চাকুরীজীবিদের মধ্যে যারা একা একা হোস্টেলে বা পিজিতে থাকেন তাদের জন্য ভালো খাওয়াদাওয়া করাটা বেশ চ্যালেঞ্জিং একটি ব্যাপার। বেশিরভাগ সময়ে তাদেরকে ক্যান্টিন, রেঁস্তোরা, বা হোস্টেল মিলের উপর নির্ভর করতে হয়। ব্রেকফাস্ট বা লাঞ্চ কোনমতে বাইরে সেরে নেওয়া যায়। কিন্তু সারাদিনের খাটাখাটুনির পরে রাতে ফিরে রান্না করা তো একেবারেই অসম্ভব। আবার রান্না করাও তো কম ঝক্কির ব্যাপার না। একটু ভালোমন্দ খেতে চাইলে ঘন্টার পর ঘন্টা সময় লেগে যায়। এই ধরণের সমস্যার সমাধান মিলবে আজকের লেখা থেকে।
রয়েছে চাকুরীজীবিদের জন্য ৫টি ইউনিক ডিনার রেসিপি আইডিয়া, যা তৈরি করতে সময় লাগবে ১ ঘন্টারও কম। আপনি যদি হোন একজন চাকুরীজীবি এবং থাকেন একা এই রেসিপিগুলো নিজে নিজেই রান্না করে খেতে পারবেন।
১. ল্যাম্ব কোফতাঃ
প্রস্তুতির সময় – ১৫ মিনিট
রান্নার সময় – ১৫ মিনিট
মোট সময় – ৩০ মিনিট
উপকরণঃ
- ল্যাম্ব কিমা – ৫০০ গ্রাম
- জিরা গুঁড়া – ১ চা চামচ
- ধনিয়া গুঁড়া – ২ চা চামচ
- রসুন থেঁতো করা – ২টি (বড় কোয়া হতে হবে)
- পুদিনাপাতা কুচি – ১ টেবিল চামচ
- তেল
রন্ধন প্রণালীঃ
সব উপকরণ একসাথে ভালো করে মাখিয়ে নিন। এরপরে আট ভাগে ভাগ করে নিন। চপিং বোর্ডের উপর রেখে হাতের সাহায্যে ওভাল শেইপ করে কোফতা বানিয়ে নিন। এরপরে চারটি লোহার শিকে কোফতাগুলো গেঁথে নিন।
প্রতিটি কোফতায় তেল ব্রাশ করে নিন। চুলায় প্যান দিয়ে গরম করে নিন। এরপরে শিকগুলো ৩-৪ মিনিট করে এপিঠ-ওপিঠ ভেজে ফেলুন।
খেয়াল রাখবেন, এক সাইড ভালোমতো ভাজা না হলে উল্টানো যাবে না। নাহলে কোফতা প্যানে লেগে থাকবে। চাইলে চিলি ফ্লেকস বা গোলমরিচ গুঁড়া দিয়ে সিজনিং করে নিতে পারেন কোফতাগুলো। গরম গরম পরিবেশন করুন নান রুটি আর টকদইয়ের সাথে।
২. টেরিয়াকি চিকেনঃ
প্রস্তুতির সময় – ১০ মিনিট
রান্নার সময় – ১০ মিনিট
মোট সময় – ২০ মিনিট
উপকরণঃ
- হাড় ও চামড়া ছাড়া মুরগীর বুকের মাংস – সোয়া এক কেজি
- অলিভ অয়েল – ১ টেবিল চামচ
- লো সোডিয়াম সয় সস – ১ কাপের এক চতুর্থাংশ (আড়াই টেবিল চামচ সয় সসের সাথে দেড় টেবিল চামচ জল মেশালেই তৈরি হয়ে যাবে)
- জল – ১ কাপের এক চতুর্থাংশ
- মধু – ২ টেবিল চামচ
- লাইট ব্রাউন সুগার অথবা মিহি দানার চিনি – দেড় টেবিল চামচ
- রাইস ভিনেগার – ১ টেবিল চামচ
- তিলের তেল – ১ চা চামচের এক চতুর্থাংশ
- আদা কুচি – ২ চা চামচ
- রসুন কুচি – ২ চা চামচ
- কর্নস্টার্চ – ২ চা চামচ
- তিলের দানা এবং পেঁয়াজ পাতা কুচি – সাজানোর জন্য, তবে অপশনাল
রন্ধন প্রণালীঃ
এই রান্নার জন্য ১২ ইঞ্চি ব্যাসের নন-স্টিক প্যান লাগবে। আর মুরগীর মাংস ১ ইঞ্চি কিউব করে কেটে নিবেন। প্রথমে প্যানে অলিভ অয়েল দিয়ে মাঝারি আঁচে গরম করে নিন। এরপর মাংস দিয়ে দিন। মাংসের উভয় সাইড বাদামি রং ধারণ করা পর্যন্ত রান্না করুন। ৫-৬ মিনিট লাগবে বাদামি রং আনতে। মাংস রান্না হতে হতে ঝটপট টেরিয়াকি সস বানিয়ে ফেলুন।
একটি ছোট মিক্সিং বোলে সয় সস, জল, মধু, চিনি, রাইস ভিনেগার, তিলের তেল, আদা কুচি, রসুন কুচি, এবং কর্নস্টার্চ দিয়ে ভালো করে মিশিয়ে নিন। এবার প্যানে থাকা মুরগীতে সসটা ঢেলে দিন। সস ঘন না হওয়া পর্যন্ত নাড়তে থাকুন, ১-২ মিনিট লাগবে। গরম গরম পরিবেশন করুন পেঁয়াজ পাতা কুচি ও তিলের সাথে। ভাত বা পোলাওয়ের সাথে এটা খেতে বেশ লাগবে।
৩. হানি মাস্টার্ড চিকেনঃ
প্রস্তুতির সময় – ৫ মিনিট
রান্নার সময় – ১০ মিনিট
মোট সময় – ১৫ মিনিট
উপকরণঃ
- অলিভ অয়েল – ৪ টেবিল চামচ
- হাড় ও চামড়া ছাড়া চিকেন ব্রেস্ট, ছোট টুকরা করে কাটা – দেড় কেজি
- কোষার সল্ট – ১ চা চামচ
- গোলমরিচের গুঁড়া – আধা চা চামচ
- মধু – আধা কাপ
- হলুদ দানার সরিষা বাটা – ১ কাপের এক চতুর্থাংশ
- বাদামি দানার সরিষা বাটা – ১ কাপের এক চতুর্থাংশ
- কর্নস্টার্চ – ২ চা চামচ (২ চা চামচ ঠান্ডা জলের সাথে মিশিয়ে পেস্ট করে রাখতে হবে)
রন্ধন প্রণালীঃ
একটি বড় প্যানে তেল, মাংস, নুন, এবং গোলমরিচ দিয়ে মাঝারি আঁচে ৫-৭ মিনিট ধরে সতে করুন। মাংস সুসিদ্ধ করতে মাঝে মাঝে প্যানটা ফ্লিপ করবেন। মাংস সতে করতে করতে আরেকটি কাজ করে ফেলুন। ছোট একটি বাটিতে মধু এবং দুই ধরণের সরিষা বাটা একসাথে মিশিয়ে নিন। চেখে দেখুন সসে ঝাল আর মিষ্টি ঠিক আছে কিনা। বেশি ঝাল বা মিষ্টি করতে চাইলে মধু বা সরিষা বাটার পরিমাণ বাড়াতে পারেন।
এবারে হানি মাস্টার্ড সসটা মাংসে ঢেলে দিন। আঁচ কমিয়ে হালকা করুন। সসের সাথে মাংস মাখিয়ে নিন। ২-৩ মিনিট এভাবে নাড়তে থাকবেন। এবারে কর্নস্টার্চের পেস্টটা ঢেলে দিয়ে আরো ১-২ মিনিট নাড়ুন। তবে একটি ব্যাপার খেয়াল রাখবেন। কর্নস্টার্চ সসটা বেশ ঘন করে তুলবে। ঠান্ডা হলে সস আরো ঘন হয়ে জমাট বাঁধতে পারে। তখন ঝোল পাতলা করার জন্য কিন্তু পুনরায় গরম করা যাবে না। চাইলে কর্নস্টার্চ ছাড়াই রান্না করতে পারেন যদি বেশি ঘন ঝোল না চান। রান্না হয়ে গেলে গরম গরম পরিবেশন করুন। চাইলে উপরে পার্সলে পাতা কুচি ছড়িয়ে দিতে পারেন।
৪. ঝটপট ফিশ কারিঃ
প্রস্তুতির সময় – ৫ মিনিট
রান্নার সময় – ১০ মিনিট
মোট সময় – ১৫ মিনিট
উপকরণঃ
- যেকোন মাছ চামড়া ছাড়ানো – ৪টি বড় ফিলে
- ভেজিটেবল অয়েল – ১ টেবিল চামচ
- পেঁয়াজ কুচি – বড় সাইজের একটি
- রসুন কুচি – ১টি
- কারি পেস্ট – ২ টেবিল চামচ (সাউথ ইন্ডিয়ান কারি পেস্ট হলে ভালো হয়)
- টমেটো, ছোট টুকরা করে কাটা – ৪০০ গ্রাম
- ভেজিটেবল স্টক – ২০০ মিলি
রন্ধন প্রণালীঃ
একটি ডিপ প্যানে তেল গরম করুন। পেঁয়াজ কুচি ও রসুন কুচি দিয়ে ৫ মিনিট ভাজুন। পেঁয়াজ-রসুন নরম হয়ে আসলে কারি পেস্ট দিয়ে আরো ১-২ মিনিট নাড়ুন। এরপর টমেটো এবং ভেজিটেবল স্টক দিয়ে দিন। ঝোল ফুটে উঠলে মাছের ফিলেগুলো দিয়ে দিন এবং ৪-৫ মিনিট রান্না করুন। মাছ আর ঝোল মাখা মাখা হয়ে আসলে নামিয়ে ফেলুন। পরিবেশন করুন ভাত বা নান রুটির সাথে।
৫. ক্লাসিক ডিনার অমলেটঃ
প্রস্তুতির সময় – ২ মিনিট
রান্নার সময় – সর্বোচ্চ ২ মিনিট
মোট সময় – ৪ মিনিট
উপকরণঃ
- ডিম – ২টি
- কোষার সল্ট – ১ চা চামচের আট ভাগের এক ভাগ
- গোলমরিচের গুঁড়া – আধা চা চামচ
- জল – আধা চা চামচ
- বাটার – আধা টেবিল চামচ
- পনির কুচি – ২ টেবিল চামচ
- সটেড মাশরুম – ২ টেবিল চামচ
- টমেটো কুচি – ২ টেবিল চামচ
- স্মোকড স্যামন (Salmon), ছোট টুকরা করা – ২ টেবিল চামচ
রন্ধন প্রণালীঃ
একটি বাটিতে ডিম, কোষার সল্ট, গোলমরিচ, এবং জলএকসাথে দিয়ে ফেটিয়ে নিন। একটি ৮ ইঞ্চি বা ১০ ইঞ্চি ব্যাসের ননস্টিক প্যান হাই হিটে গরম করে নিন। এবার এতে বাটার দিয়ে দিন এবং প্যানটা ঘুরিয়ে দিন যাতে সব জায়গায় বাটার পৌঁছায়।
বাটারে যখন ফেনা উঠতে শুরু করবে তখন ফেটানো ডিম প্যানে ঢেলে দিন। প্যানটা একটু ঘুরিয়ে দিবেন যাতে ডিমটা প্যান জুড়ে ছড়িয়ে যায়। ডিমটা যখন মোটামুটি ভাজা ভাজা হয়ে যাবে পনির, মাশরুম, টমেটো, স্যামন ডিমের উপর দিয়ে দিন স্টাফিং হিসেবে। চাইলে স্টাফিংয়ের উপকরণ বাড়াতে-কমাতে বা পরিবর্তন করতে পারেন।
এবারে একটি স্প্যাটুলা ডিমের নিচে দিয়ে উল্টাতে শুরু করুন। রোলের মতো করে পেঁচিয়ে আরো ১০-১৫ সেকেন্ড এপিঠ-ওপিঠ করে ভেজে নিন। বাইরের দিকটা হবে হালকা সোনালী রঙের আর ভেতরটা হবে সফট এবং ক্রিমি।
তবে অমলেট শক্ত খেতে চাইলে আরো ১০-১৫ সেকেন্ড ভেজে নিতে পারেন। চুলা নিভিয়ে দিন। প্যানের উপর একটি প্লেট চেপে ধরে প্যানটা উল্টে অমলেট ঢেলে ফেলুন। গরম গরম পরিবেশন করুন।