জলখাবার বানানো বা রান্নার কাজে প্রায়ই আমরা বাটার ব্যবহার করে থাকি। দোকান থেকে কেনা বাটারে প্রিজারভেটিভ মেশানো থাকে। আবার কমার্শিয়াল বাটার বহুদিন দোকানে পড়ে থাকলে তার ফ্রেশনেস থাকে না। যার কারণে দোকানের বাটার দিয়ে বানানো খাবার তেমন একটা স্বাদের হয় না। অন্যদিকে ঘরে বানানো বাটার যথেষ্ট ফ্রেশ থাকে, পছন্দ মতো স্বাদ মিশিয়ে আপগ্রেড করা যায়, আবার এটি খেতেও বেশ সুস্বাদু। তাই অযথা পয়সা খরচা না করে ঘরেই ফ্রেশ বাটার বানানো শ্রেয়। আজকের আর্টিকেল থেকে জানতে পারবেন ঘরে কিভাবে বাটার বানাবেন সে সম্পর্কে বিস্তারিত।
ঘরে কিভাবে বাটার বানাবেনঃ
ঘরে আপনি দুই ভাবে বাটার বানাতে পারেন – হাতে কিংবা মেশিনের সাহায্যে। যে পদ্ধতিতে বানান না কেন, বানানো বাটার থেকে বাটারমিল্ক একেবারে আলাদা করে ফেললে বাটার ২-৩ সপ্তাহ পর্যন্ত ভালো থাকে। বেশীদিন স্টোর করার জন্য এয়ারটাইট কন্টেইনারে ভরে ফ্রিজে রেখে দেবেন৷ হাতে বানানো বাটারে যদি নুন মেশান তাহলে তা ডিপ ফ্রিজে ১ বছর পর্যন্ত ভালো থাকবে। আর নুন না মেশালে ৬ মাস পর্যন্ত ভালো থাকবে। এবারে জেনে নিন কোন পদ্ধতিতে কিভাবে বাটার বানাবেন।
ক. হাতের সাহায্যে বাটার বানানোঃ
একটি মাঝারি সাইজের ঢাকনাওয়ালা কাচের জার নিন। জারে হেভি ক্রিম ঢেলে নিন, অর্ধেক জায়গা খালি রাখবেন। এরপরে ঢাকনা টাইট করে আটকে জোরে জোরে ঝাঁকাতে থাকুন জারটি। এই পদ্ধতিতে শক্তি ও সময় দুটোই অনেক লাগবে। যখন ঝাঁকুনি শুরু করবেন তখন হালকা শব্দ শুনতে পাবেন। আস্তে আস্তে শব্দ ভারী হতে থাকবে, মনে হবে যেন জারের ভেতর শক্ত কিছু নড়ছে। ঝাঁকুনির কারণে ক্রিম থেকে বাটার আলাদা হয়ে যাওয়ার কারণে শব্দে ভিন্নতা আসবে।
ঢাকনা খুলে দেখুন ক্রিম পুরোপুরি ভাঙা হয়েছে কিনা। হয়ে থাকলে সলিড অংশটি হচ্ছে বাটার, আর যে লিকুইডটা পড়ে থাকবে সেটা হচ্ছে বাটারমিল্ক। চামচ দিয়ে বাটার তুলে আলাদা করে রাখুন। বাটারমিল্ক ঢেলে আলাদা করে রাখুন অন্য কাজে লাগানোর জন্য। হাতের সাহায্যে বাটার বের করলে বাটারমিল্ক পুরোটা আলাদা করা যায় না, বাটারে খানিকটা রয়ে যায়। যার কারণে হ্যান্ডমেইড বাটার একটু বেশী সফট থাকে। হাতে ঝাঁকালে ৩০-৪০ মিনিটের মত লাগতে পারে বাটার বের করতে। হাতের জোর বেশী থাকলে সময় আরো কম লাগতে পারে।
খ. ফুড প্রসেসরের সাহায্যে বাটার বানানোঃ
ফুড প্রসেসরের বোলে দেড় কাপের মত হেভি ক্রিম ঢেলে নিন। এরপরে ঢাকনা ভালো করে আটকে চালু করে দিন।যখন দেখবেন বোলের সাইডে লিকুইড ছিটে আসছে তখন মেশিন বন্ধ করে দিন৷ ঢাকনা খুলে দেখুন। যদি সলিড আর লিকুইড জিনিস পুরোপুরি আলাদা হয়ে যায় তাহলে বাটার আলাদা করে ফেলবেন। যদি দেখেন যে বোলের গায়ে ক্রিম লেগে গেছে আর মিক্সচারে ক্রিমি ভাবটা এখনো আছে, তাহলে চামচ দিয়ে সব এক জায়গায় করে আবার প্রসেস করুন। ফুড প্রসেসরে বাটার বের করতে সাধারণত ৪-৫ মিনিট সময় লাগে। এই মেশিনে প্রসেসড বাটারে কিছুটা বাটারমিল্ক থাকে।
গ. স্ট্যান্ড মিক্সারের সাহায্যে
স্ট্যান্ড মিক্সারের বোলে ৫০০ গ্রাম হেভি বা হুইপড ক্রিম ঢেলে নিন। ফ্লাট-ব্লেড বিটার ব্যবহার করে বিট করতে থাকুন, হুইস্ক-টাইপ বিটার ব্যবহার করবেন না। মিডিয়াম স্পীডে বিট করতে থাকুন, ক্রিম ঘন হতে শুরু করলে বিটিং স্পীড বাড়িয়ে মিডিয়াম হাই করবেন। আস্তে আস্তে ক্রিমের নরম ভাব চলে গিয়ে শক্ত হতে শুরু করবে। ৪-৫ মিনিটের মাথায় বাটার আলাদা হতে শুরু করবে। তখন যত তাড়াতাড়ি সম্ভব মিক্সারের উপর বড় একটি ডিশ টাওয়েল দিয়ে দিবেন যাতে বোলসুদ্ধ ঢেকে যায়। নয়তো ছিটকে বাইরে পড়ে যাবে। ক্রিম থেকে বাটার সম্পূর্ণ আলাদা হয়ে গেলে মিক্সার বন্ধ করে দিবেন। স্ট্যান্ড মিক্সারে বানানো বাটারে বাটার মিল্ক থাকেনা বললেই চলে।
ঘ. হাতে চালিত ইলেকট্রিক মিক্সারের সাহায্যেঃ
এই পদ্ধতি স্ট্যান্ড মিক্সারের পদ্ধতির মতই।। বড় একটি মিক্সিং বোলে ৫০০ গ্রাম হেভি বা হুইপড ক্রিম নিয়ে ইলেকট্রিক মিক্সারের সাহায্যে মিডিয়াম হাই স্পীডে বিট করতে থাকুন। এখানেও ফ্লাট-ব্লেড বিটার ব্যবহার করবেন।বাটার আলাদা হতে শুরু করলে বড় ডিশ টাওয়েল দিয়ে মিক্সার ও বোল সুদ্ধ ঢেকে ফেলুন। বাটার ও বাটারমিল্ক পুরোপুরি আলাদা না হওয়া পর্যন্ত বিট করবেন।
মেশিনের কর্মক্ষমতার উপর নির্ভর করে বাটার কতক্ষণে বানানো যাবে। সাধারণত ৬-৮ মিনিট সময় লাগে। আর এই ধরণের মিক্সারে বাটারমিল্ক আলাদা করা সহজ হয়।
ঙ. ব্লেন্ডারের সাহায্যেঃ
ব্লেন্ডার জারে ক্রিম ঢেলে নিন। এরপর হাই স্পীডে ব্লেন্ড করতে থাকুন। ব্লেন্ড করার সময় ক্রিম জারের গায়ে লেগে থাকতে পারে। মাঝে মাঝে চেক করে দেখবেন ক্রিম লেগে আছি কিনা। থাকলে জারের গা থেকে ক্রিম চামচ দিয়ে নামিয়ে ব্লেন্ড করবেন। যতক্ষণ না পর্যন্ত বাটার আর বাটারমিল্ক আলাদা হচ্ছে ততক্ষণ পর্যন্ত ব্লেন্ড করতে থাকবেন।
ব্লেন্ডার মেশিনের উপর নির্ভর করে কতটুকু সময় লাগবে। সাধারণত ৬-৭ মিনিটে হয়ে যায়। ব্লেন্ডার দিয়ে বানানো বাটার মিক্সারের বাটারের চাইতে একটু সফট হয়।
জল দিয়ে ধুয়ে নিনঃ
বাটার বানানোর সর্বশেষ ধাপ হলো এটি জল দিয়ে ধুয়ে নেোয়া। বাটারমিল্ক সরানোর পরে যে বাটার থাকবে তা পনিরের মত শক্ত থাকবে। এবার এই শক্ত বাটার পরিষ্কার জলে ডোবান। তারপর আটা বা ময়দার ডো যেভাবে হাতে মথে নেন ঠিক সেভাবে বাটারও জলে থাকা অবস্থায় মথে নিন। দেখবেন জল ঘোলা হয়ে যাচ্ছে। তারপর জল বদলে আবারও মথে নিন। জলে ধোয়ার উদ্দেশ্য হচ্ছে বাটারে যে মিল্কটুকু থাকবে সেটা সম্পূর্ণ বের করে নেওয়া৷ ঐটুকু মিল্ক বাটারে থাকলে বাটার খুব তাড়াতাড়ি নষ্ট হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে। কয়েকবার জল বদল করে ধোয়ার পরে যখন দেখবেন আর ঘোলা হচ্ছে না তখন ধোয়া বন্ধ করে দিন। সবশেষে বাটার ফ্রিজে রেখে স্টোর করুন।