skip to content
CurryNaari
Welcome to Nandini’s world of cooking & more...

মাংস রান্নায় ঝাল বেশি হলে তা কমানোর ১১টি উপায়

meat

ছুটির দিনে বেশ জমিয়ে মাংস রান্না করলেন। কিন্তু ঝোল চেখে দেখতে গিয়ে সর্বনাশ টের পেলেন। এমন ঝাল হয়েছে যে মুখেই তোলা যাচ্ছে না। এই খাবার বাকি সদস্যদের পাতে কিভাবে তুলে দেবেন তা চিন্তা করেই আপনার মাথা খারাপ হওয়ার অবস্থা। আপনার এই করুণ দশা ঠেকাতে আজকে নিয়ে এসেছি মাংসে ঝাল কমানোর উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা৷ ঝটপট পড়ে ফেলুন আর জেনে নিন কিভাবে সহজে তরকারির ঝাল কমানো যায়৷

১. অ্যাসিডিক উপাদানঃ

লঙ্কার ঝালে ক্যাপসেইসিন নামক এক ধরণের যৌগ থাকে। এই যৌগ তাজা থাকুক বা শুকনো, স্বাদকোরকের সংস্পর্শে আসলেই তা ঝালের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। রান্নার কাজে ব্যবহৃত অ্যাসিডিক উপাদান দিয়ে এই ঝাল কমানো সহজ। অ্যাসিড লঙ্কার পিএইচ লেভেল হালকা করতে সাহায্য করে, তাই ঝালও কম লাগে।

মাংসের তরকারিতে ঝাল বেশী হয়ে গেলে লেবুর রস, ভিনেগার, টমেটো, বা আনারস ব্যবহার করবেন। লেবুর রস, ভিনেগার, টমেটো সসের ক্ষেত্রে ১-২ টেবিল চামচের বেশী দেয়া যাবে না৷ এগুলো না থাকলে আস্ত টমেটো বা আনারস কুচি করে দিতে পারবেন।

১ কাপের এক চতুর্থাংশ টমেটো বা আনারস কুচি ঝাল তরকারিতে দিবেন। ঢালার পরে ভালো করে নাড়তে থাকুন। ১৫-৩০ মিনিট পরে চেখে দেখুন ঝাল কমেছে কিনা। না কমলে আরেকটু দেবেন। যদি দেখেন তরকারিটাই এখন টক হয়ে গেছে তাহলে অন্য কোন উপাদান মেশাবেন স্বাদের ব্যালেন্স করার জন্য।

২. সুইটেনারঃ

ঝাল কমে তরকারি টক হয়ে গেলে মিষ্টি বা মিষ্টিজাতীয় কিছু ব্যবহার করুন, যেমন চিনি, মধু, গোল্ডেন সিরাপ, বা অন্য যেকোন সুইটেনার। মিষ্টি ঝালের তীব্রতা কমায়, তাই ঝাল কিছু খাওয়ার পর পানির বদলে চিনি খেলে ঝাল ভাব দ্রুত কমে যায়।

মাংসের তরকারি বেশী ঝাল হয়ে গেলে ১ চা চামচ চিনি বা মধু মিশিয়ে দিন। নাড়ার পরে কিছুক্ষণ রেখে দিন যাতে স্বাদ ব্লেন্ড হয়ে যায়। চেখে দেখার পরে প্রয়োজনে আবার সামান্য একটু চিনি মেশাবেন।

৩. তেলঃ

বাড়তি তেল যোগ করেও ঝাল কমাতে পারেন। এর জন্য নিউট্রাল স্বাদের তেল নিতে হবে। যাতে ঝালও কমে আবার স্বাদও পরিবর্তন না হয়। ক্যাপসেইসিনের মলিকিউল তেলের সংস্পর্শে আসলে হালকা হয়ে যায় বা গলে যায়।

অলিভ অয়েল, কোকোনাট অয়েল, বা গ্রেপসিড অয়েল খাবারের স্পাইসিনেস কমানোর জন্য ব্যবহার করবেন। ১ চা চামচের বেশী ব্যবহার করবেন না। এই পরিমাণ তেল খাবারের টেক্সচার আর কনসিসটেন্সিও ঠিক রাখবে।

৪. দুধ  বা দুধজাতীয় খাবারঃ

দুধও কিন্তু অ্যাসিড আছে। এতে ক্যাসিন নামক এক ধরণের উপাদান উপস্থিত থাকে। ক্যাসিনের পার্টিকেলগুলো ক্যাপসেইসিনের পার্টিকেলগুলোকে আবদ্ধ করে ফেলে এবং সেগুলোকে অদৃশ্য করে ফেলে। দুধ, টকদই, সাওয়ার ক্রিম, বাটার, ঘি, চিজ ইত্যাদি খাবার ঝোলে মেশানোর সময়ে সাবধানে থাকবেন। কারণ নির্দিষ্ট পরিমাণের চাইতে বেশী পড়ে গেলে ঝোলের কনসিসটেন্সি থাকবে না।

দুধ ঝোল পাতলা করার মাধ্যমে ঝাল কমিয়ে ফেলে৷ তরকারিতে দেয়ার জন্য হোল ফ্যাট মিল্ক ব্যবহার করতে হবে। ১৫ মিলি দুধ তরকারিতে দিয়ে ভালো করে মিশিয়ে নিন। এরপরেও ঝাল না কমলে আরেকটু দুধ মেশান। দুধ বেশী হয়ে গেলে ঝোল একেবারে পানি হয়ে যাবে। একই পরিমাণে ব্যবহার করতে পারেন কোকোনাট মিল্ক, দুধের পরিবর্তে। প্রয়োজনে পরে বাড়তি ১ বা ২ চামচ দেবেন যদি আগের চাইতে ঝাল না কমে।

যদি টকদই বা সাওয়ার ক্রিম মেশাতে চান, তাহলে অবশ্যই কাঠের চামচ ব্যবহার করবেন। প্রথমে ১৫ মিলি দই বা ক্রিম মেশাবেন, ঝাল না কমলে আরো ১ চামচের বেশী দেবেন না। তবে সাবধান, এর বেশী ঢাললে ঝোল ঘন হয়ে যাবে। দুধ, সাওয়ার ক্রিম, টকদই এগুলোর পরিমাণ মেইনটেইন করা ঝামেলার মনে হলে ১ টেবিল চামচ গ্রেটেড চিজ তরকারিতে ছড়িয়ে দিতে পারেন। আরো সহজ পদ্ধতি হলো, খাবার পাতে ছোট একটা বাটিতে টকদই বা সাওয়ার ক্রিম আলাদা করে পরিবেশন করা। বিভিন্ন হোটেল-রেঁস্তোরায় ঝাল খাবারের সাথে আলাদা করে দই, পনির, বা ক্রিম পরিবেশন করা হয়।

৫. বাড়তি খাদ্য উপকরণঃ

খাবারে ঝাল বেশী দিয়ে ফেলে বাড়তি কোন খাদ্য উপকরণ যোগ করুন। হতে পারে সেটা ডাল, সবজি, ব্রোথ, স্টক, বা কোন প্রোটিন আইটেম। এতে তরকারির পরিমাণও বাড়বে।

মাংসের তরকারির ঝাল কমানোর জন্য মাংস হতে পারে ভালো একটা অপশন। বাড়তি এক পোয়া মাংস নিবেন। প্রথমে মাংসটা রান্না করবেন, হালকা বাদামী এবং সিদ্ধ হয়ে আসলে যে তরকারিটা ঝাল হয়েছে সেখানে দিয়ে দিবেন।

সবজি দিলে চেষ্টা করবেন স্টার্চযুক্ত সবজি দেয়ার, যেমন আলু, গাজর, কুমড়া, মিষ্টি আলু। আলু বা গাজর ছোট টুকরা করে কেটে তরকারিতে দিয়ে অল্প আঁচে ১৫ মিনিট জ্বাল দিন। সবজি নরম হয়ে আসলে নামিয়ে ফেলুন। তবে এই সবজিগুলো যদি আগে থেকেই তরকারিতে থাকে তাহলে পুনরায় দিবেন না। অন্য কোন একটা সবজি ব্যবহার করবেন।

৬. বাদাম বাটাঃ

বাদাম বাটায় যতোটুকু ফ্যাট থাকে, তা লঙ্কার তীব্রতা কমানোর জন্য যথেষ্ট। নিরামিষভোজীদের জন্য এটা একটা বেস্ট অপশন। পিনাট বাটার, আমন্ড বাটার, কাজু বাটা, এমনকি কোকোনাট পেস্টও ব্যবহার করতে পারেন ঝাল কমানোর জন্য। মাংস রান্নার সময় যদি লঙ্কা গুঁড়ো বেশী দিয়ে ফেলেন তাহলে ১-২ চা চামচ বাদাম বাটা দিয়ে দিবেন। রান্নায় দিতে না পারলে খাবার পাতে বাদাম বাটা রাখবেন।

৭. রায়তাঃ

রায়তা তৈরি করে খাবার পাতে পরিবেশন করুন। এটা সস হিসেবে কাজ করবে। যেমনটা গ্রিলড চিকেন বা বারবিকিউয়ের সাথে খেয়ে থাকেন তেমন। শসা, টকদই, ধনেপাতা, পেঁয়াজ পাতা, ধনিয়া, এবং জিরা দিয়ে রায়তা বানাতে হয়।

৮. পেঁপেঃ

কাঁচা পেঁপে খোসা ও বিচি ছাড়িয়ে সালাদ করে খেতে পারেন। আবার কাঁচা পেঁপে টুকরা করে কেটেও খেতে পারেন। কাঁচা পেঁপে ঝাল কমানোর সাথে সাথে পেট পরিষ্কার করবে। মাংস খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। তাই খাওয়ার সময় পেঁপে খেলে সেই ভয়টা থাকে না।

৯. শর্করাঃ

আরেকটি সহজ সমাধান হচ্ছে, শর্করার আইটেমের সাথে মাংসের তরকারি খাওয়া। মাংস-ভাত তো আমরা সবাই খাই। তরকারি ঝাল হয়ে গেলে ভাতে ঝোল কম নিয়ে খাবেন, খাওয়া সহজ হবে। আবার চাইলে রান্নার সময়ে ভাত ঢেলে দিতে পারেন। সাদা, বাদামী, জেসমিন, বাসমতী ইত্যাদি চালের ভাত ব্যবহার করুন। ঝালটা কমে যাবে। পাউরুটি, রুটি, বা পরোটার সাথেও মাংস খেতে পারেন, ভাতের সমান ইফেক্ট পাবেন।

১০. দুইবার রান্নাঃ

প্রথমবার রান্না করার পরে একই দিনে আপনাকে পুনরায় মাংস রান্না করতে হবে – এমনটা যদি হয় তাহলে একটা কাজ করুন। দ্বিতীয়বার মাংস রান্নার সময়ে আর লঙ্কা দেবেন না। অথবা দিলেও খুব সামান্য পরিমাণে দিবেন। রান্না করার পরে প্রথম যে মাংসের তরকারিটা ঝাল হয়েছে, তার সাথে মিশিয়ে দিন। দুই তরকারি একসাথে মিক্স করলে ঝালটা ব্যালেন্স হয়ে যাবে।

১১. ঝালের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণঃ

অতিরিক্ত ঝালখোরেরা যদি একা থাকেন তাহলে পছন্দমতো ঝাল দিয়ে খেতে গেলে কেউ বাধা দেবে না। কিন্তু পরিবারের সাথে থাকলে না চাইলেও আপনাকে ঝালের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। মাত্রাতিরিক্ত ঝাল লঙ্কা বা লঙ্কা গুঁড়ো ব্যবহার করা এড়িয়ে যান৷

কম ঝালের লঙ্কা রান্নায় ব্যবহার করুন। কাশ্মীরি লঙ্কা গুঁড়ো -ব্যবহার করতে পারেন। এটাতে ঝাল কম কিন্তু তরকারিতে বেশ সুন্দর একটা রং এনে দেয়। স্যুপ বা সস বানাতে চাইলে পাপরিকা ব্যবহার করবেন।

Visual Stories

Article Tags:
· ·
Article Categories:
Food-kitchen-insights

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

মুখরোচক ফ্রাইড রাইসের ৯ টি রেসিপি বাঙালীর ঐতিহ্যবাহী সকালের জলখাবার বাঙালির ১০ টি আচার যা জিভে জল আনে নিমেষে! মধ্যপ্রাচ্যে খুবই বিখ্যাত এই ৯ টি বাঙালির খাবার অযোধ্যার বিখ্যাত ঐতিহ্যবাহী ১০ টি খাবার!