ডাইনিং টেবিলের বেশ কিছু এটিকেট আছে যা বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে পালন করা বাধ্যতামূলক। বড় কোন কর্পোরেট অনুষ্ঠানে সব ধরণের খাবার এক স্টাইলে খাওয়া চলে না। প্রতিটা খাবার খাওয়ার জন্য আলাদা আলাদা স্টাইল ফলো করতে হয়। আমরা অনেকেই স্যুপ খাওয়ার সঠিক নিয়ম সম্পর্কে জানি না। যার কারণে জনসমাগমে প্রায়ই বিভ্রান্তির শিকার হতে হয়। আজকে আলোচনা করবো স্যুপ কিভাবে খাওয়া উচিত তা নিয়ে।
ক. স্যুপ খাওয়ার সঠিক নিয়মঃ
ঘরে একা বা সবার সাথে যেভাবে ইচ্ছে সেভাবে স্যুপ খেতে পারেন। কিন্তু ফর্মাল পরিবেশে বা রেঁস্তোরায় স্যুপ খেতে হলে নিচের এই ৫টি স্টেপ মেনে চলবেন। এতে বেকায়দায় পড়তে হবে না এবং আশেপাশের মানুষের সামনে নিজের ব্যক্তিত্ব বজায় থাকবে।
স্টেপ ১ – টেবিলের সাথে সঠিক দূরত্ব বজায় রাখুনঃ
যখন ফর্মাল কোন পরিবেশে স্যুপ খাবেন তখন টেবিলের সাথে নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে বসবেন। টেবিল আর শরীরের দূরত্ব কমপক্ষে ৫ ইঞ্চি থাকতে হবে। বসার সময়ে ন্যাপকিন ফোল্ড করে পায়ের উপর রাখবেন। আর যখন স্যুপ খাবেন তখন খুব বেশি ঝুঁকবেন না। চামচটা নিজের দিকে নিবেন ৭০%, আর সামনে ঝুঁকবেন ৩০%।
স্টেপ ২ – গরম স্যুপ ঠান্ডা হতে দিনঃ
যখন আপনাকে গরম স্যুপ পরিবেশন করা হবে তখন সেটা ঠান্ডা না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। চামচ দিয়ে নেড়ে বা ফুঁ দিয়ে ঠান্ডা করতে যাবেন না। নিজে নিজে ঠান্ডা করতে গেলে স্যুপ ছিটকে বাইরে পড়তে পারে।
স্টেপ ৩ – স্যুপের চামচের ব্যবহারঃ
আমরা সাধারণত তরল খাবার খাওয়ার সময়ে চামচ নিজের দিকে উঠাই। এতে লিকুইড ছিটকে কাপড়ে পড়তে পারে। স্যুপ খাওয়ার সময় অবশ্যই চামচ সামনের দিকে উঠাতে হবে। তাহলে কাপড়ে স্যুপ পড়বে না।
চামচ উঠানোর সময়ে স্যুপের বাটির কিনারে ঘেঁষে নিতে হবে। এতে চামচের নিচে লেগে থাকা স্যুপ ফোঁটায় ফোঁটায় বাইরে পড়বে না।
খাওয়ার সময় বাটি থেকে কখনোই চামচ ভর্তি করে স্যুপ উঠাবেন না। চামচের তিন চতুর্থাংশ ভরে স্যুপ উঠাবেন। চামচ বেশি ভরা থাকলে কাপড়ে স্যুপ গড়িয়ে পড়তে পারে।
স্যুপের চামচ পুরোটা মুখে পুরবেন না। এটা দেখতে খুবই বাজে লাগে এবং এতে স্যুপ বাইরে পড়ার সম্ভাবনা থাকে। খাওয়ার সময় চামচের সাইড থেকে খেতে হবে।
স্টেপ ৪ – শব্দ করবেন নাঃ
বাটি থেকে চামচে করে স্যুপ উঠানোর সময় এবং খাওয়ার সময় কোন শব্দ করবেন না। অযথা চামচের টুংটাং বা মুখ দিয়ে শব্দ করলে সেটা দৃষ্টিকটু দেখায়। বিশেষ করে ফর্মাল পরিবেশে শব্দ করে স্যুপ খাওয়া তো একেবারেই বেমানান।
স্যুপ বেশি গরম কিনা বুঝতে বিনা শব্দে প্রথমে হালকা একটু চুমুক দিয়ে দেখবেন। গরম হলে ফুঁ দিয়ে ঠান্ডা করতে যাবেন না, অপেক্ষা করুন।
স্টেপ ৫ – স্যুপ খাওয়া শেষে করণীয়ঃ
শেষের দিকে যখন বাটিতে সামান্য স্যুপ অবশিষ্ট থাকবে তখন বাটিটা সাইডের দিকে সামান্য কাত করে চামচ দিয়ে উঠাবেন। এখানেও খেয়াল রাখবেন যাতে বাটি-চামচে জোরালো শব্দ তৈরি না হয়।
অবশিষ্ট স্যুপ ওঠানোর পরে বাটিটা সোজা করে নিন। এরপরে বাটি নীচে রেখে বাকি স্যুপটা খাবেন যাতে স্যুপ গড়িয়ে পড়লে বাটিতেই পড়ে।
স্যুপ খাওয়া শেষে চামচটা বাটির সাথে থাকা প্লেটে রাখবেন। খাওয়ার মাঝখানে কোন কারণে বিরতি দিতে হলেও চামচ বাটিতে না রেখে প্লেটে রাখা ভালো। রাখার সময় প্লেটের ডানদিকে রাখতে হবে চামচ। যদি বাটিতে চামচ রাখেন তাহলে চামচের হাতল ডানদিকে পয়েন্ট করে রাখতে হবে।
খ. স্যুপ খাওয়ার সঠিক নিয়ম – ডায়েট অনুসারেঃ
আপনি চাইলে প্রতিদিনই স্যুপ খেতে পারেন। তবে খেয়াল রাখবেন এটা যেন আপনার প্রতিদিনকার ব্যালেন্সড ডায়েটে কোন ব্যাঘাত না ঘটায়। সলিড কিছু খাওয়ার আগে স্যুপ খেলে পেট অনেকটা ভরে যায়। পরবর্তীতে বেশী খাওয়ার দরকার পড়ে না। তাই ওজন কমানো সহজ হয়ে যায়। প্রতিবেলায় স্যুপ খাওয়ার চাইতে যেকোন এক বেলা খেলে ভালো হয়।
গ. স্যুপ খাওয়ার অপকারিতাঃ
- তবে স্যুপ খাওয়ার কিছু অপকারিতাও আছে। পাতলা স্যুপ বেশীক্ষণ পেটে থাকে না। ফলে দ্রুতই খিদে পায় এবং পুনরায় খাওয়ার দরকার পড়ে। এতে ওজন বেড়ে যায়৷ তবে ঘন স্যুপ অনেকক্ষণ পেটে থাকে।
- স্যুপ একটি জলীয় খাবার, তাই প্রয়োজনের চাইতে বেশী খেলে শরীরে জল জমে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। আবার স্যুপে সোডিয়ামের আধিক্য থাকার কারণে উচ্চ রক্তচাপ, কিডনী রোগ, এবং হৃদরোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
- আমাদের দাঁত শক্ত খাবার পেষণ করে পাকস্থলীতে পাঠায়। আবার পাকস্থলী সেই খাবার থেকে পুষ্টি ভেঙ্গে শরীরে শক্তির যোগান দেয়। স্যুপ বা অন্য কোন তরল খাবার খেলে স্বাভাবিকভাবেই দাঁত, চোয়াল, এবং পাকস্থলীর উপর প্রেসার কম পড়ে। ঘন ঘন তরল খাবার খেলে এই অর্গ্যানগুলোর কর্মক্ষমতা কমে যায়।