আজকের রেসিপি খুবই স্পেশাল কারণ আমাদের এক পাঠক বন্ধু এই রেসিপি জানতে চেয়েছেন। আপনারা যেহেতু আমাদের কাছে স্পেশাল তাই আপনাদের আবদার রাখার জন্য বানানো এই রেসিপিও স্পেশাল। ঝাল সুজি রেসিপি নিয়ে আজকের লেখা।
সুজির হালুয়া, সুজির পায়েস, সুজি দিয়ে বানানো বেশির ভাগ খাবারই সাধারণত মিষ্টি হয়ে থাকে। তবে আজ সুজির মিষ্টি খাবার নয় বরং ঝাল সুজি বানানোর সহজ রেসিপি শেয়ার করছি। যা বানাতে কোন খরচ নেই বললেই চলে। ঘরে থাকা যেকোনো সবজি দিয়ে এটি বানিয়ে নেওয়া যায়। আমার ফ্রিজে যা যা ছিল তাই দিয়েই আমি ঝাল সুজির এই রেসিপি বানিয়েছি।
উপকরণঃ
- সুজি এক বাটি (১৫০ গ্রাম)
- একটা ছোট ফুলকপি টুকরো করা
- বিন্স ১০ টা টুকরো টুকরো করা
- গাজর একটা ছোট সাইজের টুকরো করা
- আলু মাঝারি সাইজের ছোট টুকরো করা
- পেঁয়াজ মাঝারি সাইজের কুচি করা
- টম্যাটো ছোট সাইজের কুচি করা
- কাঁচা লঙ্কা ছোট সাইজের কুচি করা
- কারিপাতা ১০ থেকে ১৫ পিস
- কালো সরষে ১ চামচ
- গোটা জিরে ১ চামচ
- হলুদ ১/৪ চামচ
- গুঁড়ো লঙ্কা ১/২ চামচ
- সাদা তেল ৪ চা চামচ
- ঘি অথবা মাখন ১ চা চামচ
- নুন স্বাদ অনুযায়ী
ঝাল সুজি বানানোর পদ্ধতিঃ
ঝাল সুজি বানানো খুবই সহজ। দুইরকম ভাবে এটি বানানো যায়। আমি দুটি পদ্ধতি আপনাদের সাথে শেয়ার করছি। তবে প্রথম পদ্ধতিতে আমি সব সময় বানাই। কারণ এভাবে বানালে খেতে বেশি সুস্বাদু হয়। বানাতে সময় লাগে ২০ মিনিট মত। আর দ্বিতীয় পদ্ধতিতে বানালে মাত্র ১০ মিনিটেই এটি রেডি হয়ে যায়।
ঝাল সুজি বানানোর প্রথম পদ্ধতিঃ
প্রথমেই আমি ফুলকপি,বিন্স,গাজর ও আলুর টুকরো ২ মিনিট মত মিডিয়াম আঁচে গরম জলে সেদ্ধ করে নিয়েছি। এটা করে নিলে, রান্নার সময় তেল কম লাগে ও খেতেও বেশি টেস্টি হয়। এগুল সেদ্ধ ৫০% মত করবো। পুরো সেদ্ধ করতে হবে না। সেদ্ধ হয়ে যাওয়ার পর ঝাঁঝরিতে জল ঝরার জন্য এক মিনিট মত রেখে দিতে হবে।
কড়াই ভালো করে গরম হয়ে গেলে তাতে ৪ চা চামচ সাদা তেল দিয়ে দিতে হবে। তেল থেকে ধোঁয়া উঠতে শুরু করলে এক এক করে কালো সরষে ১ চামচ, কারিপাতা ১০ থেকে ১৫ পিস ও ১ চামচ গোটা জিরে দিয়ে দেবো। তারপর পেঁয়াজ কুচি ও লঙ্কা কুচি মিশিয়ে দিয়ে এক মিনিট মত মিডিয়াম আঁচে ভাজতে হবে। এক মিনিট পর সেদ্ধ করে রাখা সবজি মিশিয়ে ২ থেকে ৩ মিনিট মত আবার ভাজবো। ভাজা হয়ে এলে টম্যাটো কুচি মিশিয়ে নিতে হবে।
এরপর এতে হলুদ ১/৪ চামচ, গুঁড়ো লঙ্কা ১/২ চামচ ও নুন মিশিয়ে দিতে হবে। নুনের পরিমান যে যতটা খান ততটা দেবেন। আমার নুনের স্বাদ অনুযায়ী এক চা চামচ মত লেগেছে। যাই হোক, এবার ভালো করে আরও ৩ থেকে ৪ মিনিট মত নাড়াচাড়া করার পর সুজি মিশিয়ে দিতে হবে। সুজি মিশিয়ে ২ মিনিট মত ভালো করে নাড়তে হবে। তারপর সুজির বাটির মাপেই দু বাটি জল এতে মিশিয়ে দিয়ে ৫ মিনিট মত ঢেকে সেদ্ধ করতে হবে। রেডি ঝাল সুজি। নামানোর আগে এক চামচ ঘি বা মাখন মিশিয়ে পরিবেশন করতে পারেন। আমার মাখন দিয়ে খেতে বেশি ভালো লাগে।
ঝাল সুজি বানানোর দ্বিতীয় পদ্ধতিঃ
এই পদ্ধতি খুব যে অন্যরকম কিছু তা একেবারেই নয়। সবজি সেদ্ধ না করে ভাজার সময় শুধু ভেজে নিলেই হবে। এতে তেলের পরিমান একটু বেশি লাগবে। কড়াইয়ে তেল গরম করে কারিপাতা, সরষে ও জিরের ফোঁড়ন দেওয়ার পর পেঁয়াজ, লঙ্কা কুচি মিশিয়ে এক মিনিট ভাজুন। তারপর সব সবজি এতে মিশিয়ে মিডিয়াম আঁচে ৫ মিনিট মত নেড়েচেড়ে ভাজতে হবে। তারপর সুজি মিশিয়ে ২ মিনিট মত ভালো করে নাড়তে হবে। জল তারপর দিয়ে সেদ্ধ হতে সময় দিতে হবে ৫ মিনিট। ব্যাস রেডি আপনার ঝাল সুজি। গরম গরম খাওয়ার আগে ঘি বা মাখন মিশিয়ে নিলেই হবে।
তাহলে আর অপেক্ষা কিসের? একদিন বানিয়ে ফেলুন ঝাল সুজি আর গরম গরম উপভোগ করুন স্বপরিবারে। আর হ্যাঁ! ঝাল সুজি খেয়ে যদি কারোর একটু বেশিই ঝাল লাগে, তাহলে তাকে সুজির কাঁচাগোল্লা বানিয়ে খাইয়ে দিন সঙ্গে সঙ্গে।
বিশেষ কথাঃ
- সুজির এই ঝাল রেসিপি বানাতে সময় ১৫ থেকে ২০ মিনিট মত লাগে। যদি কেউ দ্বিতীয় পদ্ধতি মেনে বানান তাহলে ১০ মিনিটেই গরম গরম ঝাল সুজি তৈরি।
- শীতকালে এটি গরম গরম খেতে বেশি মজাদার লাগে। তাছাড়া শীতের নানা সবজি এতে মিশিয়ে বানানো যায় যা এর স্বাদ দ্বিগুণ করে তোলে।
- অনেক বাচ্চাই আছে যারা একদম সবজি খেতে চায় না তাদের এভাবে বানিয়ে খাওয়ান একবার। বারবার খাওয়ার আবদার করবে এত টেস্টি খেতে হয়।
- ব্রেকফাস্ট বা বিকেলের জল খাবারে খাওয়ার জন্য একদম পারফেক্ট এই রেসিপি।
বিশেষ টিপসঃ
- সুজি যদি একটু পুরনো হয় তাহলে বানানোর আগে চাটুতে হালকা করে গরম করে নেবেন। তাতে বোতল বন্দি সুজির গন্ধ কেটে গিয়ে ফ্রেশ লাগবে খাওয়ার সময়।
- বানানোর সময় যদি বেশি পরিমানে বানিয়ে ফেলেন তাহলে পরে খাওয়ার আগে হালকা গরম জল মিশিয়ে ফুটিয়ে নেবেন খেতে বেশি ভালো লাগবে।
- ঝাল একেবারে না খেলে কাঁচা লঙ্কা ও গুঁড়ো লঙ্কা দেবেন না।