ভিনেগার শব্দটা শুনলেই কেমন যেন মনে পড়ে যায় আচারের কথা, তাই না? আচারকে নষ্ট হয়ে যাওয়ার হাত থেকে বাঁচাতে আমরা সাধারনত ভিনেগারব্যবহার করে থাকি। ভিনেগার রান্নার কাজে অনেক রকম ভাবে সহায়তা করতে পারে। ভিনেগার চাউমিন, নুডলসের মতো জিনিসগুলি তৈরি করতে ব্যবহৃত হয়, তবে বেশিরভাগ লোকেরা সম্ভবত এটি পরিষ্কার করার এজেন্ট হিসাবে ব্যবহার করেন। আপনি কি জানেন আপনার খাবারের স্বাদ বাড়াতে কতটা সাহায্য করতে পারে ভিনেগার? শুধু তাই নয়, অনেক শেফ থালা-বাসন ঝকঝকে করতে অল্প পরিমাণে ভিনেগারও ব্যবহার করেন। কিন্তু আপনি কি জানেন যে প্রতিটি খাবারের জন্য ভিন্ন ধরনের ভিনেগার ব্যবহার করা হয়। প্রতিটি ভিনেগারের কাজ আলাদা। রান্নাঘর থেকে ঘর পরিষ্কার করতে ভিনেগার ব্যবহার করা হয়। আজকে জেনে নেওয়া যাক রান্নায় কীভাবে ভিনেগার ব্যবহার করতে পারেন।
আজ তাহলে জেনে নিন রান্না করার সময় কি কি উপায়ে আপনি এই ভিনেগার ব্যবহার করতে পারেন।
১. ফাটা ডিম যোগ করুনঃ
ফাটা ডিম সেদ্ধ করার সময় ভিনেগার ব্যবহার করতে পারেন। সএদ্ধ করার সময় ডিম জলে ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা থাকে, তবে আপনি ভিনেগারের সাহায্য নেন তাহলে তা হবে না। একটি ফাটা ডিমও সেদ্ধ করতে পারেন ভিনেগার দিয়ে। এর জন্য প্যানে ডিম দিয়ে জল গরম করতে থাকুন। জলে বুদবুদ তৈরি শুরু হলে ১ চা চামচ ভিনেগার দিন। ভিনেগার জলে ডিম ছড়াতে দেবে না।
২. খাবারকে আরো বেশি মজাদার করতেঃ
যেসকল রান্না করা খাবার চর্বিযুক্ত হয়, সেই ধরনের খাবার রান্না করার সময় তরকারির মধ্যে অল্প পরিমাণ ভিনেগার যোগ করে দিলে খাবারের স্বাদ অনেক বৃদ্ধি পায়। আবার চর্বিযুক্ত তরকারিতে চর্বির একটা গন্ধ
পাওয়া যায়। অনেকের কাছে কিন্তু চর্বির এই গন্ধটা ভালো লাগে না। সেক্ষেত্রে তারা রান্না করার সময় ভিনেগার দিয়ে রান্না করে দেখুন খেতে মজা পাবেন। কারন ভিনেগারের রয়েছে একটা ঘ্রাণ বা সুগন্ধি, যা চর্বিযুক্ত খাবারটিকে নতুন এক ফ্লেবার দেয়, সেই সাথে আরো বেশি মজাদার করে তুলবে।
৩. ভিনেগার খাবারকে নষ্ট করা বা ফাঙ্গাস থেকে রক্ষা করেঃ
ভিনেগারে আছে এসিটিক এসিড যা কোন খাবারকে অনেকদিন পর্যন্ত ভালো রাখতে সাহায্য করে। কোন খাবারে ভিনেগার ব্যবহার করলে তাতে সহজে ফাঙ্গাস আক্রমণ করতে পারে না। তাই অনেকদিন ভালো থাকে। যেমন আচার, আচার যেহেতু খুব ভালো করে রান্না করে তৈরি করা হয় না তাই এতে ফাঙ্গাস আক্রমণ করার সুযোগ থাকে বেশি। কিন্তু আচার তৈরির সময় যদি এতে কিছু পরিমাণ ভিনেগার ব্যবহার করা হয়, তাহলে সেই আচার অনেকদিন ভালো থাকে। এতে ফাঙ্গাস বা পচন ধরতে পারে না।
৪. ভিনেগার জীবাণুনাষক হিসেবে কাজ করেঃ
এমন অনেক খাবারের জিনিস রয়েছে যা সাধারনত আমাদের আগুনে সিদ্ধ করে বা রান্না করে খাওয়া হয় না। যেমন বিভিন্ন ধরনের ফল, টমেটো, শসা, গাজর ইত্যাদি। এই সব জিনিস ধোয়ার পরও কিন্তু জীবানু থেকে যাওয়ার একটা সম্ভাবনা থাকে। এই সমস্যা দূর করতে পারে ভিনেগার। এই জাতীয় খাবার ধোয়ার পর একটি পাত্রে কিছুটা পানি নিয়ে তাতে অল্প পরিমাণ ভিনেগার মিশিয়ে তাতে কিছু সময় ভিজিয়ে রেখে দিয়ে তারপর খেলে সেগুলো জীবাণুমুক্ত হয়ে যায়।
৫. ভিনেগার রান্নায় লবণের পরিমাণ বাড়ায়ঃ
লবণ অতি প্রয়োজনীয় জিনিস বা উপাদান খাবারের জন্য। লবণ ছাড়া খাবারের কোন স্বাদ পাওয়া যায় না। তবে অতিরিক্ত লবণ খাওয়া শরীরের জন্য অনেক ক্ষতিকর। এই সমস্যার থেকে মুক্তি দিতে পারে ভিনেগার। রান্নার সময় ভিনেগার ব্যবহার করুন। দেখবেন তখন লবণ কম ব্যবহার করেও আপনি খাবারে সঠিক লবণাক্ততার স্বাদ পাবেন। আবার রান্নার লবণ না থাকলেও আপনি ভিনেগারের ব্যবহার করতে পারেন খাবারে লবণাক্ততা আনার জন্য।
৬. ভিনেগার দ্রুত খাবার সিদ্ধ হতে সাহায্য করেঃ
অনেক সময় দেখা যায় কোন সবজি খুব সহজে সিদ্ধ হতে চায় না। আবার সিদ্ধ করতেও অনেক সময় ব্যয় হয়ে যায়। সবজি দ্রুত ও সুন্দরভাবে সিদ্ধ হওয়ার গোপন টিপস জেনে নিন। সবজিকে রান্না করার আগে কিছু সময় তা ভিনেগারযুক্ত জলে ভিজিয়ে রেখে দিন। তারপর আবার রান্না করার সময় পাত্রে জল ঢেলে তাতে কিছু পনিমাণ ভিনেগার দিন। এরপর সিদ্ধ করে নিন। দেখবেন রান্না করার পর সেই সবজি কেমন মুখে দিলেই মিশে যাবে। স্বাদেও ভিন্নতা পাবেন।
৭. সালাদ ড্রেসিং’এ ব্যবহার করুনঃ
আপনি যদি সালাদকে আরও সুস্বাদু করতে চান তবে এতে ভিনেগারও যোগ করতে পারেন। আপনার সালাদে সামান্য টক, সামান্য মিষ্টি স্বাদের ভারসাম্য বজায় রাখতে আপেল সিডার ভিনেগার ব্যবহার করুন। আপেল সিডার ভিনেগার, সরিষা, লেটুস, সালাদের স্বাদ বাড়িয়ে দেয়। কিছু শেফ সালাদ ড্রেসিংয়ে শ্যাম্পেন ভিনেগারও ব্যবহার করেন, যা সালাদে হালকা স্বাদ যোগ করে। আপনার কাছে যদি আপেল সিডার ভিনেগার না থাকে তবে আপনি সাদা ভিনেগার ব্যবহার করতে পারেন।
৮. ভিনেগার রান্নার সময় কমাতে সাহায্য করেঃ
আপনার কি রান্না করতে অনেক সময় লাগে? রান্না করতে অনেক সময় ব্যয় হলে বিরক্ত লাগে, তার উপর আগুনের তাপ তো রয়েছেই। এই ঝামেলা থেকে মুক্তি পেতে রান্নায় ব্যবহার করতে পারেন ভিনেগার। রান্না দ্রুত শেষ হবে। কারন ভিনেগারের মধ্যে আছে জৈব অ্যাসিড। যা কোন খাবারকে দ্রুত সিদ্ধ হতে সাহায্য করে। আমরা জানি ছাগলের মাংস রান্না করতে অনেক সময় লাগে। এগুলো সহজে সিদ্ধ হতে চায় না। সেক্ষেত্রে আপনি যদি ছাগলের মাংস রান্না করতে চান তাহলে রান্নার সময় ভিনেগার ব্যবহার করুন, রান্না দ্রুত শেষ হবে। ভিনেগার ছাড়া রান্না করতে যতটা সময় ব্যয় হয়, ভিনেগার ব্যবহার করে রান্না করতে তার চেয়ে অর্ধেক সময় ব্যয় হবে। বিশ্বাস না হলে একবার চেষ্টা করে দেখবেন। তাহলে আপনি নিজেই বুঝতে পারবেন।
৯. আচার তৈরির জন্য ব্যবহার করুনঃ
বাড়িতে দিদা-ঠাকুমারা যেভাবে আচার তৈরি করতেন তা ভিন্ন বিষয়। তবে একই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। এই দীর্ঘ প্রক্রিয়া এড়িয়ে চলুন এবং ভিনেগার দিয়ে আচার তৈরি করতে শিখুন। আপনি শসা থেকে পেঁয়াজ পর্যন্ত টক এবং মসলাদার করতে পারেন ভিনেগার দিয়ে। এই জন্য, আপনার আচারের মূল উপকরণ আপেল সিডার ভিনেগারে ১-২ ঘন্টা ভিজিয়ে রাখুন এবং তারপর আচার বানান। এতে করে একদিনে আচার বানানো সম্ভব বেশি কোন ঝামেলা না করে।
১০. প্যান সস তৈরিতে ব্যবহার করুনঃ
আপনি যদি একটি বিশেষ খাবারের জন্য একটি সুস্বাদু সস বানাতে চান তাহলে ভিনেগার ব্যবহার করতে পারেন। এটির সাহায্যে একটি দ্রুত স্বাদযুক্ত সস তৈরি করতে পারেন। যে প্যানে খাবার রান্না করা হয়েছিল তাতে শেরি ভিনেগার যোগ করুন এবং সসের বাকি জিনিস মেশান। দ্রুত সস প্রস্তুত হয়ে যাবে। টমেটো কেচাপের সাথে মিশিয়েও ট্যাঙ্গি সস তৈরি করা যায়। টমেটো কেচাপে ভিনেগার যোগ করুন, এটি মিশ্রিত করুন। আপনার ট্যাঙ্গি সস দ্রুত প্রস্তুত হয়ে গেল।
১১. বেকিং এ ব্যবহার করুনঃ
রুটিতে সোনালি ও চকচকে রং দিতে বা পুডিং তুলতুলে করতে ভিনেগার ব্যবহার করতে পারেন। একটি ফ্রুট পাইয়ের মিষ্টির ভারসাম্য বজায় রাখতে চান বা ফ্রেসি ফ্রোথ তৈরি করতে চান না কেন, ভিনেগার সবার জন্য কাজ করবে। বেকিংয়ে ভিনেগার ব্যবহার করা আপনার কাজকে সহজ করে দিতে পারে। এর জন্য, বেকিং ডিশে মাত্র ১ চামচ সাদা ভিনেগার যোগ করুন এবং এটি মেশান। মাত্র ১ চা চামচ ভিনেগার দিয়ে উপরে উল্লিখিত সব কাজ সহজ হয়ে যাবে।
১২. মাংসের স্বাদ বাড়ানঃ
মাংসের স্বাদ বাড়াতে চাইলে গার্লিক ওয়াইন ভিনেগার খুবই উপকারী। এর সাথে সরিষা মেশালে স্বাদ আরও সুস্বাদু হতে পারে। আপনার যদি এই ভিনেগার না থাকে তবে আপনি এতে সাদা ভিনেগারও যোগ করতে পারেন। জল গরম করার পর তাতে ১ চা চামচ ভিনেগার যোগ করে মাংস দিয়ে গরম করুন। ভিনেগারের অ্যাসিড উপাদান এটিতে একটি ট্যাঙ্গি স্বাদ যোগ করবে এবং আপনার মাংসকে কোমল করে তুলবে।
বিশেষ টিপসঃ
খাবারের সৌন্দর্য বাড়াতে ভিনেগার ব্যবহার করুন। দেখবেন এক ভিন্ন রুপ চলে আসবে। আমরা সকলেই মজাদার খাবারের সাথে সাথে সুন্দর খাবার খেতেই বেশি পছন্দ করে থাকি। কথায় আছে, যে খাবার দেখতে সুন্দর হয় তা খেতেও খুব ভালো লাগে। কেননা এর প্রতি একটা আকর্ষণ সৃষ্টি হয় যা এর স্বাদকে বাড়িয়ে দেয়।