ধোসা, ইডলি খাওয়ার চল চেন্নাই টু সারা ভারত এমনকি বাংলাদেশ পর্যন্ত আজকের দিনে জনপ্রিয়। এই খাবারের আসল আকর্ষণ আমার মত অনেকের কাছেই ছোট এক বাটি ডাল, যা কিনা সাম্বার। হালকা গরম সাম্বারের এক চুমুক, সত্যি মন খারাপের মধ্যেও ঠোঁটের কোনে হাসি টেনে আনতে পারে। যা কিনা প্রশান্তির হাসি। সাম্বার যারা ভালোবাসেন তাদের জন্য আমার তরফ থেকে আজকের এই লেখা। এই খাবারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপকরণটি। যা হল সাম্বার মসলা।
বিভিন্ন উপাদান দিয়ে তৈরি দক্ষিণ ভারত জুড়ে প্রচুর সাম্বার মসলা রেসিপি রয়েছে। এর বেশিরভাগই ধনে, জিরা এবং ডাল দিয়ে তৈরি করা হয়। কিছু অঞ্চলে নারকেল, দারুচিনি এমনকি পাথরের ফুলের (Stone Flower) মতো উপাদান ব্যবহার করা হয়। সবকটা ধরন লেখা আর তা বানানো সম্ভব নয়। তাছাড়া যেকোনো একটা রেসিপি জানা থাকলেই সাম্বার বানানো যাবে মসলা দিয়ে। তাই সবচেয়ে সহজলভ্য রেসিপি শেয়ার করলাম। বানানো সহজ ও কম সময়সাপেক্ষ। রেসিপি জানানোর আগে সাম্বার বানানোর একটা ঐতিহাসিক জনশ্রুতি লিখলাম। পড়ে মজা পাবেন।
সম্ভাজি থেকেই কি তাহলে সাম্বার!
জনশ্রুতি আছে যে শিবাজীর পুত্র ছত্রপতি সম্ভাজি মহারাজ, যিনি ছিলেন মারাঠা শাসকদের একজন। একদিন তাঁর প্রধান শেফ কোন কারণ বসত না আসায় নিজেই হেঁশেলে যান রান্না করতে। কি বানাবেন ঠিক করতে না পেরে তখন নিজের জন্য ডাল তৈরি করার চেষ্টা করেছিলেন। নিজের বানানো ডাল তাঁর এত পছন্দ হয় যা ‘সাম্বার’ নামে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে সকলের মুখে মুখে।
গল্পকাররা বলেন যে সাম্বারের আসল রেসিপি, যা তামিলনাড়ুর রন্ধনপ্রণালীর সাথে এতটাই অন্তর্নিহিত তা আসলে মারাঠা শাসক শিবাজীর ছেলের কাছ থেকে সেই সময় পাওয়া গিয়েছে। জনশ্রুতি আর সত্য ঘটনার মধ্যে তফাৎ এই যে জনশ্রুতিকে সত্যি না ভাবা। তাই নিছক গল্প বলেই মনে রাখুন এটা!
সাম্বার মসলা বানানোর উপকরণঃ
- নারকেল তেল ২ চা চামচ
- ধনে বীজ ১ কাপ (৭৫ গ্রাম)
- জিরা ১/৪ কাপ (২৫ গ্রাম)
- মেথি ২ টেবিল চামচ (২০ গ্রাম)
- বিউলি বা কলাইয়ের ডাল ২ টেবিল চামচ (৩০ গ্রাম)
- ছোলার ডাল ১ টেবিল চামচ (15 গ্রাম)
- কারিপাতা ১/২ কাপ (১০ গ্রাম)
- শুকনো লঙ্কা ১০০ গ্রাম
- হলুদ ১ চা চামচ
বানানোর পদ্ধতিঃ
প্রথমে একটি প্যানে ১/২ চা চামচ নারকেল তেল গরম করুন এবং ১ কাপ (৭৫ গ্রাম)) ধনে বীজ তাতে ভাজুন। ধনে বীজ সুগন্ধি না হওয়া পর্যন্ত কম আঁচে ভাজুন।ভাজা হয়ে গেলে একটি বড় প্লেটে স্থানান্তর করুন এবং একপাশে রাখুন। একই প্যানে ১/২ চা চামচ নারকেল তেল গরম করুন, এতে ১/৪ কাপ (২৫ গ্রাম) জিরা এবং ২ টেবিল চামচ (২০ গ্রাম) মেথি, ২ টেবিল চামচ (৩০ গ্রাম)) বিউলির ডাল এবং ১ টেবিল চামচ (১৫ গ্রাম) ছোলার ডাল যোগ করুন। এগুলো সুগন্ধি না হওয়া পর্যন্ত কম আঁচে ভাজুন।
তারপর আধা কাপ (১০গ্রাম) কারিপাতা যোগ করুন এবং ভালো করে ভাজুন। কারিপাতা খাস্তা না হওয়া পর্যন্ত ভাজতে হবে। হয়ে গেলে একটি বড় প্লেটে সব তুলে একপাশে রাখুন। আরও ১ চা চামচ নারকেল তেল গরম করুন ও তাতে ১০০ গ্রাম শুকনো লঙ্কা খাস্তা করে ভেজে নিন। সব উপকরণ সম্পূর্ণ ঠাণ্ডা হতে দিন। এবার মিক্সিতে সব ভাজা মসলা নিন, ১ চা চামচ হলুদ দিন। একটি সূক্ষ্ম গুঁড়ো বা মিহি করে পিষে নিন। একটি ছাঁকনি দিয়ে মসলা ছেঁকে কৌটোতে ভরে রাখুন। ছাঁকনির উপরে গোটা মসলা থাকলে তা আবার গুঁড়ো করে নিন। এবারে যতক্ষণ না সবটা মসলা গুঁড়ো হচ্ছে প্রক্রিয়াটি করতে থাকুন। দুইবারে এটি হয়ে যেতে লাগে। রান্নাঘরে ঠাণ্ডা জায়গায় সাম্বার মসলার কৌটো রেখে তিন মাস ধরে এর ব্যবহার করতে পারেন।