বাড়ির তৈরি এমন কোন খাবার নেই যা বেশি বানানো হলে ফ্রিজে রেখে পরে গরম করে খাওয়া হয় না! মোটামুটি ভাত থেকে মাছ, সবজি থেকে শাক সবই, একবারের বেশি গরম করে আমরা খেয়েই থাকি। কিন্তু একবারও ভাবিনা যে এর কোন ক্ষতিকর দিক আছে কিনা! নিশ্চয়ই আছে। কোন কোন খাবার দ্বিতীয়বার গরম করে খেতে নেই জেনে রাখুন। জানা থাকলে পরের বার আর ভুলেও সেটি গরম করে খাবেন না।
কি কি খাবার দ্বিতীয়বার গরম করে খাবেন নাঃ
- ভাত
- শাক
- মুরগির মাংস
- ডিম
- চা
আসলে উচ্চ প্রোটিনযুক্ত খাবার হওয়ার দরুন এসব খাবার কখনই গরম করে খেতে নেই। এতে খাদ্য বিষক্রিয়া হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। তাই দ্বিতীয়বার গরম করে খেলে শরীর খারাপ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আমরা প্রায়শই খাবার খাওয়ার পর বুঝি না কেন অস্বস্তি হচ্ছে, গ্যাস হচ্ছে। কি কারণ তা বোঝা যায় না। তবে দ্বিতীয়বার গরম করে খাওয়ার দরুনও এটি হতে পারে।
১. ভাত দ্বিতীয়বার গরম করে কেন খাবেন না?
আপনি আশ্চর্য হচ্ছেন ভেবে এসব কি বলছে? রোজই তো খাই। কিন্তু কিছু তো হয় না। আপনি বিশ্বাস করুন চাই না করুন, ভাত দুবার গরম করে খেলে কি সমস্যা হয় তা জানানো আমার কাজ। বাকিটা আপনি যা ভালো বুঝবেন।
ভাত আসলে উচ্চ প্রোটিনযুক্ত খাবারের অধীনে আসে। ফুডস স্ট্যান্ডার্ডস এজেন্সি (এফএসএ) এর রিপোর্ট অনুসারে, পুনরায় গরম করা ভাত খেলে আপনি খাদ্য বিষক্রিয়ায় ভুগতে পারেন। এতে ব্যাসিলাস সেরিয়াস নামক উচ্চ প্রতিরোধী ব্যাকটেরিয়া উপস্থিতির কারণে এটা হয়। তাপ এই ব্যাকটেরিয়াগুলিকে মেরে ফেলে, তবে এটি স্পোর তৈরি করতে পারে যা প্রকৃতিতে বিষাক্ত ফলে খাবারের জন্যও বিষাক্ত। ভাত পুনরায় গরম করা হলে এবং ঘরের তাপমাত্রায় রেখে দেওয়া হলে, এতে থাকা যেকোনো স্পোর সংখ্যাবৃদ্ধি করতে পারে, যা খাওয়ার সময় খাদ্যে বিষক্রিয়া সৃষ্টি করে।
তাই যদি শরীর সুস্থ রাখতে চান এখন থেকে আর ভাত দুবার গরম করবেন না। দরকার হলে বানিয়ে নিন। আর ভাত বানাতে কিন্তু সময় বেশি লাগে না। আর রেখে দেওয়া ভাত শক্ত হয়ে যায়, ঝুরঝুরে থাকে না। তাই একটু কষ্ট করে হাঁড়িতে চাল চাপিয়ে ফ্রেশ ঝুরঝুরে ভাত বানিয়ে নিন।
২. শাক একবারের বেশি গরম করে খাবেন নাঃ
পালং শাক বা কোনো সবুজ শাক, গাজর, শালগম পুনরায় গরম করে খাওয়া এড়িয়ে চলুন। এগুলো নাইট্রেট সমৃদ্ধ শাকসবজি। দুবার করে গরম করা হলে বিষাক্ত হয়ে যেতে পারে। যেকোনো শাক বিশেষ করে পালং শাকে প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকে, তাই পুনরায় গরম করলে পালং শাকে উপস্থিত আয়রন অক্সিডাইজ হয়ে যায়। আয়রনের অক্সিডেশন বিপজ্জনক ফ্রি র্যাডিক্যাল তৈরি করে যা বন্ধ্যাত্ব এবং ক্যান্সার সহ অনেক রোগের কারণ হিসাবে পরিচিত।
৩. মুরগির মাংস একবারের বেশি গরম করা সঠিক নয়ঃ
মুরগির মাংস উচ্চ প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার। তাই বারবার গরম করে এটি খাওয়া উচিত নয়। আর ফ্রিজে রেখে দেওয়া রান্না করা মাংস যদি গরম করে খান তাহলে বের করেই তা গরম করবেন না। এতে করে প্রোটিনের গঠন সম্পূর্ণরূপে পরিবর্তিত হয়ে যায়। যাতে পরিপাকতন্ত্রে সমস্যা হতে পারে। নিশ্চিত করুন যে আপনি এটিকে উচ্চ তাপমাত্রায় গরম করছেন না। বের করে নর্মাল তাপে এনে তারপর হালকা গরম করুন।
৪. বার বার ডিম গরম করে খেতে নেইঃ
প্রোটিনের একটি সমৃদ্ধ উৎস হচ্ছে ডিম। তবে রান্না করা ডিম বা সেদ্ধ ডিম বারবার তাপের সংস্পর্শে এলে মারাত্মক ক্ষতিকর হতে পারে। ডিম সেদ্ধ হয়ে গেলে সাথে সাথেই খেয়ে ফেলুন। বেশিক্ষণ রেখে দিলে ঠাণ্ডা হয়ে যাবে বলে গরম করবেন না। বরং ঠান্ডা খাবেন কারণ উচ্চ প্রোটিনযুক্ত খাবারে প্রচুর নাইট্রোজেন থাকে। এই নাইট্রোজেন পুনরায় গরম করার কারণে অক্সিডাইজড হয়ে যায়, যা ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি রাখে।
৫. চা দ্বিতীয়বার ভুলেও গরম করে খাবেন নাঃ
চা অতিরিক্ত বানানো হয়ে গেলে তা রেখে দিয়ে কিছুক্ষণ পড়ে গরম করে আমরা সকলেই কম বেশি খাই। এটি খুব ভুল কাজ আমরা করি। এতে লিভারের সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কারণ চায়ে থাকা ট্যানিক অ্যাসিড পুনরায় গরম হওয়ার দরুন বিষের সমান হয়ে ওঠে। যা লিভারে এফেক্ট ফেলে। একবারে বা একদিনে এসব হয় না। কিন্তু ধিরে ধিরে নানা রকমের সমস্যা শরীরে বাসা বাঁধতে থাকে।
জানি আজকের লেখা পড়ে অনেকেরই রাগ হচ্ছে আমার উপর যে এসব কি বলছি। কিন্তু যা স্বাস্থ্য সন্মত তা জানানো আমার কাজ। এবার বাকিটা আমি আপনাদের উপর ছেড়ে দিলাম।
