skip to content
CurryNaari
Welcome to Nandini’s world of cooking & more...

মাটন বা খাসির মাংস নরম তুলতুলে জুসি বানাতে হলে মেনে চলুন এই ৭টি টিপস

মাটন কারি নান ও টমেটো

মুরগীর মাংসের চাইতে খাসির মাংস রান্না করা একটু কঠিন। মুরগী যতটা সহজে সেদ্ধ হয়, খাসি ততটা সহজে সেদ্ধ হয় না। রান্নার পরে শক্ত হয়ে থাকে। খেতেও স্বাদ লাগে না। হাজার চেষ্টা করেও মাংস রেস্টুরেন্টের মতো টেন্ডার ও জুসি হয় না। তাই মাটন বা খাসির মাংস নরম তুলতুলে জুসি করতে চাইলে মেনে চলুন এই ৭টি টিপস। আর ঘরে বসেই পান রেস্টুরেন্টের মতো স্বাদ।

১. মাংস বাছাই করুনঃ

মাংস কেনার সময় বাছাই করে কেনা জরুরি। ফ্রোজেন মাংসে কনসিসটেন্সি থাকে না। শীতাতপে থাকার কারণে সেটার পুষ্টিগুণও জমে যায়। সেটা রুম টেম্পারেচারে না আসা পর্যন্ত খাওয়ার উপযুক্ত হয় না, যা বেশ সময়সাপেক্ষ। ফ্রোজেন মাংস কেনা থেকে বিরত থাকুন। তাই খাসির মাংস যখন কিনবেন তখন ফ্রেশ দেখে কিনবেন। দোকানে সদ্য জবাই করা পশুর মাংস সকাল থেকে বিক্রি শুরু হয়। এই সময়ের মাংস কাটা এবং রান্না করা বেশ আরামদায়ক হয়। 

যত বেলা পড়ে মাংস তত বাতাসে শুকিয়ে নেতিয়ে যায়। তাই পড়ন্ত বেলায় মাংস না কেনাই ভালো। আবার সব মাংসে কিন্তু চর্বি সমান থাকে না। রান, ঘাড়, কাঁধ, পাঁজরের মাংসে টিস্যু এবং চর্বি বেশি থাকে। তাই অন্যান্য অংশের মাংসের চাইতে এই অংশের মাংস বেশি স্বাদযুক্ত হয়। এগুলো দিয়েই সাধারণত গ্রিল, কাবাব, কাটলেট ইত্যাদি তৈরি হয়। তাই কেনার সময় রান, পাঁজর, বা ঘাড় ও কাঁধের মাংস দেখে কিনবেন। 

২. মাংস নরম করুনঃ

  • গ্রিল, স্টেকের জন্য এই স্টেপটি ফলো করতে হবে। বাজার থেকে কিনে আনার পরে মাংস পিটিয়ে পাতলা এবং নরম করে নেবেন৷ বাজারে মিট টেন্ডারাইজার বা মিট ম্যালেট নামক এক ধরণের হাতুড়ি পাওয়া যায়। সেটা না পেলে বিকল্প হিসেবে বেলন ব্যবহার করতে পারেন।
  • পেটানোর কারণে মাংসের শক্ত ফাইবারগুলো ভেঙে যায়। ফলে মাংস সুসেদ্ধ হয় এবং নরম থাকে অনেকক্ষণ। তবে বেশি পেটানো যাবে না, এতে মাংস থেঁতলে যাবে। মিট টেন্ডারাইজারের রুক্ষ অংশ দিয়ে মাংসের একপাশ হালকা করে পেটাবেন। পেটানোর আগে অবশ্যই মাংসের টুকরা দুইটি ফুড-গ্রেড প্লাস্টিক র‍্যাপ দিয়ে মুড়ে নেবেন। 
  • বেলন যদি বিকল্প হিসেবে না থাকে, তাহলে কাঁটা চামচ দিয়ে ক্রস প্যাটার্নে মাংস খুঁচিয়ে নেবেন। হাত দিয়েও মাংস নরম করা যাবে। মুষ্টিবদ্ধ হাত দিয়ে জোরে জোরে মাংসের গায়ে আঘাত করবেন। 
  • মাংস ডিপ ফ্রাই করার ক্ষেত্রে নিয়ম কিছুটা পরিবর্তন হবে। টেন্ডারাইজারের সূঁচালো অংশ দিয়ে মাংসের উভয় পাশে কয়েক মিনিট ধরে আঘাত করতে হবে৷ এতে কানেক্টিভ টিস্যুগুলো ভেঙে যাবে। 

৩. সঠিক ভাবে কাটুনঃ 

  • অনেকে মনে করেন মাংস একভাবে কেটে টুকরা করলেই হয়ে গেলো। কিন্তু মাংস কাটার উপরও নির্ভর করে মাংস কতটুকু শক্ত বা নরম থাকবে। নিয়ম মেনে রান্না করার পরেও এটা রাবারের মতো লাগবে খেতে যদি ভুল নিয়মে কেটে থাকেন। 
  • কাঁচা অবস্থায় যখন কাটবেন তখন সবার আগে খেয়াল করবেন মাংসের লম্বা মাসল ফাইবারগুলো কোন ডিরেকশনে আছে। যে ডিরেকশনে আছে, সেই ডিরেকশন বরাবর সমান্তরাল করে কাটবেন না। এভাবে কাটলে মাংসের শক্ত প্রোটিন ভাঙা সম্ভব হয় না। ফলে কাটতে অনেক সময় লাগে, চিবোতেও বেশ বেগ পেতে হয়। 
  • সুতরাং প্রোটিনের বন্ডিং ভাঙতে হলে মাসল ফাইবারের বিপরীতে আড়াআড়ি করে কাটবেন। তাতে অনায়াসে টুকরা করা যাবে। এভাবে কাটলে ম্যারিনেড সহজে মাংসের ভিতর প্রবেশ করতে পারে। 

৪. লবণ মাখানঃ  

  • মাংস কাটার পরে লবণ মাখিয়ে রাখতে হয় যাতে ভিতরের অতিরিক্ত জল বের হয়ে যায় আর লবণ মাংসে ঢুকে যায়। লবণে যত ভালো মজবে মাংস তত নরম এবং সুস্বাদু হবে। আবার এটা মাংসের লাল রংকে গাঢ় করতেও সাহায্য করে। 
  • ম্যারিনেট করা মাংস সর্বোচ্চ কয়েক ঘন্টা রাখা যায়, কিন্তু শুধু লবণ মাখিয়ে মাংস ২৪ ঘন্টা পর্যন্ত রাখা যায়। অতিরিক্ত জল থাকলে সেটা বের করার জন্য এতক্ষণ রাখতে হয়। জল না ঝরিয়ে নিলে সেদ্ধ হবে না মাংস। তাই ভালো করে জল নিংড়ে শুকিয়ে এরপরে মাংস রান্না করা উচিত।
  • স্টেক বানানোর জন্য ৪ সেন্টিমিটার পুরুত্বের মাংস নেবেন। এরপরে টুকরার উভয় পাশে কোষার সল্ট মাখিয়ে কমপক্ষে ১ ঘন্টা রেখে দিন। এতে বাড়তি জল, ফ্যাট, এবং প্রোটিন বেড়িয়ে যাবে। চাইলে ১ ঘন্টার বেশি সময় রাখতে পারেন, তাতে আরো নরম হবে। এরপরে জল ঝরিয়ে শুকিয়ে স্টেক বানাবেন। 
  • রান্নার মাঝখানে মাংসে সাধারণ খাওয়ার লবণ ছিটিয়ে দিলে মাংস শুকিয়ে যায়, আকার ছোট হয়ে যায়, এবং স্বাদ নষ্ট হয়ে যায়। আকার ও স্বাদ ঠিক রাখার জন্য রান্নার মাঝামাঝি সময়ে কোষার সল্ট দিয়ে দেবেন। লবণের রং হালকা বাদামী হলে বুঝবেন মাংস সিদ্ধ হয়েছে। 

৫. ম্যারিনেট করুনঃ 

মাংস নরম করার জন্য ম্যারিনেটিং একটা বড় ভূমিকা পালন করে। মাংসের পিস যত বড় আর মোটা, ম্যারিনেটিং প্রসেস তত দীর্ঘ হতে হয়। আবার নির্দিষ্ট কিছু ধরণের রান্নার জন্য মাংস ভিন্নভাবে ম্যারিনেট করতে হয়। 

ম্যারিনেট করার সময় সীমাতেও পার্থক্য আছে। সবচেয়ে ভালো নিয়ম হচ্ছে, মাংস ম্যারিনেট করে ৭-৮ ঘন্টা রেখে দেওয়া বা সারারাত রেখে দেওয়া। অবশ্যই সেটা ফ্রিজে রাখতে হবে। কখনো কখনো পুরো এক দিন রেখে দিতে হয়। মোটকথা, রেসিপি বুঝে ম্যারিনেট করার সময় বাড়াতে হয়। সর্বনিম্ন ৩০-৪৫ মিনিট রাখতে হবে যদি হাতে একদমই সময় না থাকে। এবারে আসি ম্যারিনেট করার উপাদানে। টক দই, ভিনেগার, লেবুর রস, কাঁচা পেঁপের খোসা বাটা, আনারস, কিউয়ি, ওয়াইন, বাটারমিল্ক, টমেটো সস ইত্যাদি ম্যারিনেড হিসেবে ব্যবহৃত হয়। অনেকে জায়ফল ব্যবহার করেন ম্যারিনেটিংয়ে। এতে মাংসের স্বাদ পাল্টে যায়। সোজা কথায়, যেটা দিয়ে মাংস ম্যারিনেট করবেন সেটা যেন অ্যাসিডিক হয়। 

অ্যাসিডিক প্রোপার্টিজ সমৃদ্ধ উপকরণ মাংসের কোলাজেন দুর্বল করে ফেলে। ফলে মাংসের প্রোটিন এবং সলিড ফাইবার, যা মাংসকে শক্ত রাখতে সাহায্য করে, তা ভেঙে যায়। এতে মাংস নরম হয়ে যায় এবং দাঁত দিয়ে ছিঁড়তে অসুবিধা হয় না। ম্যারিনেড কিন্তু মাংসের স্বাদ বৃদ্ধি এবং ময়েশ্চারাইজ করে। ফলে খেতে বেশ জুসি লাগে। কাবাব, কাচ্চি বিরিয়ানির মাংস টক দই, পেঁপে বাটা, বা ভিনেগার-লেবুর রসের মিশ্রণে মাখিয়ে সারারাত রাখবেন। টক দই আর ভিনেগার দিয়ে মাখিয়ে রাখতে পারেন যদি ম্যাক্সিমাম ফ্লেভার চান। কাটলেটের জন্য প্রস্তুতকৃত মাংস ভিনেগার-লেবুর রসের মিশ্রণ বা টমেটো সস দিয়ে ম্যারিনেট করবেন। 

আনারস, কাঁচা পেঁপে, কিউয়ি ইত্যাদি টক ফলের পেস্ট অন্য উপকরণের তুলনায় মাংস দ্রুত নরম করে। লেবুর রস বা কিউয়ি পেস্টের সাথে লবণ আর গোলমরিচ মিশিয়ে ব্যবহার করলে ভালো হয়। হাতে বেশি সময় না থাকলে কাঁচা পেঁপে বা এর খোসা বাটা, আনারস বাটা দিয়ে মাংস মাখিয়ে রাখবেন। 

আনারসে বিদ্যমান ব্রোমেলেইন দীর্ঘক্ষণ ম্যারিনেটিংয়ের কারণে মাংস গলিয়ে ফেলে। তাই আনারস শুধু ইমার্জেন্সিতেই ব্যবহার করবেন। আপনি যে-ই ম্যারিনেডই ব্যবহার করুন না কেন, অবশ্যই পর্যাপ্ত পরিমাণে ব্যবহার করবেন যাতে পুরো মাংসে সমানভাবে ছড়িয়ে যায়। ম্যারিনেটিংয়ের ঝামেলা একেবারে করতে না চাইলে শুধু লবণ দিয়ে কাজ চালিয়ে নিতে পারবেন। মাংসে ভালো করে লবণ মাখিয়ে ১-২ ঘন্টা রেখে দিন। তারপর জল ঝরিয়ে রান্না করুন। 

৬. লো হিটে রান্না করুনঃ 

মাংস রান্না করার সঠিক নিয়ম হচ্ছে গ্যাস স্টোভে লো হিটে কমপক্ষে ৩ ঘন্টা ধরে রান্না করা। হাই হিটে অল্পসময় ধরে রান্না করলে ভিতরের শক্ত ফাইবার, কানেক্টিভ টিস্যু, এবং কোলাজেন ভাঙতে পারে না। তাই মাংস রান্নার পরেও শক্ত থাকে। কম আঁচে অনেকক্ষণ ধরে রান্না করলে প্রেসার কুকারের দরকার পড়ে না। সাধারণ কড়াইতে মাংস সুসেদ্ধ করা যায়। 

লো হিটে রান্না করলে চর্বি এবং কানেক্টিভ টিস্যু গলে মিশে যায়। তাই মাংস খেতে রসালো লাগে। মাংস সেদ্ধ হয়েছে কিনা তা বোঝার জন্য হাড়সহ এক টুকরা মাংস নিন। হাড় থেকে মাংস অল্পতে আলগা হয়ে গেলে বুঝবেন রান্না ঠিকমতো হয়েছে। ভুল পদ্ধতিতে রান্না করলে হাড় থেকে মাংস গরম বা ঠান্ডা যেকোন অবস্থাতে সহজে ছাড়ানো যাবে না। তবে বেশিক্ষণ ধরে রান্না করলে মাংসের রস শুকিয়ে যেতে পারে। এই অবস্থা এড়ানোর জন্য রান্নার সময়ে মাংসে বারবার জল, ওয়াইন, স্টক, ব্রোথ, বা স্ট্যু ঢালতে হবে। মাংস ওভারকুকড হয়েছে না আন্ডারকুকড রয়েছে তা বোঝার জন্য মিট থার্মোমিটার ব্যবহার করতে পারেন। সাধারণত হাড় ছাড়া মাংস ১২৫° ফারেনহাইট এবং বুকের মাংস ১৯৫° ফারেনহাইট তাপমাত্রায় রান্না করতে হয়।  

আবার খাসির পিছনের অংশ, যেমন রানের মাংস অল্প সময় ধরে রান্না করা উচিত। বেশিক্ষণ গ্যাসে রাখলে শক্ত, রাবারের মতো হয়ে যাবে। আবার কাঁধ বা পিঠের মাংস সময় নিয়ে রান্না না করলে খাওয়ার যোগ্য হয় না। কড়াইতে মাংস দিলে সাথে সাথে বা ঘন ঘন নাড়ানো উচিত না। এতে হিট ডিস্ট্রিবিউশনে ব্যাঘাত ঘটে। বেশি চর্বি যুক্ত মাংস এবং স্টেকের মাংস গ্রিল করা উচিত। এতে বাড়তি ফ্যাট গলে গিয়ে মাংস অনেক নরম ও রসালো হয়। গ্রিলিংয়ে যে ফ্যাট গলে তাতেই রান্না হয়ে যাবে, বাড়তি তেল বা মাখনের প্রয়োজন পড়বে না। 

রান্না শেষ করার সাথে সাথে খাওয়া উচিত না। মাংসকে কিছুক্ষণ ‘বিশ্রামে’ রাখতে হয়। এতে মাংসের ভিতরের রস পুনরায় পুরো মাংসে ছড়িয়ে পড়ার সুযোগ পায়। রান্নার সাথে খাওয়া শুরু করলে এই জুস রিডিস্ট্রিবিউশন হয় না। ফলে ঠান্ডা হলে মাংস শুষ্ক ও শক্ত হয়ে যায়। স্টেকের ক্ষেত্রে প্রতি ইঞ্চি থিকনেসের জন্য ৫ মিনিট করে বরাদ্দ রাখতে হবে। যেমন, ৪ ইঞ্চি মোটা স্টেক ২০ মিনিট রেস্টে রাখতে হবে। প্রতি পাউন্ড রোস্টের জন্য সময়টা হতে হবে ১০ মিনিট। 

৭. বেকিং সোডা ব্যবহার করুনঃ

  • সিনিয়র জেনারেশন রান্নার অনেক কৌশল জানতেন। তাদের রান্না যুগের পর যুগ পেরিয়ে গেলেও মুখে স্বাদ লেগে থাকে। মাংস রান্নায় বেকিং সোডার ব্যবহার ঠিক সেরকম একটি টোটকা।
  • মাংস যখন এক-তৃতীয়াংশ সেদ্ধ হবে তখন বেকিং সোডা দিতে হবে। পরিমাণ হবে প্রতি হাফ কিলো মাংসের জন্য ১ চা চামচ করে বেকিং সোডা। বেকিং সোডা মাংস নরম করে। তবে বেকিং সোডা দিলে অন্য কোন সফটেনার মাংসে দেওয়া যাবে না। 
  • কারণ বেকিং সোডা অন্য উপকরণের সাথে বিক্রিয়া করে ফেনার সৃষ্টি করে। যেমন টমেটো দিয়ে মাংস রান্না করার সময়ে বেকিং সোডা দিলে তেল ছিটে গা পুড়তে পারে।

Visual Stories

Article Tags:
Article Categories:
Tips & Hacks

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

মুখরোচক ফ্রাইড রাইসের ৯ টি রেসিপি বাঙালীর ঐতিহ্যবাহী সকালের জলখাবার বাঙালির ১০ টি আচার যা জিভে জল আনে নিমেষে! মধ্যপ্রাচ্যে খুবই বিখ্যাত এই ৯ টি বাঙালির খাবার অযোধ্যার বিখ্যাত ঐতিহ্যবাহী ১০ টি খাবার!