ভারতীয় খাবারে বাহারী মশলার আধিক্য থাকে। তবে মশলাই একমাত্র স্বাদ নিয়ন্ত্রক নয়। লবণও মশলার মত সমান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মশলা কম থাকুক বা বেশি, লবণ ঠিকমতো না হলে পুরো খাবারটাই বিস্বাদ লাগে। আজকের আয়োজনে থাকছে বিভিন্ন ধরণের লবণ যা ভারতীয় খাবারে ব্যবহৃত হয়, সে সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য।
১. আয়োডাইজড লবণঃ
- ভারতীয় খাবারে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় আয়োডাইজড লবণ। আয়োডাইজড লবণ দেখতে সাদা রঙের হয়। খাবার টেবিলে এই লবণ থাকে বলে ইংরেজিতে এটি টেবিল সল্ট হিসেবে পরিচিত।
- এই লবণ দৈনন্দিন ব্যবহারের যোগ্য। রান্নায় খুব সহজে দ্রবীভূত হয় আয়োডাইজড লবণ। মানবদেহে যতটুকু আয়োডিনের দরকার আছে তার পুরোটাই এই লবণে আছে।
- তবে আয়োডাইজড বা আয়োডিন যুক্ত লবণ খাওয়ার কিছু নিয়মকানুন আছে। প্রয়োজনের অতিরিক্ত খেলে শরীরে অসুখ বাসা বাঁধে।
২. কোষার লবণঃ
- আয়োডিনযুক্ত লবণের পরে দ্বিতীয় বহুলভাবে ব্যবহৃত লবণ হচ্ছে কোষার সল্ট। সাধারণ টেবিল সল্টের চাইতে কোষার সল্ট একটু আলাদা। এর দানা আকারে বড় হয়। তাই পরিমাণের দিক থেকে কোষার লবণ সাধারণ লবণের চাইতে একটু বেশি লাগে। যেমন ১ চা চামচ আয়োডাইজড লবণের সমান কোষার লবণ লাগে দেড় থেকে ২ চা চামচ।
- কোষার লবণ বডি সেলের ইলেক্ট্রোলাইট ব্যালেন্স ঠিক রাখে। একইসাথে এটি ব্লাড সেলস এবং ব্লাড ভেসেলস রক্ষণাবেক্ষণ করে। আয়োডাইজড লবণের মতো কোষার লবণ রান্নায় সহজে দ্রবীভূত হয়।
- তবে এই লবণ একবারে অনেকটা দেয়া যায় না। প্রথমে পেঁয়াজ ও অন্যান্য মশলার সাথে একটুখানি দিয়ে নাড়তে হয়, এরপরে রান্নার শেষের দিকে আরেকটু লবণ দিয়ে খাবারের স্বাদ ঠিক করে নিতে হয়।
৩. ব্ল্যাক সল্টঃ
- আয়োডিন বা কোষার লবণের চাইতে ব্ল্যাক সল্ট ভারতীয় রান্নায় তুলনামূলকভাবে বেশি ব্যবহৃত হয়। নামে ব্ল্যাক হলেও এটি দেখতে কিন্তু ব্ল্যাক না। রঙের দিক থেকে ব্ল্যাক সল্ট গাঢ় গোলাপি বা গোলাপি আভাযুক্ত বাদামি রঙের হয়।
- সালফার বিদ্যমান থাকায় ব্ল্যাক সল্ট আয়োডিনযুক্ত ও সামুদ্রিক লবণের চাইতে আলাদা। খাবারে এই লবণ টক-ঝাঁজালো স্বাদ যোগ করে। বিভিন্ন টক ফলের চাট, দই বড়া ইত্যাদি খাবারে ব্ল্যাক সল্ট ব্যবহৃত হয়। আমরা যেটাকে বিট লবণ বলি সেটিই হচ্ছে ব্ল্যাক সল্ট।
৪. পিঙ্ক সল্টঃ
- পিঙ্ক সল্ট বা পিঙ্ক হিমালয়ান সল্ট বরই, আমড়া, কামরাঙ্গা, পেয়ারা ইত্যাদি ফলের সাথে খাওয়া যায়। আবার কেউ কেউ সিঙ্গারা সাথেও খেয়ে থাকেন এই লবণ।
- পিঙ্ক সল্টে আয়োডিন বা আয়রন কোনটাই থাকে না কিন্তু মিনারেল থাকে প্রচুর। যা শরীরের জন্য দারুণ উপকারী। স্বাদ ও সাদৃশ্যে এটি বিট লবণ বা ব্ল্যাক সল্টের কাছাকাছি।
- বেকিংয়ের জন্য পিঙ্ক সল্ট ব্যবহার করা হয়। খাবারে হালকা গোলাপি আভা আসবে, সাথে খেতেও একটু মিষ্টি লাগবে। টপিং হিসেবেও পিঙ্ক সল্ট ব্যবহার করা যায়। খাবারের উপরে একটু ছিটিয়ে দিলে খেতে নোনতা-মিষ্টি লাগবে।
৫. গ্রিল সল্টঃ
রোস্ট, গ্রিল, বারবিকিউ, তন্দুর, কাবাব, পনির কাবাব, ইত্যাদি খাবারে গ্রিল সল্ট ব্যবহৃত হয়। তান্দুরি চিকেন বা কাবাবের উপর গ্রিল সল্ট ছিটিয়ে দিতে হয়। তাতে খাবারের স্বাদ পরিপূর্ণ হয়। এসব হেভি খাবার সুসিদ্ধ করতে গ্রিল সল্ট পরোক্ষভাবে কাজ করে।
৬. ডাবল ফর্টিফাইড সল্টঃ
এই ধরণের লবণ স্বাদে ও পুষ্টিতে আয়োডাইজড লবণের মতই৷ পার্থক্য হচ্ছে, ডাবল ফর্টিফাইড লবণে আয়রন যুক্ত থাকে, যেটা সাধারণ আয়োডিন লবণে থাকার সম্ভাবনা কম। আয়রনের সংযুক্তি থাকার কারণে এই লবণ অ্যানিমিয়া দূর করতে সহায়ক। যেকোন রান্নায় ডাবল ফর্টিফাইড লবণ ব্যবহার করা যায়।