যন্ত্রের এই যুগে সময়ের সাথে সাথে হারিয়ে যাচ্ছে অনেক কিছু। ছোটবেলায় দুপুরে অনেক দূর থেকে মাঝে মধ্যে ভেসে আসতো একটা সুর। সুর বলাটাই শ্রেয়, ‘শিল কাটাবে’ এই দুটি শব্দ যে এত মধুর হতে, পারে তা যারা শুনেছেন তারা সকলেই একমত হবেন। যাইহোক স্মৃতির অতলে না গিয়ে বরং আসল বিষয়ে চলে আসি। আগেকার বাড়িতে, চাটনি বা মসলা পিষানোর জন্য শিল-নোড়া বা শিল-পাটা ব্যবহার করা হত। আজও গ্রামে এবং বাড়ির বড়দের খাবারকে সুস্বাদু করতে এর ব্যবহার করতে দেখা যায়। কিন্তু সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে ভারতীয় রান্নাঘরে শিল-নোড়ার বদলে জায়গা করে নিয়েছে মিক্সি মেশিন। মিক্সারে দুই মিনিটের মধ্যে সবকিছু সহজেই তৈরি হয়ে যায়। কিন্তু মসলা বাটা বা চাটনি তৈরি করার জন্য শিল-নোড়াকে মিক্সারের চেয়ে বেশি উপকারী বলে মনে করা হয়। তাছাড়া শিলে বাটা মসলা আর মিক্সিতে বানানো মসলার মধ্যে তফাৎ আছে বিস্তর। এই বিষয় নিয়েই আজকের লেখা।
ক. শিলে আর মিক্সিতে বাটা মসলার স্বাদে ভিন্নতা আছেঃ
শিল-পাটায় গ্রাউন্ড মসলার বিশেষত্ব হল এর দীর্ঘস্থায়ী স্বাদ। সবজিতে মসলা যোগ করলে খাবারের স্বাদ বের হয়ে আসে। মিক্সারের ব্লেডের কারণে মসলার স্বাদ বদলে যায়। গ্রাইন্ডারে রসুনের চাটনির স্বাদ যেমন প্রায়শই তেতো হয়, তেমনি পুদিনার চাটনির গন্ধও বদলে যায়। এটি যদি শিলে বাটা হয় তাহলে স্বাদ থাকে একদম এক। আর গন্ধ তো পাশের বাড়ি পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে।
বিশেষ করে গোটা গরম মসলা একবার শিলে আর মিক্সিতে আলাদা আলাদা বেটে কখন দেখবেন। দুটি তফাৎ লক্ষ্য করতে পারবেন। প্রথমত গরম মসলার গন্ধের ঝাঁজ। আর দ্বিতীয়ত একই তরকারিতে আলাদা আলাদা বাটা এই মসলার স্বাদ। খাবারের স্বাদ এই দুটির ক্ষেত্রেই আলাদা আলাদা হয়। স্বাদে গন্ধে সবসময় শিল পাটায় বাটা মসলা এগিয়ে থাকবে মিক্সির থেকে।
খ. মসলার তাপ কম বেশিতে আছে অন্তরঃ
গোটা মসলা বা আদা রসুন সম্পর্কে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল এগুলো পেট গরম করে। প্রায়শই লোকেরা বিশ্বাস করেন যে মসলা বেশি খাওয়া উচিত নয় কারণ তা খুব পেট গরম করে। কিছু মসলা গরম প্রকৃতির হয় তা ঠিক। কিন্তু শিল পাটায় বাটা মসলা উৎপন্ন তাপকে সরিয়ে দেয়। বিশেষ করে যেসব মসলা গরম প্রকৃতির হয়। মিক্সারে তা যদি পিষে নেন তাহলে তা মসলার তাপ অনেকটা বৃদ্ধি করে দেয়। মিক্সারে মসলা বাটার পর ঢাকনা খুললে ধোঁয়া বেরতে দেখবেন। এটাই তার প্রমাণ। এমতাবস্থায় মাশিল পাটায় মসলা বেটে তা দিয়ে রান্না করলে শরীর বা পেট কোনটাই গরম হয় না।
গ. শরীরের কসরত হয়ঃ
উপরের পয়েন্ট শুনে যাদের হাসি পাচ্ছে তাদের বলি আজ্ঞে হ্যাঁ মসলা বাটার সাথে শরীরের কসরতের সম্পর্ক আছে। শিল-নোড়ায় মসলা পিষতে গিয়ে হাতকে অনেক কষ্ট করতে হয় ঠিকই। তবে এতে হাতের ভালো ব্যায়াম হয়। সেই সঙ্গে মসলা বা চাটনি বাটার সময় যে ভঙ্গিতে বসেন তাতে পেটে চাপ পড়ে এবং পেট ভিতরের দিকে চাপ পড়ে। ফলে পেটের একধরণের এক্সাসাইজ হয়ে যায় কাজ করতে করতে। মসলা নিয়মিত শিলে বাটলে পেট ও উরুর চারপাশে চর্বি জমে না। মিক্সিতে এসবের কোন চান্স নেই। সুইচ অন করাই কাজ মাত্র। তাই কসরতের ‘ক’ থাকে না।
সময় বাঁচাতে মিক্সি ব্যবহার করুন কিন্তু যদি হাতে সময় থাকে তাহলে পুরনো শিল নোড়াকে বানিয়ে নিন বন্ধু। রান্নার স্বাদ আর আপনার খেয়াল দুই রাখতে এটি সক্ষম যুগ যুগ ধরে।