে। যা আপনার হৃদপিণ্ডকে সুস্থ রাখতে এবং আপনার সামগ্রিক সুস্থতার উন্নতি করতে পারে। তবে ঘি’তে প্রচুর পরিমাণে স্যাচুরেটেড ফ্যাট রয়েছে, যা খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। তাই ২ থেকে ৩ চামচের বেশি কখনই দিনে খাবেন না। তবে এটি যে কোনও ধরণের চর্বি খাওয়ার ক্ষেত্রে সত্য। তাই হার্টকে সুস্থ রাখতে চর্বি খাওয়া কমানোর পরামর্শ দেওয়া হয়।
কেন ঘি খাবেন?
- ভারতীয় রান্নায় ব্যবহৃত বহু পুরাতন উপাদান হচ্ছে ঘি। আয়ুর্বেদ শাস্ত্র মতে ঘি’কে প্রাচীন ওষুধের সাথে তুলনা করা হয়। কিন্তু অনেকের মনে নানা ভাবে একটি কথা ডুকে গিয়েছে যে ঘি খাওয়া খারাপ। এতে চর্বি বেড়ে গিয়ে মোটা হয়ে যাওয়ার চান্স থাকে। হজম হয় না ও হার্টের সমস্যা দেখা দেয়। তবে এই ধারণা যে ভুল তা স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা প্রমাণ করে দিয়েছেন। ঘি’তে ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, ভিটামিন ডি, ভিটামিন কে থাকে। ঘি
- ভিটামিন ই এর একটি চমৎকার উৎসও। গবেষণায় দেখা গেছে যে ভিটামিন ই এর উল্লেখযোগ্য অ্যান্টি অক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য রয়েছে। ভিটামিন ই এর মতো অ্যান্টি অক্সিডেন্টগুলি ক্যান্সার, আর্থ্রাইটিস এবং ছানি রোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। ভিটামিন ই হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতেও সাহায্য করতে পারে।
- ঘি হল কনজুগেটেড লিনোলিক অ্যাসিড বা CLA এর একটি উল্লেখযোগ্য উৎস। পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছে যে CLA স্থূলতা মোকাবেলায করতে সাহায্য করে। গবেষণা বলা হয়েছে যে ঘিতে পাওয়া CLA অতিরিক্ত ওজন কমাতে সাহায্য করে। শরীরের চর্বি কমাতেও সাহায্য করতে পারে ঘি। ফলে ঘি খাওয়া শরীরের জন্য ভালো।
- ঘি হচ্ছে এক প্রকারের স্বাস্থ্যকর চর্বি। ভিটামিন এ, ই, কে এবং ডি এর গুণাগুণ এতে রয়েছে। ফলে ঘি স্বাভাবিক ভাবেই হাড়ের স্বাস্থ্য, হৃদরোগ এবং মস্তিষ্কের কার্যকারিতা উন্নত করতে পারে। এটি ওমেগা -৩ ফ্যাটি অ্যাসিডে সমৃদ্ধ।
- ঘি’তে আশ্চর্যজনক অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা জ্বালা এবং শরীরের ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। এটি একটি রেচক হিসাবেও কাজ করে ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য এবং অন্যান্য হজমজনিত সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে সাহায্য করে।
- নিয়মিত ঘি খাওয়া স্বাভাবিক ভাবে সামগ্রিক স্বাস্থ্যকে বাড়িয়ে তুলতে পারে। বিপাকীয় হারকে উন্নত করতে পারে। অ্যালার্জি, ফ্লু, সর্দি এবং কাশির মতো অসুস্থতার বিরুদ্ধে লড়াই করার ক্ষমতা বাড়াতে পারে।
রান্নায় ঘি ব্যবহারের সঠিক পদ্ধতিঃ
ঘি খাওয়া সম্পূর্ণ রূপে খাবারের উপর নির্ভর করে। আলু সেদ্ধ দিয়ে গরম ভাতে ঘি নিলে তার পরিমাপ সব সময় বেশি হয়। কারণ এর স্বাদ এত অপূর্ব। তাই ভাতের পাতে ঘি না নেওয়াই ভালো। তার চেয়ে বরং সামান্য ঘি দিয়ে আলু সেদ্ধ বা ডিম সেদ্ধ মাখিয়ে নেওয়া বেস্ট।
খাবারে ঘি যোগ করার সবচেয়ে সঠিক উপায় হল ঘি, কারিপাতা, লাল লঙ্কা এবং রসুনের একটি তড়কা তৈরি করে ডাল বা সাধারণ তরকারিতে ঢেলে দিন। নিরামিষ খাবারে এক চামচ ঘি যোগ করে দিন রান্নার শেষে। রুটি খেলে তাতে সামান্য ঘি দিয়ে ব্রাশ করে নিন। খেয়াল রাখবেন দিন ২-৩ চামচের বেশি একদমই না।
ঘি খাওয়ার মজা ও এর উপকারিতা দুই যদি নিতে চান, তাহলে নিশ্চিত করুন যে আপনি আপনার খাবারে খুব বেশি ঘি যোগ করবেন না। যেটুকু বলা আছে ততটাই খাবেন। এতে আপনার ভালো বই মন্দ হবে না।
বিশেষ বক্তব্যঃ
ঘি খাওয়া নিয়ে যদি আগে থেকেই ডাক্তারের কোন বিধিনিষেধ আছে তাহলে এই লেখা পড়ে ঘি খাওয়া শুরু করবেন না। আপনার ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ঘি খাবেন কিনা, তা নির্ণয় করবেন। ঘি সম্পর্কে জানা তথ্য আপনাদের সাথে শেয়ার করলাম মাত্র। যাদের কোন অসুখ বিসুখ নেই তাদেরকে এই তথ্য মূলত প্রদান করা। কোন রকমের অসুখ থাকা ব্যক্তিকে ঘি খাওয়ার প্রলোভন দেখানো লেখার উদ্দেশ্য নয়।