কচু শাক দিয়ে রান্না করা খাবার খেতে তো মজা, কিন্তু যখন এটা প্রসেস করতে হয় তখনই বাঁধে যত বিপত্তি৷ এই শাক চুলকানির উদ্রেক করে বলে অনেকেরই খাওয়ার ইচ্ছা মিটে যায়। কচু শাক কাটা ও সেদ্ধ করার সঠিক নিয়ম জানা থাকলে এই সমস্যায় আর পড়তে হবে না। আজকের পর্বে থাকছে কচু শাক কাটা ও সেদ্ধ করার পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা।
কচু শাক কাটার নিয়মঃ
- কচু শাক কাটতে গেলে হাত চুলকাবে, এটাই স্বাভাবিক। হাত যাতে না চুলকায় তার জন্য কিছু পন্থা অবলম্বন করতে হবে। সবচেয়ে ভালো হয় যদি কিচেন গ্লাভস পড়ে কচু শাক কাটেন। হাত চুলকাবেও না আবার কাটবেও না৷ গ্লাভস না থাকলে হাতে বেশ খানিকটা সরিষার তেল মেখে নেবেন।
- অনেকেই কচুর শাক জলে অনেকক্ষণ ভিজিয়ে রাখেন ভালো পরিষ্কার করার জন্য। এটা সম্পূর্ণ ভুল একটা পদ্ধতি। জলে বেশীক্ষণ ভিজিয়ে রাখলেই তা আরো বেশী চুলকানির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তাই বাজার থেকে এনে ফেলে রাখবেন না। যত দ্রুত সম্ভব ময়লা ছাড়িয়ে, টুকরা করে কেটে, ঝাঁঝরিতে করে ধুয়ে নেবেন।
- কচু শাক কাটার পরে হাত চুলকালে লবণ দিয়ে হাত ধুয়ে নিন। তারপর হাত মুছে পেট্রোলিয়াম জেলি বা লোশন দিয়ে হাত মাসাজ করুন। চুলকানি আস্তে আস্তে কমে যাবে। বেশী চুলকানি হলে জেলি বা লোশনের পরিবর্তে নারকেল তেল ব্যবহার করবেন।
- বিকল্প হিসেবে হাতে শুধু লেবু ঘষতে পারেন। এতে চুলকানি ও কালো দাগ দুটোই চলে যাবে। তেঁতুলের জল, লেবুর রস মেশানো জল, বা ভিনেগারে হাত কিছুক্ষণ ডুবিয়ে রাখলেও চুলকানি কমবে।
কচু শাক রান্না করার সঠিক নিয়মঃ
- কচু শাক ভেজে খাওয়া যায়, মাছ বা মাছের মাথা দিয়ে রান্না করা যায়, অথবা স্যুপ বা স্ট্যু-তেও দেওয়া যায়। যেভাবেই রান্না করুন না কেন, সবার আগে নিশ্চিত করতে হবে শাকে যেন কোন অস্বস্তি না হয়। যেহেতু শাকটা কচুর, সেহেতু গলা চুলকানো বা গলা ধরার চান্স কিছুটা হলেও আছে।
- রান্নার আগে কচু শাক সিদ্ধ করে বা ভাপিয়ে নিলে গলা ধরবে না। যখন রান্না করবেন তখন খানিকটা লেবুর রস বা তেঁতুল দিয়ে দেবেন। অথবা ভাতে লেবু খাবেন। এভাবে রান্না করলে গলা চুলকানো বা ফুলে যাওয়ার সমস্যা একদমই থাকবে না।
- কচু বা কচু শাকের গায়ে লেগে থাকা অক্সালেটের কারণে শরীরে অস্বস্তি হয়। তাপের সংস্পর্শে আসলে এই বিষাক্ত যৌগ শাকের গা থেকে খুলে যায়। তাই কচু শাক এনে প্রথমে আঁশ-ময়লা ছাড়িয়ে স্ট্যান্ডার্ড সাইজে কেটে নিন। ভালো করে ধুয়ে জল ঝরিয়ে কমপক্ষে ২০-২৫ মিনিট সেদ্ধ করুন।
- তবে জল ঝরিয়েই সাথে সাথে সেদ্ধ না করলেই ভালো। নর্মাল তাপমাত্রার জল চাইতে ফুটন্ত গরম জল ব্যবহার করলে শাকের অক্সালেট দ্রুত গলে যায়। চুলায় জলে যখন বলক আসবে তখন কচু শাক দিয়ে সেদ্ধ করে নেবেন।
- এক্সপার্টরা পরামর্শ দেন সেদ্ধ করার সময়ে লবণ যোগ করার জন্য। এক পাউন্ড কচু শাক টুকরা করে কেটে, ধুয়ে ২ কাপ জল এবং ১ চা চামচ লবণ দিয়ে মোট ৩০ মিনিট সেদ্ধ করতে হবে। এই ৩০ মিনিটের মধ্যে প্রথম ১০ মিনিট চুলার আঁচ থাকবে হাই, পরের ১০ মিনিট থাকবে মিডিয়াম, এবং শেষের ১০ মিনিট আঁচ থাকবে লো।
- চাইলে কচু এবং এর শাক একসাথে সেদ্ধ করতে পারেন। প্রথমে কচু মাঝারি আঁচে ১০ থেকে ১৫ মিনিট সেদ্ধ করুন। এরপর কচুর জল ফেলে দিন। তারপরে সেদ্ধ কচুর সাথে কচুর শাক যোগ করে আরো ১০-১৫ মিনিট সেদ্ধ করুন। তবে শাক নরম না হলে আরো ৫-১০ মিনিট বেশী সেদ্ধ করবেন।
- আরেকটা পদ্ধতি হচ্ছে দুইবার করে কচু শাক সেদ্ধ করা। এই পদ্ধতিতে মাঝখানে একবার জল বদলাতে হবে এবং মোট ৪৫ মিনিট ধরে সেদ্ধ করতে হবে। এভাবে সেদ্ধ করলে কচু শাক তেল-মশলা ছাড়া এমনিই খাওয়া যাবে।
- শাক সুসেদ্ধ না হলে গলা ও মুখে চুলকানি, ফোলাভাব অনুভূত হবে। এমনকি শ্বাসকষ্ট পর্যন্ত হতে পারে। কাজেই এমন সমস্যা এড়ানোর জন্য কচু শাক ভালোমতো সেদ্ধ করার পাশাপাশি রান্নায় টক ব্যবহার করবেন।