প্রতিদিনের রান্নায় লঙ্কা লাগেই৷ ভোজন রসিক বাঙালিরা পাতে লঙ্কা-লেবু-নুন ছাড়া আবার খেতে পারেন না। ঝাঁজালো এই খাবারটির পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা দুটোই অনেক। তো লঙ্কা যখন এতোই গুরুত্বপূর্ণ, তখন এটি প্রতিদিন হাতের কাছে থাকলে মন্দ হয় না।
বাজার থেকে সবসময় ভালো লঙ্কা পাওয়া যায় না। কেমন হয় যদি বাড়িতেই সারাবছর লঙ্কার চাষ করা যায়? আজকের লেখা থেকে জানতে পারবেন মাত্র তিনটি ধাপে বাড়িতে টবে সবচেয়ে কম সময়ে বারো মাস লঙ্কা চাষ করার পদ্ধতি।
ধাপ ১ – পরিবেশ ও টব নির্বাচন করুনঃ
বাড়িতে টবে লঙ্কা চাষ করার জন্য সবার আগে পরিবেশ ও টবের ব্যাপারগুলো মাথায় রাখা উচিত। লঙ্কা বারো মাস চাষ করার মতোই ফসল। কিন্তু এমনিতে গরমের সময়টা লঙ্কা চাষের জন্য উৎকৃষ্ট৷ গ্রীষ্ম ও বর্ষাতে বীজ বপন করা যাবে ও চারা বৃদ্ধি হবে। কিন্তু ফল পাকার সময়ে আবহাওয়া শুকনো থাকা দরকার।
অতিরিক্ত গরমে লঙ্কার ফলন ভালো হয় কিন্তু এর রং ও ঝাঁজ কমে যায়। আবার ফুল ও ফল ধরার সময়ে যদি অতিরিক্ত বৃষ্টি হয় তাহলে ফুল ও ফল ঝরে যায়। জল জমে গাছ পঁচে যায়। তাই খুব গরম বা খুব বৃষ্টির সময়ে লঙ্কা গাছ লাগানো যাবে না। তাপমাত্রা ২০° থেকে ২৫° সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে ফলনও ভালো হবে গাছেরও কোন ক্ষতি হবে না।
সূর্যের আলো পর্যাপ্ত পাওয়া যাবে এমন জায়গায় টব রাখতে হবে। হালকা ছায়াযুক্ত স্থানে রাখলেও সমস্যা নেই। তবে বেশি ছায়া হলে গাছের জন্য খারাপ হবে। আলো, বাতাস যথেষ্ট আছে এমন জায়গা টব রাখলে লঙ্কা গাছ দাঁড়িয়ে যাবে ভালোভাবে।
এবারে আসি টবের ব্যাপারে। মাঝারি সাইজের মাটির বা প্লাস্টিকের টব যথেষ্ট। চাইলে রান্নাঘরে থাকা মাঝারি সাইজের পাত্রও ব্যবহার করতে পারেন। তবে টবটি যদি বাজারের না হয় তাহলে ড্রিল মেশিন দিয়ে টবের নিচে একটি ফুটো করে নিবেন যাতে জল নিষ্কাশিত হয়।
টব তৈরি হয়ে গেলে বেডিং তৈরি করে নিবেন এবং তারপরে মাটি দেবেন। বেডিংয়ের জন্য যেকোন ভাঙা মাটির পাত্রের ছোট একটি টুকরা নিন। টুকরাটার যেদিক ঢেউ খেলানো সেদিকটা নিচে রেখে টবের ছিদ্রের উপর বসিয়ে দিন। ভাঙা টুকরাটা প্রথমে অল্প স্টোন চিপস দিয়ে এবং পরে অল্প বালি দিয়ে ঢেকে দিন। এতে পানির সাথে মাটি বেরিয়ে যাবে না এবং টবে জল জমে থাকবে না।
ধাপ ২ – মাটি তৈরি করুনঃ
বেলে মাটি ও দোআঁশ মাটি আদর্শ লঙ্কা গাছ লাগানোর জন্য। যখন টবে মাটি দিবেন তখন পরিমাণমতো জৈব সার (সবজির উচ্ছিষ্ট), গোবর সার, এবং ইউরিয়া সার মিশিয়ে দিবেন। কতটুকু দিতে হবে তা অভিজ্ঞ কারো কাছ থেকে জেনে নিবেন। মাটি তৈরি করার এক সপ্তাহ পরে নার্সারি থেকে কিনে আনা চারাগাছ বা বীজ পুতে দিবেন। এতে মাটিতে সারের পুষ্টিগুণ মেশার সুযোগ পাবে।
গাছ বা বীজ পোতার আগে মাটি তৈরিতে যতোটুকু যত্ন দরকার, গাছ লাগানোর পরে তার চাইতেও বেশি যত্ন দরকার। মাটি পর্যাপ্ত খাদ্য না পেলে গাছ দ্রুত মরে যাবে। তাই ইউরিয়া সার, পটাশ সার, এবং ম্যাগনেসিয়াম সালফেট প্রতিটি ১ টেবিল চামচ করে মিশিয়ে নিন। এই মিশ্রণ প্রতি ১৫ দিন পরপর মাটির চারদিকে ঢেলে জল দিয়ে দেবেন।
ধাপ ৩ – গাছের পরিচর্যা করুনঃ
মাটির খাদ্য সম্পর্কে জানলেন, কিন্তু গাছের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিতের জন্য কি করবেন? তারও সমাধান আছে। যেকোন সারের দোকানে গিয়ে ভিটামিন লিকুইডের খোঁজ করুন। কেনার সময়ে দেখবেন প্যাকেটের গায়ে গ্রোথ রেগুলেটর উল্লেখ করা আছে কিনা। ১ লিটার জলে ৩০ ফোঁটা ভিটামিন লিকুইড মিশিয়ে প্রতি ১০ দিন পরপর গাছে স্প্রে করবেন। এতে পাতা কুঁকড়ে যাবে না ও ফুল ঝরে পড়বে না। গাছও বাড়বে তরতরিয়ে।
লঙ্কা গাছে পিঁপড়ার আক্রমণ ঠেকাতে অল্প পরিমাণে সাবান গুঁড়া টবের মাটিতে ছড়িয়ে দিন। অন্যান্য পোকার উপদ্রব কমাতে রোগোটপ্লাস বা ক্যারিনা ব্যবহার করবেন। দুটির যেকোন একটি থেকে ৩০ ফোঁটা পরিমাণ ওষুধ ১ লিটার জলে মেশাবেন। তারপর এই জল প্রতি ১০ দিন পরপর গাছে স্প্রে করবেন। ব্যস পোকামাকড় আর লঙ্কা গাছের ধারেকাছেও ঘেঁষবে না।
গাছে জল দেওয়ার সময়ে সাবধান। জল এমনভাবে দিতে হবে যাতে টবে জল জমে না থাকে আবার মাটি শুকিয়ে না থাকে। সঠিকভাবে পানি দিতে পারলে পাতা পঁচা, মূল পঁচা, বা ফল পঁচার মতো রোগ কিছুটা দমন করা সম্ভব।
শেষ কথাঃ
এই তিনটি ধাপ মেনে টবে লঙ্কা গাছ লাগালে দুই দফায় গাছ থেকে ৫০-৮০ টি লঙ্কা পাওয়ার সম্ভাবনা থাকবে। আর এই পদ্ধতিতে সময়ও লাগে অনেক কম। ধরে নিলাম জায়গা ঠিক করা এবং টব ও মাটি প্রস্তুত করতে সর্বোচ্চ ৩০ মিনিট থেকে ১ ঘন্টা লাগতে পারে। এরপরে প্রতি ১০-১৫ দিন পরপর গাছে ওষুধ ব্যবহারে ১০ থেকে ১৫ মিনিটের বেশি লাগার কথা না।
দেখলেন কতো কম সময়ে বাড়ির টবে বারো মাস লঙ্কা চাষ করে খেতে পারবেন! তাহলে আর বাজার থেকে লঙ্কা কেনার ঝামেলা কেন? এখন বাড়িতেই পাবেন তরতাজা ঝাঁজালো লঙ্কা।
Ok