skip to content
CurryNaari
Welcome to Nandini’s world of cooking & more...

প্রতিদিন কাঁচা হলুদ খাওয়ার ৫০ টি উপকারিতা

কাঁচা হলুদ

বাঙালীর হেঁশেলে তো বটেই, শুধু বাঙালীই বা কেন, গোটা ভারত, বা বলা ভালো প্রায় গোটা এশিয়ার রান্নাতেই হলুদ একটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও জরুরী উপাদান। হলুদ রান্নায় রঙ তো আনেই, তাছাড়া স্বাদ বা যাকে আমরা বলি ‘ফ্লেভার’ তার ক্ষেত্রেও হলুদ খুবই প্রয়োজনীয় একটা জিনিস। তবে শুধু রান্নার কাজেই নয়, হলুদের আরও অনেক গুণই আছে, যার বেশীরভাগই আমাদের কাছে অজানা। আমাদের দোষ নয় যে আমরা সারাজীবন হলুদের দুটি মৌলিক ব্যবহার সম্পর্কে জেনে থাকি। একটি তরকারিতে মসলা হিসেবে ব্যবহার আর একটি তাত্ক্ষণিক আভা পেতে বড় অনুষ্ঠানের আগে মুখে লাগানো। যাইহোক, হলুদের আরও অনেক কিছু করতে পারে। এই সোনালি মসলা খাওয়ার সাথে অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতা জড়িত। বিশেষ করে কাঁচা হলুদ প্রতিদিন খাওয়ার উপকারিতা।

রান্নায় হলুদ সাধারণত গুঁড়ো মসলা আকারেই ব্যবহার করা হলেও কাঁচা হলুদও নানা কাজে ব্যবহৃত হয়। আর কাঁচা হলুদের উপকারিতাও মারাত্মক। কাঁচা হলুদের অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল, অ্যান্টি-ভাইরাল, অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট, অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি ইত্যাদি নানা গুণ থাকায় হলুদ বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায়, বিশেষত আয়ুর্বেদিক ওষুধপত্র তৈরিতে কাজে লাগে। ১ আউন্স বা প্রায় ২৮ গ্রাম হলুদ আমাদের শরীরে দৈনিক যে ম্যাঙ্গানীজ প্রয়োজন হয়, তার প্রায় ২৬ শতাংশই যোগান দেয়। এছাড়া রোজকার চাহিদার প্রায় ১৬ শতাংশ লোহা বা আয়রনের যোগানও ওই মাত্র ২৮ গ্রাম হলুদ থেকেই আসে।

কাঁচা হলুদ খাওয়া কেন জরুরিঃ

এখানে হলুদের ৫০ টি উপকারিতা রয়েছে যা এটি প্রতিদিন খাওয়ার জন্য বাধ্যতামূলক করে তোলে –

১. বাতের ব্যথা থেকে মুক্তি দেয়ঃ

হলুদের প্রদাহ-বিরোধী বৈশিষ্ট্য আয়ুর্বেদে রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস এবং অস্টিওআর্থারাইটিসের চিকিৎসায় সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে। এই মসলায় উপস্থিত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরের কোষের ক্ষতিকারী ফ্রি র‌্যাডিক্যাল ধ্বংস করতে কাজ করে। সুতরাং, দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহজনিত রোগ বা জয়েন্টের ব্যথায় প্রতিদিন কাঁচা হলুদ খাওয়া উচিত। এটি ব্যথা কমিয়ে উপশম দেবে।

২. কাঁচা হলুদ খাদ্য সংক্রমণ থেকে বাঁচতেঃ

হলুদে থাকা কারকিউমিনের অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি ও অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট উপাদান থাকায় তা বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ থেকে খাদ্যনালীকে বাঁচায়। আমরা রোজ যে খাবার খাই, তার মধ্যে অনেকসময়ই নানা জীবাণু থেকে যেতে পারে। খাবারে কাঁচা হলুদ বা হলুদ গুঁড়ো ব্যবহার করলে তা খাদ্যনালীকে ক্ষতিকারক জীবাণুর সংক্রমণ থেকে বাঁচায় ও খাদ্যনালীর প্রদাহের সম্ভাবনা কমায়। হলুদে থাকা কারকিউমিন নানাভাবে আরথ্রাইটিসের হাত থেকে আমাদের বাঁচায়। কাঁচা হলুদ অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি এজেন্ট হিসেবে কাজ করে ও তা হাড়ের কোষকে রক্ষা করে। ফলে যারা রিউম্যাটয়েড আরথ্রাইটিসে ভোগেন, দেখা গেছে সাধারণ ফিজিওথেরাপির থেকে তাঁরা যদি নিয়ম করে কাঁচা হলুদ খান, তাহলে তা ব্যথা কমায় ও হাড়ের জয়েন্টের মুভমেন্টে অনেক সাহায্য করে।

৩. হাড় জোড়া লাগাতেঃ

বহু প্রাচীনকাল থেকেই কাঁচা হলুদকে হাড়ের নানারকম রোগের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়। হাত বা পা মচকে গেলে চুন-হলুদ লাগানোর কথা তো আমরা সবাইই জানি। এছাড়া কাঁচা হলুদ বেটে ভাঙ্গা হাড়ের জায়গায় লাগালে তা উপকার দেয়। দুধে কাঁচা হলুদ দিয়ে খেলেও তা এক্ষেত্রে উপকার দেয়। হলুদের অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি গুণ ব্যথা, প্রদাহকে কমায় এবং হাড়ের টিস্যুগুলিকে রক্ষা করে ও ভাঙ্গা হাড় জোড়া লাগতে সাহায্য করে।

৪. হাড়ের ক্ষয় রোধেঃ

কাঁচা হলুদে থাকা কারকিউমিন হাড়ের ক্ষয় ও হাড়ের গঠনের মধ্যে সামঞ্জস্য বজায় রাখে ও হাড়কে সুস্থ ও মজবুত রাখে। মেনোপজের সময় মহিলাদের যে হাড়ের ক্ষয় হয়, তা থেকেও কাঁচা হলুদ আমাদের বাঁচায়।

৫. ট্রমাটিক ডিসঅর্ডার কমাতেঃ

ট্রমাটিক ডিসঅর্ডারের ক্ষেত্রে যেসমস্ত খারাপ, ভীতিজনক স্মৃতি থাকে, হলুদে থাকা কারকিউমিন তা কমাতে সাহায্য করে। এছাড়া কাঁচা হলুদের অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি গুণ স্ট্রেস বা চাপ, উদ্বেগ থেকে আমাদের মুক্তি দেয়।

৬. কাঁচা হলুদ ডায়াবেটিসেঃ

হলুদ ও হলুদে থাকা কারকিউমিন অ্যান্টি-ডায়াবেটিক এজেন্ট হিসেবে কাজ করে ও রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। এছাড়া কাঁচা হলুদ ইনসুলিন হরমোনের ক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে ও অগ্ন্যাশয়কে সুস্থ রাখে।

৭. ত্বকের বয়স কমাতেঃ

কাঁচা হলুদ বহু প্রাচীনকাল থেকেই ত্বকের ঔজ্জ্বল্য রক্ষা করতে ও ত্বকের বয়স কমায়। তাই বিভিন্ন ক্রিমের প্রয়োজনীয় উপাদান হিসেবে হলুদ ব্যবহার করা হয়। ত্বকের বিভিন্ন দাগ, রিঙ্কল ও সান ট্যান থেকে ত্বককে রক্ষা করার জন্য কাঁচা হলুদের পেস্ট ঘরেই তৈরি করে মুখে লাগানো যেতে পারে। হলুদে থাকা কারকিউমিনের অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট গুণ ত্বককে বয়সের ছাপ থেকে বাঁচায়।

৮. কাঁচা হলুদ ক্যান্সার দূর করতেঃ

কাঁচা হলুদে থাকা কারকিউমিন ক্যান্সার দূর করতে সহায়তা করে। কারকিউমিন ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি বন্ধ করে তাদের মৃত্যু ঘটায়। ফলে ক্যান্সারের সম্ভাবনা হ্রাস পায়। বিভিন্ন স্টাডি থেকে জানা গেছে প্রায় ৫৬ রকম ক্যান্সারের সম্ভাবনা কাঁচা হলুদ রোজ নিয়মিত খেলে কমে। সম্ভাব্যভাবে ক্যান্সার কোষ ধ্বংস করতে পারে এবং টিউমারকে সঙ্কুচিত করতে পারে। ক্যান্সার রোগীদের জন্য, এটি কেমোথেরাপির প্রভাবের পরিপূরক।

৯. নিরাময়ের বৈশিষ্ট্য রয়েছেঃ

হলুদের প্রাকৃতিক অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টিসেপটিক বৈশিষ্ট্য এটিকে একটি কার্যকর জীবাণুনাশক করে তোলে। ক্ষত নিরাময়ের জন্য হলুদ ব্যবহার করে দেখুন। এক গ্লাস উষ্ণ দুধে হলুদের গুঁড়ো মিশিয়ে পান করুন। এটি ক্ষত বা সংক্রমণ দ্রুত নিরাময় করতে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করবে।

১০. বিষণ্ণ মনমরা ভাব কাটাতেঃ

কাঁচা হলুদের অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট গুণ আমাদের বিষণ্ণ মনমরা ভাব, বদমেজাজ, ডিপ্রেশন কাটিয়ে মনকে চনমনে করে তুলতে সাহায্য করে।

১১. কাঁচা হলুদ স্ট্রোকের পরেঃ

নিয়ম করে কাঁচা হলুদ খাওয়া আমাদের স্ট্রোকের সম্ভাবনাকে এক ধাক্কায় অনেকটা কমিয়ে দিতে পারে। এছাড়া কাঁচা হলুদের অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট ও অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি গুণ স্ট্রোকের পরবর্তী চিকিৎসাতেও অনেক উপকার দেয়। কাঁচা হলুদ হার্টকেও বিভিন্ন ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে। এছাড়া অপারেশনের পরে যে হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা থাকে, তাকেও কাঁচা হলুদ কমাতে সাহায্য করে।

১২. দাঁতের ক্ষয় রোধ করতেঃ

কাঁচা হলুদ দাঁতের ওপরে থাকা এনামেলের আস্তরণকে রক্ষা করে ও দাঁতের ক্ষয় থেকে দাঁতকে বাঁচায়। হলুদের অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল গুণাবলী থাকায় তা জীবাণুকে থেকেও দাঁতকে রক্ষা করে। তাই অনেকসময় বিভিন্ন টুথপেস্টে হলুদকে আবশ্যকীয় উপাদান হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এছাড়া মাড়ি থেকে রক্ত পড়া কমাতে ও মুখের ভেতরে ক্ষত সারাতে কাঁচা হলুদ নিয়ম করে খাওয়া যেতে পারে।

১৩. হলুদ ওজন কমাতেঃ

কাঁচা হলুদের অ্যান্টি-ওবেসিটি প্রপার্টি থাকায় নিয়ম করে কাঁচা হলুদ খেলে তা শরীরে মেদ জমতে বাধা দেয় ও মেটাবলিজমের হার বাড়ায়।

১৪. কাঁচা হলুদ সর্দিকাশিতেঃ

হলুদে থাকা কারকিউমিন ইনফ্লুয়েঞ্জা, সর্দিকাশি কমাতে সাহায্য করে। এছাড়া কাঁচা হলুদ আমাদের শরীরের ইমিউনিটি বা অনাক্রম্যতা বাড়ায় ও সর্দিকাশি থেকে আরাম দেয়। কাঁচা হলুদে থাকা ভিটামিন সি-ও সর্দিকাশি কমাতে সাহায্য করে।

১৫. রান্নার তেলের অক্সিডেশন কমাতেঃ

উঁচু তাপমাত্রায় রান্না করার ফলে রান্নার তেলের যে অক্সিডেশন বা জারণ প্রক্রিয়া শুরু হয় তার ফলে অনেক ক্ষতিকারক পদার্থ উৎপন্ন হয় যা ক্যান্সার ও ফাইব্রোসিস ডেকে আনতে পারে। তাই কাঁচা হলুদের পেস্ট করে বা হলুদ গুঁড়ো দিয়ে রান্নার জিনিস মেখে রাখার পর তারপর তা দিয়ে রান্না করলে তা রান্নার তেলের অক্সিডেশন কমায় ও আমাদের ক্যান্সারের সম্ভাবনাকেও কমায়।

১৬. তলপেটে ব্যথা কমাতেঃ

কাঁচা হলুদের অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি গুণ আমাদের তলপেটে ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।

১৭. কাঁচা হলুদ অ্যানিমিয়া কমাতেঃ

কাঁচা হলুদের মধ্যে অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট গুণ থাকায় তা অ্যানিমিয়ার হাত থেকে আমাদের বাঁচায়। মেয়েদের সাধারণত অ্যানিমিয়া হওয়ার প্রবণতা দেখা যায়, তাই তাদের পক্ষে কাঁচা হলুদ নিয়ম করে খাওয়া খুবই উপকারী। এছাড়া হলুদে থাকা কারকিউমিন লোহিত রক্তকণিকাকে রক্ষা করে। হলুদে প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকায় তা রক্তে আয়রনের ঘাটতিকেও মেটাতে সাহায্য করে।

১৮. কাঁচা হলুদ অ্যালজাইমারেঃ

অ্যালজাইমার সারা পৃথিবীতেই এখন মারাত্মক রোগের আকার ধারণ করেছে। হলুদে থাকা কারকিউমিন অ্যালজাইমারের চিকিৎসায় সাহায্য করে। হলুদের  অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি, অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট গুণ, স্মৃতিকে রক্ষা করার ক্ষমতা অ্যালজাইমারের চিকিৎসায় কাজে লাগে। দেখা গেছে নিয়ম করে কাঁচা হলুদ খেলে তা এই রোগের সম্ভাবনাকে অনেকটাই কমায়।

১৯. হাঁপানিতেঃ

হলুদে থাকা কারকিউমিন শ্বাসনালীর পথে থাকা বাধাকে দূর করে ও শ্বাস নেবার ক্ষমতা বাড়ায়। ফলে হাঁপানি থাকলে নিয়ম করে কাঁচা হলুদ খেয়ে দেখুন, সহজে উপকার পাবেন।

২০. হেপাটাইটিসে হলুদঃ

হেপাটাইটিসের ফলে আমাদের যকৃতের প্রদাহ হয়। কাঁচা হলুদের অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি ও অ্যান্টি-ভাইরাল গুণ হেপাটাইটিসের সময় যকৃতের প্রদাহ থেকে আমাদের বাঁচায়। এছাড়া হেপাটাইটিস ভাইরাসের থেকেও হলুদ আমাদের রক্ষা করে। কাঁচা হলুদ নিয়ম করে খেলে তা যকৃতকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে ও যকৃতের স্বাভাবিক কাজকে বজায় রাখতে সাহায্য করে।

২১. থাইরয়েডের হাত থেকে বাঁচতেঃ

নিয়ম করে কাঁচা হলুদ খাওয়া আমাদের গলগণ্ডের সম্ভাবনাকে কমায়। এছাড়া থাইরয়েডের প্রদাহ থেকে বাঁচতে হলুদে থাকা কারকিউমিন আমাদের সাহায্য করে।

২২. মেনোপজের সময়েঃ

হলুদ গাছকে ফাইটো-ইস্ট্রোজেন বা ইস্ট্রোজেন হরমোনের উদ্ভিজ্জ উৎস বলা হয়। ইস্ট্রোজেন মেয়েদের দেহে থাকা একটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হরমোন। কাঁচা হলুদের ব্যথা কমানোর ক্ষমতা, অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি, অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট গুণ ডিপ্রেশন কাটানোর ক্ষমতা মেনোপজের সময় নানাভাবে সাহায্য করে।

২৩. মূত্রনালীর প্রদাহেঃ

বিভিন্ন রিসার্চ থেকে জানা গেছে হলুদে উপস্থিত কারকিউমিন মূত্রনালীর সংক্রমণ থেকে আমাদের বাঁচায়। তাছাড়া কাঁচা হলুদের অ্যান্টি-বায়োটিক ও অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল গুণ মূত্রনালীকে জীবাণুর হাত থেকে রক্ষা করে।

২৪. ক্ষত সারাতেঃ

কাঁচা হলুদ অ্যান্টি-বায়োটিক ও অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল গুণ বিভিন্ন ক্ষত তাড়াতাড়ি সারাতে সহায়তা করে ও ক্ষতের জায়গায় নতুন চামড়া জন্মাতে সাহায্য করে। অপারেশনের পরে ব্যথা কমাতে ও পোড়ার ক্ষত কমাতে কাঁচা হলুদ সাহায্য করে।

২৫. মস্তিস্কের বয়সজনিত সমস্যাতে ও স্মৃতিশক্তি বাড়াতেঃ

কাঁচা হলুদে থাকা কারকিউমিন মস্তিস্কে রক্ত চলাচলকে স্বাভাবিক রাখে ও বয়সজনিত সমস্যা থেকে মস্তিষ্ককে বাঁচায়। এছাড়া ‘মুড’ ঠিক রাখতে ও স্মৃতিশক্তি বাড়াতেও নিয়ম করে কাঁচা হলুদ খাওয়া আমাদের উপকার দেয়।

২৬. আঘাত থেকে ডি.এন.এ.-কে বাঁচাতেঃ

কাঁচা হলুদ ও হলুদে থাকা কারকিউমিনের জিনকে রক্ষা করার কিছু ক্ষমতা আছে। ফলে তা আমাদের ডি.এন.এ.-কে বিভিন্নভাবে আঘাত থেকে রক্ষা করে। ক্যান্সারের ফলে যেসমস্ত কোষের ডি.এন.এ. ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তাদের কাঁচা হলুদ কেমোথেরাপির উপাদানগুলির সাথে সংবেদনশীল করে তোলে। এছাড়া বিভিন্ন রিসার্চ থেকে জানা গেছে কাঁচা হলুদের পেস্ট বা এক্সট্র্যাক্ট কোষের ডি.এন.এ.-কে ৮০ শতাংশ রক্ষা করে।

২৭. ধাতব বিষক্রিয়ায়ঃ

ধাতু দ্বারা আমাদের শরীরে বিষক্রিয়া হলে কাঁচা হলুদ তা থেকে আমাদের বাঁচতে সাহায্য করে। সিসা, অ্যালুমিনিয়াম, পারদ, ক্যাডমিয়ামের থেকে শরীরে বিষক্রিয়া হলে কাঁচা হলুদ উপকার দেয়। খনি এলাকায় যেসমস্ত মানুষ বসবাস করেন, তাঁদের এই ধাতব বিষক্রিয়া থেকে বাঁচতে নিয়ম করে কাঁচা হলুদ খাওয়া উচিত।

২৮. অগ্ন্যাশয়কে সুস্থ রাখতেঃ

কাঁচা হলুদে থাকা কারকিউমিন ও অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি গুণ অগ্ন্যাশয়কে সুস্থ রাখে ও প্রদাহের হাত থেকে অগ্ন্যাশয়কে রক্ষা করে। এছাড়া অগ্ন্যাশয়ের ক্যান্সারের থেকেও নিয়ম করে কাঁচা হলুদ খেলে মুক্তি মেলে।

২৯. পেশীর টানেঃ

হলুদে থাকা কারকিউমিনের অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি গুণ বিভিন্ন পেশীর টানজনিত রোগ, যেমন আরথ্রাইটিস, অস্টিও-আরথ্রাইটিস, অষ্টিও-পোরোসিস প্রভৃতির প্রদাহ থেকে আমাদের মুক্তি দেয়। পেশীতন্তুর ক্ষয় থেকেও কাঁচা হলুদ আমাদের রক্ষা করে।

৩০. থ্যালাসেমিয়া দূর করতেঃ

কাঁচা হলুদে থাকা কারকিউমিন আমাদের শরীরে অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট ডিফেন্স গড়ে তোলে ও তার ফলে থ্যালাসেমিয়ার হাত থেকে আমাদের মুক্তি দেয়।

৩১. তামাক জাত ক্ষতি থেকে বাঁচতেঃ

ধূমপানের ফলে তামাক ও নিকোটিন আমাদের ফুসফুসের ক্ষতি করে। কাঁচা হলুদে থাকা কারকিউমিন ফুসফুসকে খানিকটা হলেও ক্ষতির হাত থেকে বাঁচায় ও ফুসফুসের প্রদাহ হ্রাস করে।

৩২. কাঁচা হলুদ যকৃত ঠিক রাখতেঃ

কাঁচা হলুদ নিয়ম করে খেলে আমাদের যকৃত সুস্থ থাকে ও গলব্লাডারের কাজও ঠিকঠাক হয়। এছাড়া যকৃতের প্রদাহ থেকে কাঁচা হলুদ আমাদের রক্ষা করে।

৩৩. মদ্যপান জনিত ক্ষতি থেকে বাঁচতেঃ

নিয়মিত মদ্যপানের ফলে যে গ্যাস্ট্রিকের প্রদাহ, মস্তিস্ক ও ফ্যাটি লিভার ডিসিস হয়, তার থেকে বাঁচতে কাঁচা হলুদ আমাদের সাহায্য করে। দেখা গেছে প্রায় ৭৮.৯ শতাংশ ফ্যাটি লিভার ডিসিস নিয়ম করে কাঁচা হলুদ খাবার ফলে কমে যায়।

৩৪. কোলেস্টেরল কমাতেঃ

বিভিন্ন রিসার্চে দেখা গেছে কাঁচা হলুদে থাকা কারকিউমিন মাত্র ১২ সপ্তাহেই কোলেস্টেরলকে একধাক্কায় অনেকটা কমিয়ে আনে। যারা কোলেস্টেরলের সমস্যায় ভুগছেন, নিয়ম করে ওষুধ খেতে হয়, তাঁরা এবার নিয়ম করে কাঁচা হলুদ খেয়ে দেখতে পারেন। উপকার পাবেন।

 ৩৫. রক্তচাপ কমাতেঃ

কাঁচা হলুদে থাকা কারকিউমিন আমাদের রক্তনালীকে উন্মুক্ত করে ও রক্ত চলাচলে বাধাকে দূর করে। ফলে রক্তচাপ কমায়।

৩৬. রক্তকে পরিশুদ্ধ রাখতেঃ

কাঁচা হলুদ রক্তকে পরিশুদ্ধ রাখতে সাহায্য করে ও রক্তকে পরিষ্কার রাখে। একারণে বহু প্রাচীনকাল থেকেই কাঁচা হলুদ বিভিন্ন আয়ুর্বেদিক ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়।

৩৭. পিরিয়ডসের সময়ঃ

পিরিয়ডসের আগে বা পিরিয়ডসের সময় পেটে ব্যথা যদি হয়, তাহলে নিয়ম করে কাঁচা হলুদ খান। কাঁচা হলুদের অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি গুণ পেট ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। এছাড়া পলি-সিস্টিক ওভারি থাকলেও কাঁচা হলুদ নিয়ম করে খেয়ে যান, উপকার পাবেন।

৩৮. কাঁচা হলুদ ব্রণ কমাতেঃ

কাঁচা হলুদের অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি ও অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল গুণ মুখে ব্রণকে কমায়। ব্রণ সমস্যার থেকে মুক্তি পাবার জন্য মুখে নিয়ম করে কাঁচা হলুদ পেস্ট করে মাখুন ও খান, দেখবেন তাড়াতাড়ি উপকার পাচ্ছেন।

৩৯. অ্যালার্জি রোধ করতেঃ

কাঁচা হলুদ অ্যান্টি-অ্যালার্জিক হিসেবে কাজ করে। ফলে ত্বক ও খাবারের থেকে অ্যালার্জির প্রবণতা থাকলে কাঁচা হলুদ সাহায্য করতে পারে।

৪০. বিভিন্ন ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থেকে বাঁচতেঃ

বিভিন্ন পেনকিলার খেলে যে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হয়, এছাড়া বিভিন্ন ওষুধের যে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থেকে আমাদের যকৃত, কিডনিকে কাঁচা হলুদ সুস্থ রাখে। এছাড়া কাঁচা হলুদ নিজেও অনেকসময় বিভিন্ন রোগের ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

৪১. অনাক্রম্যতা বাড়াতেঃ

কাঁচা হলুদ ভিটামিন ই-র থেকে ৫ থেকে ৮ গুণ ও ভিটামিন সি-র থেকে শক্তিশালী অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট। ফলে কাঁচা হলুদ নিয়ম করে খেলে তা আমাদের অনাক্রম্যতা বাড়ায় ও বিভিন্ন রোগের হাত থেকে বাঁচায়।

৪২. অনিদ্রা দূর করতেঃ

কাঁচা হলুদ মেশানো দুধ অ্যামাইনো অ্যাসিড ও ট্রিপটোফ্যান উৎপন্ন করে যা অনিদ্রা রোগের ওষুধ হিসেবে কাজ করে এবং শান্তিপূর্ণ ঘুমে সাহায্য করে।

৪৩. কাঁচা হলুদ মাথা ব্যথায়ঃ

কাঁচা হলুদ মস্তিস্কে মিউকাস চলাচলকে বাড়িয়ে তোলে। ফলে সাইনাসের সমস্যা ও অন্যান্য মাথা ধরা ও মাথা ব্যথা থেকে মুক্তি দেয়।

৪৪. কাঁচা হলুদ প্রজননেঃ

কাঁচা হলুদে থাকা ইস্ট্রোজেন হরমোন মেয়েদের প্রজননে সাহায্য করে। এছাড়া হরমোনের সমস্যার জন্যে যদি প্রেগন্যান্সিতে সমস্যা হয়, তাহলে নিয়ম করে কাঁচা হলুদ দুধে মিশিয়ে খান, উপকার পাবেন।

৪৫. বাচ্ছাদের লিউকেমিয়ার সম্ভাবনা কমাতেঃ

বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক পরীক্ষার ফলে জানা গেছে কাঁচা হলুদে থাকা কারকিউমিন ও অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট গুণ বাচ্ছাদের মধ্যে লিউকেমিয়ার সম্ভাবনাকে অনেকাংশেই কমায়।

৪৬. চুলের জন্যঃ

কাঁচা হলুদ খুশকির সমস্যা, চুল পড়ার সমস্যা, ইত্যাদির থেকেও আমাদের মুক্তি দেয়।

৪৮. খাদ্য পরিপাকে বা হজমে সাহায্য করেঃ

কাঁচা হলুদের মধ্যে গ্যাস্ট্রো-প্রটেক্টিভ কিছু গুণ থাকে যা খাবার পরিপাকে সাহায্য করে। ফলে হজমের গোলমাল, গ্যাসের সমস্যার ক্ষেত্রে কাঁচা হলুদ খুবই উপকার দেয়। কাঁচা হলুদের ব্যবহার বিপাককে বাড়িয়ে তুলতে পারে এবং হজমের ব্যাধিগুলি পরিচালনা করতে সহায়তা করতে পারে। এতে উপস্থিত যৌগগুলি লিভার দ্বারা উৎপাদিত পিত্ত নিঃসরণ করতে পিত্তথলিকে ট্রিগার করে – পিত্ত চর্বি প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে আরও দক্ষতার সাথে হজমে সহায়তা করে। হালদি গ্যাস এবং ফোলা উপসর্গ উপশম করতেও পরিচিত।

৪৯. লিভারের জন্য ভালোঃ

হলুদ অত্যাবশ্যকীয় এনজাইমগুলির উৎপাদন বাড়ায় যা লিভারে রক্তকে বিষাক্ত প্রক্রিয়াকরণ এবং হ্রাস করতে সাহায্য করে। এইভাবে, হলুদ রক্ত সঞ্চালন উন্নত করে লিভারের স্বাস্থ্যের উন্নতিতে সহায়ক।

৫০. মস্তিষ্কের জন্য ভালোঃ

হলুদে অ্যারোমেটিক টারমেরোন নামে পরিচিত একটি যৌগ থাকে, যা ক্ষতিগ্রস্ত মস্তিষ্কের স্টেম সেল মেরামত করে। এই স্টেম সেলগুলির ক্ষতি বিভিন্ন নিউরোডিজেনারেটিভ ডিসঅর্ডারের জন্য দায়ী, যেমন আলঝাইমার এবং স্ট্রোক। হলুদের দৈনিক ব্যবহার এই অবস্থার বিকাশের ঝুঁকি কমাতে পারে এবং স্মৃতিশক্তি উন্নত করতে পারে।

তাহলে আজ জেনে নিলেন কাঁচা হলুদের বিভিন্ন উপকারিতা। আজ থেকেই অভ্যেস করুন, সকালে উঠে খালি পেটে বেশ খানিকটা করে কাঁচা হলুদ নিয়ম করে খান। দেখবেন অনেক সমস্যা ও রোগের হাত থেকে মুক্তি পেয়েছেন। অনেক রোগের সম্ভাবনাকেও কমাতে পেরেছেন। তাই সুস্থ্য থাকতে ও সুস্থ্য ভাবে বাঁচতে রোজ কাঁচা হলুদ খান।

দ্রষ্টব্য: এই প্রতিবেদন একটি শিক্ষামূলক তথ্য। কাঁচা হলুদ কতটা পরিমানে খাবেন, রোজ খেতে পারবেন কিনা, আগে থেকে কোন সমস্যা যদি থাকে খাওয়া উচিত কিনা এসব হলুদ খাওয়ার আগে আপনার ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে তবেই খাবেন।

Visual Stories

Article Tags:
Article Categories:
Lifestyle

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

মুখরোচক ফ্রাইড রাইসের ৯ টি রেসিপি বাঙালীর ঐতিহ্যবাহী সকালের জলখাবার বাঙালির ১০ টি আচার যা জিভে জল আনে নিমেষে! মধ্যপ্রাচ্যে খুবই বিখ্যাত এই ৯ টি বাঙালির খাবার অযোধ্যার বিখ্যাত ঐতিহ্যবাহী ১০ টি খাবার!