লুচি মানেই সাদা আলুর তরকারি, বেগুন ভাজা নয়তো আলুর দম, ছোলার ডাল। সবসময় সত্যি ভালো লাগে না একই রকমের খাবার। মাঝে মাঝে কিছু অন্যরকম কিছু ট্রাই করুন। লুচি দিয়ে খাওয়া যায় এমন ৫ রকমের ইউনিক তরকারির রেসিপি নিয়ে হাজির। একেক বার একেকটা বানান। সত্যি বলতে একবার খেলে বারবার এগুলো বানাতে মন চাইবে। অসম্ভব টেস্টি খেতে লাগে লুচি দিয়ে খেতে। চলুন বকবক বেশি না করে দেখে নেওয়া যাক রেসিপি।
১. ধনেপাতা আলু রেসিপিঃ
খুবই চটপটা আর স্পাইসি খেতে হয় এটা। লুচি পরোটা দুটোর সাথেই দুর্দান্ত লাগে খেতে।
উপকরণঃ
- বড় সাইজের আলু ৫-৬ টা ডুমো ডুমো করে কাটা
- এক কাপ ধনেপাতা
- পালং শাকের পাতা ১০ টা
- কাঁচা লঙ্কা ৫-৬ টা
- শুকনো লঙ্কা ২-৩ টে
- আমচুর পাউডার এক চামচ
- লেবুর রস এক চামচ
- সরষের তেল তিন চা চামচ
- গোটা জিরে এক চামচ
- টক দই ২ চামচ
- নুন স্বাদ অনুযায়ী
পদ্ধতিঃ
আলু কেটে সেদ্ধ করে নিন প্রথমে। প্রায় ৭০% আলু সেদ্ধ করে নেবেন। মিক্সিতে ধনেপাতা, পালং শাক, শুকনো লঙ্কা, কাঁচা লঙ্কা, নুন ইত্যাদি দিয়ে পিষে নিন। এবার প্যানে তেল দিন এবং গরম হলে জিরা দিয়ে দিন। এবার সেদ্ধ আলু, যোগ করুন। কয়েক মিনিট ভাজার পর ধনেপাতার পেস্ট যোগ করুন এবং ৫ থেকে ৭ মিনিট রাখুন। মসলা কষানো হলে আমচুর পাউডার আর লেবুর রস মিশিয়ে কয়েক মিনিট রান্না করুন। স্বাদ অনুযায়ী নুন দিন। তৈরি হয়ে যাবে ধনেপাতা আলু।
২. মসলাদার বেগুন কারিঃ
অসম্ভব টেস্টি গ্রেভির মসলা বেগুন কারি। যা লুচি দিয়ে একবার খেলে বারবার খেতে চাইবেন।
উপকরণঃ
- বেগুন ৫০০ গ্রাম
- পেঁয়াজ ৩ টি (একটি সূক্ষ্ম করে কাটা এবং দুটি মসলার জন্য)
- টমেটো ২ টো
- আদা ২ ইঞ্চি
- রসুন ১০-১২ কোয়া
- শুকনো নারকেল ২ টেবিল চামচ (ঐচ্ছিক)
- কাঁচা লঙ্কা ৩-৪টি
- জিরা ১ চা চামচ
- সরষে দানা ১/২ চা চামচ
- হলুদ গুঁড়ো ১.৫ চা চামচ
- লাল লঙ্কার গুঁড়ো ৩ চা চামচ
- ধনে গুঁড়ো ২ চা চামচ
- জিরা গুঁড়ো ১ চা চামচ
- ভাজা চিনাবাদাম গুঁড়ো (ঐচ্ছিক)
- প্রয়োজন মত তেল
- লবণ স্বাদ অনুযায়ী
- তেজপাতা একটা
- গোটা গরমমসলা এক চামচ
পদ্ধতিঃ
প্রথমে বেগুনে একটি চির দিয়ে জলে ভিজিয়ে রাখুন। তারপর জল ঝরিয়ে তাতে শুকনো মসলা হলুদ, লবণ, লাল লঙ্কার গুঁড়ো দিয়ে দিন। কড়াইয়ে তেল দিয়ে বেগুন ভেজে তুলে রাখুন। একই তেলে আদা, রসুন, নারকেল, পেঁয়াজ, টমেটো দিয়ে ভালো করে ভেজে নিন। এবার ভাজা মসলাগুলো পিষে পেস্ট তৈরি করুন। এবার একটি প্যানে তেল গরম করে তাতে জিরা, সরিষা, তেজপাতা, গোটা মসলা দিয়ে ভেজে নিন এবং তারপরে মিহি করে কাটা পেঁয়াজ দিন। এর উপর হলুদ এবং লাল লঙ্কার গুঁড়ো এবং তারপর সেই ভাজা মসলা যোগ করুন। বাকি শুকনো মসলা যোগ করুন এবং আপনি চাইলে এতে চিনাবাদামের গুঁড়োও দিতে পারেন। ৪-৫ মিনিট রান্না হতে দিন। জল যোগ করে সামঞ্জস্য ঠিক করুন। এর পরে বেগুন যোগ করুন এবং ৮ মিনিট রান্না করুন। মাঝখানে বেগুন ঘুরাতে থাকুন যাতে আপনার সবজি সব জায়গা থেকে সমানভাবে রান্না হয়ে যায়। ধনেপাতা কুচি দিয়ে সাজিয়ে নিন এবং লুচির সাথে এই সুস্বাদু সবজিটি উপভোগ করুন।
৩. বেবি পটেটো মসলা ভেজিটেবলঃ
একদম ছোট ছোট আলু দিয়ে বানানো এই মসলা কারি লুচি দিয়ে খেতে জাস্ট অপূর্ব লাগে।
উপকরণঃ
- বেবি পটেটো ৪০০ গ্রাম
- টমেটো ২-৩টি
- কাঁচা লঙ্কা ২-৩টি
- আদা ১ ইঞ্চি লম্বা টুকরা
- তেল ১-২ চা চামচ
- হিং ১ চিমটি
- জিরা ১/২ চা চামচ
- হলুদ গুঁড়ো ১/৪ চা চামচ
- ধনে গুঁড়ো ১ চা চামচ
- ক্রিম বা মালাই ১-২ চামচ
- লাল লঙ্কার গুঁড়ো ১/৪ চা চামচ
- গরম মসলা ১/৪ চা চামচ
- ধনেপাতা কুচি সামান্য
পদ্ধতিঃ
ছোট আলুর শুধু খোসা ছাড়তে হবে, কাটতে হবে না। খোসা ছাড়িয়ে জলে ডুবিয়ে রাখুন। এবার টমেটো, আদা ও লঙ্কা ধুয়ে পেস্ট তৈরি করে নিন। কুকারে তেল দিয়ে গরম হতে দিন। তেল গরম হয়ে এলে প্রথমে হিং, তারপর জিরা, হলুদ গুঁড়ো ও ধনে গুঁড়ো দিয়ে হালকা ভেজে নিন। এখন এই মশলায় টমেটো পেস্ট ও ক্রিম যোগ করুন এবং ভালো করে ভাজুন। এই মসলাটি ভাজতে হবে যতক্ষণ না তেল মসলা থেকে আলাদা হতে শুরু করে। এবার জল থেকে আলু বের করে মসলা দিয়ে ভালো করে ভেজে নিন। এতে লাল লঙ্কার গুঁড়ো ও গরমমসলা দিন। এবার এতে ২-৩ চামচ জল দিন। স্বাদ অনুযায়ী লবণ দিয়ে কুকার বন্ধ করুন। কুকার শিস দিলে গ্যাস বন্ধ করে দিন। বেবি পটেটো মসলা ভেজিটেবল রেডি। একটি পাত্রে রাখুন এবং মিহি করে কাটা ধনেপাতা যোগ করে পরিবেশন করুন।
৪. কুমড়োর টেস্টি তরকারিঃ
কুমড়োর ছক্কা দিয়ে অনেকে লুচি খেতে ভালোবাসেন, তাদের জন্য কুমড়োর অন্যরকমের আরেকটি খাবার রইলো।
উপকরণঃ
- কুমড়া এক কেজি
- টমেটো ১টি
- আদা কুচি এক চামচ
- কাঁচা লঙ্কা ৪-৫ টি
- হলুদ গুঁড়ো ১/২ চামচ
- লাল লঙ্কা গুঁড়ো ১ চা চামচ
- ধনে গুঁড়ো ২ চা চামচ
- হিং ১ চিমটি
- জিরা ১/২ চা চামচ
- মেথি বীজ ১/২ চা চামচ
- শুকনো লাল লঙ্কা ২টি
- গরমমসলা ১ চা চামচ
- লবণ স্বাদ অনুযায়ী
- চিনি এক চিমটে
- তেল প্রয়োজন হিসাবে
পদ্ধতিঃ
কুমড়ো ছোট ছোট টুকরো করে কেটে নিন, সাথে টমেটো এবং কাঁচা লঙ্কাও ভালো করে কেটে নিন। প্যানে তেল গরম করে শুকনো লঙ্কা, জিরা, মেথি ও হিং দিয়ে ভেজে নিন। গোটা মসলা ভাজা হয়ে গেলে তাতে মিহি করে কাটা টমেটো, কাঁচা লঙ্কা ও আদা দিন। এর সাথে সব শুকনো মসলা ও লবণ দিয়ে ভালো করে ভাজুন। মসলা থেকে তেল আলাদা হতে শুরু করলে তাতে এক চিমটে চিনি দিয়ে আরও কিছুক্ষণ রান্না করুন। চিনি গলে যাওয়ার পর এতে কুমড়া দিয়ে সব মসলা দিয়ে মেশান। ঢেকে রান্না করুন সবজি সেদ্ধ না হওয়া পর্যন্ত। লুচির সাথে এই তরকারি উপভোগ করুন। ধনেপাতা কুচি ছড়িয়ে দিতেন পারেন উপর থেকে চাইলে এতে।
৫. মসলাদার ছোলার তরকারিঃ
উপকরণঃ
- কালো ছোলা ২ কাপ
- পেঁয়াজ গ্রেট করা ২ কাপ
- আদা-রসুন বাটা ২ চা চামচ
- গরমমসলা ২ চা চামচ
- তেজপাতা ১টি
- জিরা ১ টেবিল চামচ
- টমেটো ২ কাপ গ্রেট করা
- লবণ স্বাদ অনুযায়ী
- হলুদ ১/২ চা চামচ
- ধনে গুঁড়ো ২ টেবিল চামচ
- লাল লঙ্কার গুঁড়ো ১ চা চামচ
- কাঁচা লঙ্কা ২-৩ টি
- তেল ১/২ কাপ
- ধনেপাতা কুচি ২ টেবিল চামচ (গার্নিশের জন্য)
পদ্ধতিঃ
ছোলা সারারাত ভিজিয়ে রাখুন। তারপর সকালে কুকারে ফুটিয়ে নিন যাতে এগুলো নরম হয়ে যায়। এবার ছোলা থেকে জল আলাদা করে নিন। জল ফেলবেন না। একটি লোহার প্যানে তেল গরম করুন। তেল গরম হয়ে এলে জিরা ও তেজপাতা দিন। জিরা ফুটে উঠলে পেঁয়াজ, আদা ও রসুন দিন। পেঁয়াজ থেকে তেল আলাদা না হওয়া পর্যন্ত ভাজুন। এর পরে, এতে টমেটো যোগ করুন এবং তারপরে তেল আলাদা হওয়ার জন্য অপেক্ষা করুন। এবার এতে লবণ, হলুদ, ধনে ও লঙ্কার গুঁড়ো দিয়ে ভালো করে মেশান। এই সব রান্না হয়ে গেলে, সেদ্ধ ছোলা, কাঁচা লঙ্কা যোগ করুন এবং উচ্চ আঁচে মেশান। তারপর এই সব জিনিস ভালো করে ভাজা হয়ে গেলে ছোলা থেকে তোলা জল যোগ করুন। গ্রেভি ঘন হতে শুরু করলে গরমমসলা ছড়িয়ে গ্যাস বন্ধ করে দিন।