গোটা মসলা ফোঁড়ন দিয়ে তৈরি রান্না খাওয়ার স্বাদই আলাদা। সাধারণ ডালে গোটা জিরা, কয়েক কোয়া রসুন কুচি হোক না কেন মসলা ঠিক থাকলে খাবারের স্বাদ সম্পূর্ণ বদলে যায়। ডায়েটিশিয়ানদের মতে, এটা খাবারের স্বাদকে পুরোপুরি বদলে দেয়। ছোঁকে যোগ করা মসলার নিজস্ব এরমা বা গন্ধ রয়েছে, যা ডাল-সবজিতে ভিন্ন স্বাদ দেয়। তাই এবার থেকে রান্নায় মসলা ছোঁকে দেওয়ার আগে সামান্য ৫টি জিনিস খেয়াল রাখুন। খুব সামান্য সামান্য বিষয়, যা মাথায় থাকলে যে রান্নায় আপনি ফোঁড়ন যোগ করছেন তার স্বাদ আরও বেড়ে যাবে।
ফোঁড়ন দেওয়ার সময় খেয়াল রাখুন এই ৫টি জিনিসঃ
ডাল হোক, সবজি হোক বা রাইতা, একেক খাবারে ফোঁড়ন দেওয়ার পদ্ধতি একেক রকম। তাই ছোঁক লাগানোর সময় কিছু বিষয় খেয়াল রাখা প্রয়োজন।
১. শাকসবজি প্রস্তুত করার সময় শুরুতে ফোঁড়ন দিনঃ
শাকসবজি ছাড়া বাঙালী বাড়িতে দুপুরের খাওয়া দাওয়া অসম্পূর্ণ। তাছাড়া এগুলো খাওয়া শরীরের জন্য পুষ্টিকর। খেতেও লাগে অপূর্ব। অনেকে আছেন আগে সেদ্ধ করে নিয়ে তারপর ফোঁড়ন দিয়ে শাকসবজি রান্না করেন। এটা করবেন না। এতে দুটি সমস্যা। এক হচ্ছে শাকসবজির পুষ্টিগুণ সেদ্ধ জলের মধ্যে দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে। আর দুই হল সেদ্ধর পরে ফোঁড়ন দিলে স্বাদ ততটা ভালো লাগে না যা শুরুতে দিলে লাগে। তাই আগে যে যে গোটা মসলা ছোঁকবেন রান্নায় দেওয়ার জন্য তা সামান্য তেলে প্রথমে ছোঁকে নিন। তারপর শাকসবজি যোগ করে রান্না করুন।
২. তেলের মাত্রা সম্পর্কে সঠিক থাকুনঃ
ফোঁড়ন দেওয়ার জন্য খুব বেশি তেল ব্যবহার করবেন না। যে যে গোটা মসলা এতে দেবেন তা জাস্ট ডুবানোর জন্য ১-২ চা চামচ তেল ব্যবহার করুন। খুব বেশি তেলে মসলা দিলে তা খাবারের আসল স্বাদ নষ্ট করে দেয়। সামান্য তেলে এটা দেওয়ার ফলে এতে টেম্পারিং করার সময় খুব সুন্দর মসলার গন্ধ বের হয়। কম তেলের জায়গায় বেশি তেল হলে সেই এরমা বা গন্ধ তেলে ঢাকা পড়ে যায়। ফলে স্বাদে ও গন্ধে তফাৎ দেখা যায়। তাই ফোঁড়ন দেওয়ার জন্য সব সময় ১-২ চা চামচ তেল ব্যবহার করুন। এটা দেওয়া হয়ে গেলে তারপর রান্নায় প্রয়োজন অনুযায়ী তেলের মাত্রা বাড়াতে পারেন।
৩. রান্নার শেষে ফোঁড়ন দেওয়ার হলে ছোট হাতার ব্যবহার করুনঃ
ডাল, সাম্বার, রায়তা ইত্যাদি বানানোর সময় সব সময় শেষে ফোঁড়ন দিন। যা সবার জানা। তবে সিজনিংয়ের জন্য একটি পৃথক ছোট হাতা বা প্যান ব্যবহার করুন। প্রায়শই আমরা যেটা করি। ফোঁড়ন দিয়ে তারপর রান্না করা ডাল, সাম্বার বা রায়তা তাতে মিশিয়ে কিছুক্ষণ রান্না করি। এটা না করে একবার শুধু শেষে মসলা ছোঁকে বানানো ডালে দিয়ে তা ঢেকে রাখুন পাঁচ মিনিট। স্বাদের তফাৎ চেখে নিলেই বুঝে যাবেন।
৪. তাপমাত্রার খেয়াল রাখুনঃ
সঠিক মাত্রায় তেল গরম করে নেওয়া উচিত ফোঁড়নের আগে। কম মাত্রায় তেল গরম হলে তাতে মসলা দিলে মসলার গন্ধ ঠিক আসে না বরং তেলের গন্ধ ভেসে আসে। আবার তেল বেশি গরম হলে তাতে মসলা দিলে তা পুড়ে যায়। ফলে খাওয়ারের স্বাদ পোড়া পোড়া লাগে। যদি মসলা পুড়ে যায় তাহলে মসুর ডাল ইত্যাদিতে মেশাবেন না। এতে খাবারের স্বাদ নষ্ট হবে এবং খাবারে পোড়া মসলার গন্ধ আসবে। তাই সঠিক তাপ নির্ধারণ করে ফোঁড়ন দেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সবচেয়ে ভালো হয় টেম্পারিং প্রয়োগ করার সময় একটি প্যানে তেল গরম করুন। তেল গরম হওয়ার পর আঁচ কমিয়ে দিন। এক মিনিট পরে এতে জিরা, সরিষা ও পাঁচফোড়ন বা যে গোটা মসলা দেওয়ার আছে তা দিন। গরম তেলে সঠিক ভাবে মসলা তার কাজ করবে রান্নার স্বাদ অক্ষুণ্ণ রেখে।
৫. ভুলেও এই তেলের ব্যবহার করবেন নাঃ
আজকাল অনেক রান্নায় অলিভ অয়েল বা জলপাইয়ের তেল ব্যবহার করা হয়। তাতে কোন সমস্যা নেই। কিন্তু ফোঁড়ন দেওয়ার হলে এই তেলের ব্যবহার ভুলেও করবেন না। কারণ এই তেলের অনেক প্রকারভেদ হয়। বিশেষ করে এই তেল স্যালাড বা হালকা রান্নায় ব্যবহার করা হয়। তাছাড়া প্রকারভেদ অনুযায়ী পাশ্চাত্যে এর ব্যবহারের চল রয়েছে। যা আমরা তাদের মত করে ব্যবহার করতে এখনও জানি না। আর এত ধরণ সম্পর্কেও সঠিক জানা নেই। তাই অলিভ অয়েলে ফোঁড়ন দেওয়া এড়িয়ে চলুন। পরিবর্তে সরিষার তেল, সূর্যমুখী তেল এবং ঘি ব্যবহার করুন।