সরস্বতী পুজো মানেই সকাল সকাল অঞ্জলি আর সারাদিন ধরে খাওয়া দাওয়া ও আড্ডা। অঞ্জলির পর বাসন্তী পুজোর ফল প্রসাদ দিয়ে পেট পুজো শুরু ঠিকই। তবে আসল মজা দুপুরে গরম গরম খিচুড়ি, বেগুনী, আলুরদম, চাটনি, পাঁপড় আর মিষ্টির ভুঁড়িভোজে। মা সরস্বতীর পুজোর দিনে রান্না নিয়ে বাঙালীকে আর কি বা বলি! ঘরে ঘরে সাক্ষাৎ অন্নপূর্ণা বাস করেন। তাই আজ স্পেশাল এক মিষ্টির সন্ধান দিতে চলে এলাম। বানানো সহজ আর খেতে চমৎকার। নাম তার আঙ্গুরি রসমালাই। এবছরের খিচুড়ির শেষ পাতে সকলের জন্য বানিয়ে ফেলুন এই মিষ্টি।
আঙ্গুরি রসমালাই বাঙালীর রসগোল্লার রেসিপির মতোই। রসমালাইয়ের রেসিপিটির মূলত দুটি ভাগ, প্রথম ভাগে ছানা দিয়ে ছোট বল তৈরি করে চিনির সিরাপে ভেজানো এবং দ্বিতীয় ভাগে ঘন ক্রিমি দুধে ভিজিয়ে রসমালাই বানানো।
উপকরনঃ
আঙ্গুরি রসমালাই বলের জন্যঃ
- এক লিটার ফুল ফ্যাট দুধ
- তিন টেবিল চামচ লেবুর রস + এক চামচ জল
- এক চা চামচ কর্ন ফ্লাওয়ার
চিনির সিরাপের জন্যঃ
- এক কাপ চিনি
- চার কাপ জল
ঘন মালাই বানানোর জন্যঃ
- এক লিটার ফুল ফ্যাট দুধ
- ১/৪ চা চামচ এলাচ গুঁড়া
- ১/২ কাপ চিনি
- কেশর সামান্য পরিমান
- হলুদ ফুড কালার দুই ড্রপ (অপশানাল, হলুদ রঙের জন্য)
গার্নিশ করার জন্যঃ
- পেস্তা এবং কাজু বাদামের টুকরো
কিভাবে বানাবেনঃ
আঙ্গুরি রসমালাই বল বানানোঃ
- একটি চওড়া প্যানে দুধ ঢালুন এবং মাঝারি-নিম্ন আঁচে ফোটান। দুধ ফুটে উঠলে দুধে ১ টেবিল চামচ জল ও ৩টেবিল চামচ লেবুর রস মিশিয়ে দিন। একটানা নাড়তে থাকুন। ৩-৪ মিনিটের মধ্যে দুধ কেটে ছানা বেরিয়ে আসবে। এবার একটি ছাঁকনিতে মসলিন কাপড় রেখে ছানা ঢেলে দিন। লেবুর গন্ধ দূর করতে জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
- তারপর ছানা থেকে অতিরিক্ত জল সরাতে কাপড় শক্ত ভাবে চেপে নিন। প্রায় ২০ মিনিট মত ঝুলিয়ে রাখুন। জল ঝরে গেলে কাপড় থেকে ছানা তুলে একটি প্লেট রাখুন। হাতের তালু দিয়ে ছানা মেশানো শুরু করুন। ১০ মিনিটের জন্য মাখান। ১০ মিনিট পর দেখবেন ছানায় মসৃণ টেক্সচার চলে এসেছে।
- ছানা থেকে কিছু অংশ নিন এবং হাতের তালুর মধ্যে চেপে চেপে ছোট আকারের বল তৈরি করুন। সবকটা বল বানানো হয়ে গেলে একটি আর্দ্র মসলিন কাপড় দিয়ে সব বল ঢেকে একপাশে রাখুন।
চিনির সিরাপ বানানোঃ
একটি পাত্রে এক কাপ চিনি এবং ৪ কাপ জল নিন। ভালো করে ফোটাতে থাকুন যতক্ষণ না চিনি গলে গিয়ে চিটচিটে সিরাপ তৈরি হচ্ছে। বেশি আঁচে ৫ থেকে ৬ মিনিট ফোটালেই সিরাপ রেডি।
বল চিনির রসে মেশানোঃ
চিনির সিরাপটি উচ্চ আঁচে পুরোপুরি ফুটে গেলে তাতে ছোট ছোট বলগুলো ফেলে দিন। একটি ঢাকনা দিয়ে ঢেকে দিন এবং বলগুলিকে ১০ মিনিট চিনির রসে বা সিরাপে ফোটান। এরপর গ্যাস বন্ধ করে ঠাণ্ডা হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন।
ঘন মালাই বানানোঃ
একটি হাড়িতে এক লিটার দুধ ফুটিয়ে নিন। দুধ ফুটে উঠলে, আঁচ কমিয়ে দিন ও ক্রমাগত নাড়তে থাকুন। কেশর দিন এরমধ্যে। এবার এতে মিশিয়ে দিন হলুদ ফুড কালার। তারপর চিনি ও এলাচ গুঁড়ো দিয়ে ২০ মিনিট রান্না করুন। এরমধ্যেই দুধ ঘন হয়ে যাবে। গ্যাস অফ করে মালাই ঠাণ্ডা করে নিন তাপর তাতে ছানার বলগুলি চিনির রস থেকে তুলে এতে মেশান। ফ্রিজে ১ ঘন্টার জন্য রেখে ঠান্ডা করুন। পরিবেশন করার করার আগে উপর থেকে পেস্তা ও কাজু বাদামের টুকরো ছড়িয়ে দিন। নরম ও রসালো আঙ্গুরি রসমালাই উপভোগ করুন পুজোর ভোগের শেষ পাতে। আর হাতে সময় যদি নেই, তাহলে ২৫ মিনিটে বানিয়ে ফেলুন সুজির কাঁচাগোল্লা। কেউ চাইলে কাল এই দুটি মিষ্টিও বানাতে পারেন।
বিশেষ টিপসঃ
- রেফ্রিজারেটরে ঠাণ্ডা যত বেশি করবেন তত রসমালাইয়ের স্বাদ বেড়ে যাবে।
- কেশর দিলে হলুদ রঙ আসে তবে তা এই ছবির মত হবে না। এর জন্য ফুড কালার ব্যবহার করতে হবে। তবে তার সাথে স্বাদের কোন সম্পর্ক নেই।