বাঙালীর ফুলকো লুচি সারা দুনিয়া বিখ্যাত। লুচি বানানো যত সহজ আমাদের মা-ঠাকুমার কাছে, আমাদের জন্য ততটাই চ্যালেঞ্জিং। লুচি গোল বানাতে গিয়ে প্রথমেই হিমশিম খেতে হয়েছে অনেককেই। তারপর সবচেয়ে বড় টাস্ক হয়ে দাঁড়ায় লুচি ফুলকো হল কিনা। একটা ফোলে তো আরেকটা তেলের নিচে দোলে। যাই হোক ‘কষ্ট করলে যেমন কেষ্ট মেলে’ তেমনই লুচি বানানোর সঠিক বিধি মেনে তা বানালে নরম ফুলকো লুচি হতে বাধ্য। বন্ধুরা যাদের বানানো লুচি ফুলকো হয় না তাদের সাথে আমিও আছি। এক সময় আমিও পারতাম না। তবে এখন একদম পারফেক্ট লুচি বানাই। কিভাবে? সেই কথাই আজ আপনাদের সাথে শেয়ার করছি।
নরম গরম লুচি এবার ফুলবেইঃ
- রান্নাঘরের তাক থেকে ময়দার বয়াম নামিয়ে নিন। একটা বড় স্টিলের গামলায় ৪ কাপ ময়দা ঢালুন। একদম পাক্কা রাঁধুনির মত স্টাইলে। আগে থেকেই ময়দা মাখার জন্য আন্দাজ মত জল গরম করে রাখুন। আন্দাজ না থাকলে কই বাত নাহি, ২ গ্লাস জল গরম করে নিন।
- এবার গামলায় রাখা ময়দায় ১/৪ চা চামচ নুন, ৪ চামচ তেল আর সামান্য চিনি মেশান। ভালো করে ময়দার সাথে ডোলে ডোলে মাখুন। মেশানো হয়ে গেলে একদম কিপটের মত করে করে গরম জল দিন। নতুন রাঁধুনিদের বলে রাখি ফুটন্ত গরম জল ঢেলে দেবেন না। কম উষ্ণ জল, যাতে আঙুল ডোবালে ছ্যাকা খাবেন না।
- জল অল্প অল্প করে দিয়ে ময়দা মাখতে থাকুন। কাদা কাদা করে দেবেন না। আঙুল দিয়ে টিপলে ময়দা মাখা চ্যাপ্টা হয়ে গিয়ে যেন আবার সমান হয়ে যায়। ঘড়ির কাটা ধরে ১০ মিনিট ময়দা মাখুন। ফাঁকি দিলে কিন্তু লুচিও বিশ্বাসঘাতকতা করবে। ফুলবে না, নরমও হবে না।
ঘড়ির কাটা দেখতে থাকুনঃ
- আপনার ঘড়ির কাটায় যদি ১০ মিনিট হয়ে যায় তাহলে এবার পরিষ্কার কাপড় ভিজিয়ে সব জল নিংড়ে এতে কাপড়টা চাপা দিয়ে দিন। ভাবছেন ‘বাবা এত সময়!’ লুচি ফুলকো হবে বলে কি শুধু লুচি খাবেন নাকি? বানিয়ে ফেলুন নিজের পছন্দের তরকারি। আমি কি দিয়ে খাই? আমার পছন্দের চটপটে দুই আলু ভাজা রেসিপি দিয়ে লুচি খেতে আমি ভালোবাসি।
- লুচির জন্য বানিয়ে ফেললেন তরকারি! আশাকরি ৩০ মিনিট হয়ে গিয়েছে। এবার ময়দা মাখা থেকে একটু একটু করে লেচি মানে ময়দার টুকরো বের করে নিন। একটা টুকরো নিয়ে ভালো করে জ্যামিতির গোল বানান। এবার লেচির মাথার উপর সামান্য তেল লাগিয়ে বেলে নিন।
- আগের সেই ভেজানো কাপড়টা দিয়ে যেগুলো বেলা হয়ে যাচ্ছে ঢেকে রাখুন। সবকটা টুকরো বেলা হলে গরম তেলে একটা একটা করে ভাজুন।
- লুচি ভাজার সময় তেল যেন ভালো গরম থাকে। তেলে দিয়েই লুচি ভাজার ঝাঁজরি দিয়ে নিচের দিকে হালকা চাপ দেবেন। ব্যাস কেল্লাফতে। নরম নরম ফুলকো লুচি রেডি। তাহলে আর অপেক্ষা কিসের এবারে একদিন এই টিপস কাজে লাগিয়ে বাড়ির সবাইকে তাক লাগিয়ে দিন। ‘কোথা থেকে শিখলি’ জানতে চাইলে আমার নাম বলতে ভুলবেন না।
বিশেষ কথাঃ
লেখা পড়ে হেরে রে রে করে যারা আমায় বকার জন্য রেডি তাদের বলি ‘মাসিমা আপনার বানানো লুচি বেস্ট’। কিন্তু অনেকেই আমার মত আনাড়ি আছে যারা করে করে শেখে। অন্তত শিখতে চায় তাদের জন্য এই লেখা। তাই পিলিজ বকবেন না। দেখা হলে লুচি আর মাংস খাওয়াবো মাইরি বলছি!