কই মাছ কেন, পৃথিবীর প্রায় সব মাছই যদি কিছু বা কাউকে ভয় পায়, তা একমাত্র আমরাদেরকে। মানুষের থেকে তাদের ভয় যে, সুযোগ পেলেই তাদের ধরে মসলা ফ্রাই বানিয়ে নেব। বাকি কিচ্ছুতে এদের ভয় নেই বলেই মনে হয়। আর বৃষ্টি বা বজ্রপাতের মত প্রাকৃতিক ব্যাপার স্যাপার তো মাছেদের কাছে আনন্দের। আসলে কই মাছ বৃষ্টি বা বজ্রপাতের সময় মাটিতে উঠে আসে কোন একটি কারনে। যা নিয়ে আজকের লেখা। কোন কিছুর ভয়ে ওরা জল ছেড়ে ডাঙায় উঠে আসে না। কি সেই কারন যার জন্য মাছ তাদের ধর্মের বিপরীত মুখী হয়ে ওঠে চলুন জেনে নেওয়া যাক।
কই মাছ মাটিতে উঠে আসাকে কি বলেঃ
হালকা বৃষ্টি থেকে শুরু করে ঝমঝমিয়ে বজ্রপাতসহ বৃষ্টির সময় গ্রাম বাংলার অনেক পুকুর, খাল-বিলে থাকা কই মাছ মাটির উপর উঠে এসে লাফালাফি শুরু করে দেয়। গ্রামের মানুষ এটাকে বলে ‘মাছ উজানো’। উজান শব্দটি এসেছে ‘উজানো’র উৎপত্তি, যার মানে হলো স্রোতের বিপরীত দিকে যাওয়া। এই বিষয় নিয়ে ইন্টারনেট কিংবা খুব বেশি বইতে তেমন কোনো তথ্য পাবেন না। এই বিষয়টি আসলে হল ট্যাক্সিস। যে সম্পর্কে প্রাথমিক ধারনা থাকলেই বুঝে যাবেন আসলে কেন কই মাছ জলের উপর ডাঙায় উঠে আসে।
ট্যাক্সিস এর কারনে উঠে আসে, বৃষ্টি বা বজ্রপাত নয়!
ট্যাক্সিস মানে হচ্ছে প্রাণীর দিকমুখিতা। সহজ করে যদি বলি, পরিবেশের তাপ, চাপ, আলো, শব্দ এসবের প্রাধান্য অনুযায়ী প্রাণীর ছুটে চলা। এসবের পরিমাপ করে পরিবেশের দিকে যখন প্রাণী ছুটে চলে, তখন তাকে বলা হয় পজেটিভ ট্যাক্সিস। কই মাছের ডাঙায় উঠে আসা হল পজিটিভ ট্যাক্সিস। যে সমস্ত প্রাণী বিশেষ করে মাছ স্রোতের দিকে যায় তাকে রিওট্যাক্সিস বলে। যা এক প্রকার পজিটিভ ট্যাক্সিস। বৃষ্টি হওয়ার সাথে সাথে পুকুর, খাল-বিল, নদীতে জল বেড়ে যায়। সেইসময় স্রোতের দিকে কই মাছ আস্তে শুরু করে। আকাশের দিক থেকে যেহেতু জলের স্রোত নামে তাই সেই দিকে লাফাতে থাকে। বিষয়টিকে অনেকেই নতুন জলের দিকে যাওয়া বলেন। তাছাড়া কই মাছের পাখনা বেশ শক্ত হয়ে থাকে তাই এরা মাটির উপরেও এসে লাফালাফি করতে পারে।
অন্য একটি কারনে কই মাছ ডাঙায় ওঠেঃ
মাটির উপরে এসে কই মাছের লাফালাফি করার আরেকটি কারন আছে। যা হল বহুদিন যাবত বৃষ্টি না হলে পুকুর বা জলাশয়ের জলে অক্সিজেন এবং খাবারের ঘাটতি দেখা যায়। সেই কারনে কই মাছ বৃষ্টির জলে পাওয়া অক্সিজেন ও খাবারের জন্য স্রোতের সঙ্গে উপরের দিকে আসার চেষ্টা করে। একেই রিওট্যাক্সিস বলা হয়। কেবলমাত্র কই মাছই নয়, শিং, মাগুর, গুতুম মাছও বৃষ্টির সময় স্রোতের দিকে লাফ দিয়ে ডাঙায় উঠে আসে। বৃষ্টি বা বজ্রপাতের জন্যেই যে কই মাছ ডাঙায় উঠে আসে এই বিষয়টি ঠিক নয়। আসল কারন আপনাদের জানিয়ে দিলাম।